জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে আউটসোসিংয়ে প্রায় ৭’শ লোকবল নিয়োগকে ঘিরে ব্যাপক বাণিজ্যের ঘটনা ঘটেছে বলে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। নিয়মের তোয়াক্কা না করে সেচ্ছাচারি মানষিকতা নিয়ে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে লোকবল দেয়ার শর্তে নোয়া প্রদান করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দরপত্রের সব ধরণের শর্ত ও বিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে নেয়া সমন্বিত সম্পাদন ব্যবস্থাপনা (৩য় পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পে এ নিয়ম এখন পুরো অধিদপ্তরজুড়ে ‘টক অব দ্যা কান্ট্রি’। পুরো অনিয়মটি পরস্পর যোগসাজসে করা হয়েছে বলে বঞ্চিতদের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। বড় অঙ্কের আর্থিক লেনদেন করা হয়েছে; যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত অদিপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ও প্রকল্প পরিচালক (পিডি) বলে অধিদপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এ ঘটনায় মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম-সচিবকে আহবায়ক করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির ইতিমধ্যে সভায় আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত অডিও রেকর্ডসহ সংক্ষুদ্ধরা উপস্থাপন করেছেন; যার তথ্য-প্রমাণ এ প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত আছে। শিগগিরই সব পক্ষের সাক্ষ্য নিয়ে তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিবে তদন্ত কমিটি বলেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে। খবর সংশ্লিস্ট সূত্রের। জানতে চাইলে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ডিজি ও সরকারের অতিরিক্ত সচিব মো. আজহারুল ইসলাম খান এবং প্রকল্পের পরিচালক (ডিডি) ড. এস এম আলমগীর কবীর এর সঙ্গে তাদের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে মন্তব্য পেতে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু রিং-টন বাজলেও কলটি রিসিভ না করায় সংবাদে তাদের মন্তব্য সংযোজন করা সম্ভব হয়নি। মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, অনেকটা নিয়ম-বর্হিভূতভাবে উৎকোচের বিনিময়ে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ পেতে সহায়তা করেছে অধিদপ্তরের ডিজি ও পিডি এমন অভিযোগ ঘুরে ফিরেই উঠে এসেছে। টাকার বিনিময়ে আউটসোসিংয়ে লোকবল নিয়োগ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে, – ধলেশ্বরী সিকিউরিটি এন্ড ক্লিনিং সার্ভিস প্রাঃ লিমিটেড, স্টেট সার্ভিস লিমিটেড, একুশে সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড, প্রিমা এসোসিয়েটস লিমিটেড এবং রেডিসন টেকনোলজী লিমিটেড । দরপত্রের সব প্রক্রিয়া অনুসরণ করেও কাজ না পাওয়া বঞ্চিতরা কিভাবে অনিয়মের মাধ্যমে অন্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে, – সে বিষয়ে প্রতিকার চেয়ে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও সচিব, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহপরিচালক (ডিজি) এবং প্রকল্প পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। উদ্ধর্তনদের পক্ষ থেকে সাড়া পেলেও অনিয়মের সঙ্গে জড়িত দু’জনের (ডিজি ও পিডি) কাছ থেকে এ ব্যাপারে মৌখিক কিংবা লিখিত আশ্বাস পাননি যোগ্য দরপত্র দাতারা। এতে সংক্ষুদ্ধ হন বঞ্চিতরা। পরে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে স্মারক নং-৩৪.০০.০০০০.০৯১.১৪.০০১.২১-৪৮০ মূলে গত ৩০ আগষ্ট একজন যুগ্ম সচিবকে আহবায়ক করে দু’সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। এ কমিটি ১ সেপ্টেম্বর অভিযোগকারী প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রাইভেট লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক, মোঃ ইব্রাহিম ও গালফ সিকিউরিটিজ সার্ভিসেস প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অনামিকা সামাদ এর সাক্ষ্য নেন। কিভাবে আউটসোসিংয়ে লোকবল নিয়োগে ওই পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়া হয়েছে তারা মৌখিক ও লিখিতভাবে অডিও ক্লিপসহ অনিয়মের বিস্তারিত তথ্য তদন্ত কমিটিকে অবহিত করেন। এতে নড়েচড়ে বসেছে তদন্ত কমিটি। অনিয়মের ভয়ংকর এই চিত্র পেয়ে রীতিমত বিস্মিত হয়েছেন কমিটি বলে মন্ত্রণালয়ের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। প্রাপ্য তথ্যমতে, অবৈধভাবে কাজ বাগিয়ে নেয়া সিন্ডিকেট চক্রটি লোকবল নিয়োগে এ কাজের দালাল চক্রের সঙ্গে অসম চুক্তি সম্পন্ন করেন। এ চুক্তির আলোকে দরদাতা প্রতিষ্ঠানের (১নং লট এ সৈয়দ আতিকুল ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ধলেশ^রী সিকিউরিটি এ্যান্ড ক্লিনিং সার্ভিসেস (প্রাঃ) লিঃ- নগদ ৩০ লাখ টাকা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, নরসিংদীর উপ-পরিচালক জুয়েলের মাধ্যমে ডিজি রাজধানীর নিজ বাসা বাসাবোতে পৌঁছে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। একই ভাবে ২নং লটে মোঃ দেলোয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মেসার্স পিমা এ্যসোসিয়েট-সিন্ডিকেটের মাধ্যেমে অগ্রীম ১০ লাখ প্রদান করা এবং জনপ্রতি ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার বিনিময়ে চাকরি দেয়ার বিষয়ে চুক্তি করেন বলেও সূত্র জানিয়েছে। আর ৩নং লটে মিজানুর রহমান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, স্টেট সার্ভিসেস লিঃ এবং একুশে সিকিউরিটি সার্ভিসেস লিঃ- ভোলার টিপুর মাধ্যমে লট ০৩ ও ০৫-এর জন্য ২০ লাখ টাকা অগ্রীম প্রদান করেন এবং চাহিদাকৃত জনপ্রতি জনবল বাবদ ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা চুক্তি করে বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ৪নং লট এ মোঃ দেলোয়ার হোসেন ফারুক, রেডিসন ডিজিটাল টেকনোলজি লিঃ-মালিক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আউটসোর্সিং জনবল নিয়োগকে সরকারী নিয়োগ বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে জনপ্রতি আড়াই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ ধরণের গুরুতর অনিয়ম সংঘঠিত হয়েছে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরে আউটসোসিংয়ে লোকবল নিয়োগে। এ সংক্রান্ত পরস্পর যোজসাজসে অর্থ আদান-প্রদান এর যাবতীয় কথাকোপথনের রেকডিংসহ প্রমাণ সংরক্ষিত রয়েছে সংক্ষুদ্ধ দরদাতা প্রতিষ্ঠান ও এ প্রতিবেদকের কাছে।