এফএনএস বিদেশ : ইউক্রেনে হামলার বিষয়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভাদিমির পুতিন চ‚ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এদিকে যুদ্ধের সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করে রাখলেও মস্কো বলছে, ইউক্রেনে হামলার ইচ্ছে তাদের নেই। এদিকে রাশিয়া যদি হামলা করেই বসে তবে সেটা কোন কোন পথে হবে তা নিয়ে এরইমধ্যে হিসাব-নিকাশ সেরে ফেলেছে মার্কিন গবেষণা সংস্থা। বেলারুশ অন্যান্য সকল রুটের চেয়ে বেলারুশ রুটটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করছেন মার্কিন গবেষকরা। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে স্বাধীন হওয়া এই দেশটির সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক খুবই ভাল। ইতোমধ্যে সেখানে নিজেদের ৮০ হাজার সৈন্য নিয়ে বেলারুশ সৈন্যদের সঙ্গে মহড়া দিচ্ছে রাশিয়া। তাদের সঙ্গে আছে স্বল্পপালার ইস্কান্দার ক্ষেপণাস্ত্র ও পর্যাপ্ত রকেট লঞ্চার। আছে এসইউ-২৫ গ্রাউন্ড অ্যাটাক এয়ারক্রাফট ও এসইউ ফাইটার। পুতিন যদি ইউক্রেন সরকারের পতন নিশ্চিত করতে চায়, তবে উত্তরের বেলারুশ ধরে হামলা চালানোর সম্ভাবনাই বেশি। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা সিএনএ’র মুখপাত্র মাইকেল কফম্যান এমনটিই জানিয়েছেন। ক্রিমিয়া : ক্রিমিয়া নামক অঞ্চলটি ২০১৪ সালে অধিগ্রহণ করে নেয় রাশিয়া। ফলে যুদ্ধ যে রুটেই শুরু হোক তার আঁচ সবার ক্রিমিয়াতেই গিয়ে পড়বে। এই রুটে সম্ভাব্য হামলার কথা জানিয়ে ইন্টারন্যাশনার ইন্সটিটিউট ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ-এর বেন বেরি বলেছেন, ক্রিমিয়া ধরে যদি ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের দিকে রুশ সেনারা এগোতে থাকে। তবে ইউক্রেনের বিপুল পরিমাণ সেনা দেশটির নিপার নদীর পুর্বপাশে আটকা পড়বে। সেক্ষেত্রে পশ্চিম, পূর্ব ও উত্তর মিলিয়ে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের ঘিরে ফেলতে পারবে রাশিয়ার সেনারা। এক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরুর পর পশ্চিম থেকে রুশ সেনাদের টার্গেটে থাকবে মূলত খেরসন ও ওদেসা দখল করা। সেই সঙ্গে পূর্বের মেলিতোপোল ও মারিওপোলও থাকবে দখলের তালিকায়। এটা সম্ভব হলে ক্রিমিয়া ও অন্য রুশপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সঙ্গে এক ধরনের যোগাযোগ সেতু তৈরি হয়ে যাবে। ক্রিমিয়ার উপক‚লে এরইমধ্যে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ ঘোরাফেরা শুরু করেছে। আগ্রাসন শুরু হলে ওই জাহাজ থেকে আর্মার্ড ভেহিকেল ও ট্যাংক নামাতে পারবে রাশিয়া। পূর্বের প্রস্তুতি : পূর্বাঞ্চলে সীমান্তজুড়েই হামলার পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে রাশিয়া। ‘সীমান্তের পুরোটাজুড়েই রাশিয়ার সেনা ছড়িয়ে আছে’ বলে জানালেন কফম্যান। তিনি আরও জানান, তবে কিয়েভের দিকে যাওয়ার ক্ষেত্রে চেরনোবিলকে এড়িয়ে যেতে পারে রুশ সেনারা। অন্যদিকে সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর সেথ জোনসের মতে, রাশিয়ার দিক থেকে হামলা চালানো হলে নভে ইউরকোভিচি বা ত্রোয়েবোর্তনো শহর থেকেই সেটা শুরু হবে। পূর্বের দুই শহর : রুশপন্থী বিদ্রোহীরা ২০১৪ সাল থেকেই পুবের লুহানস্ক ও ডোনেস্ক দখল করে আছে। সেখানে রাশিয়ার সেনাদের সঙ্গে যোগ দেবে অন্তত ১৫ হাজার বিদ্রোহী। ইউক্রেন সরকারের মতে সংখ্যাটা আরও বেশি। পূর্বের রোস্তোভ এলাকায় রাশিয়ার অন্তত ১০ হাজার সেনা স্থায়ীভাবে মোতায়েন করা আছে। স¤প্রতি সেখানে আরও সেনার আনাগোনা বেড়েছে বলেও জানা গেছে। পশ্চিমাদের ধারণা, ইউক্রেনের পূর্বের অঞ্চলগুলোতে রুশভাষী জনগণকে ‘রক্ষা করার’ মিশন দিয়েই হামলার সূচনা হতে পারে। বেন বেরি বললেন, যুদ্ধ যত ছোট আকারেই শুরু হোক না কেন, ইউক্রেনের এয়ার ডিফেন্স ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সামরিক কমান্ড অবকাঠামোগুলোও আক্রান্ত হবে। ভৌগলিক সীমার বাইরে সাইবার হামলার কথাও বলছেন বিশ্লেষকরা। সূত্র: বিবিসি