এফএনএস: রংপুর বিভাগের আট জেলায় আবারও হাড় কাঁপানো শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে। হিমেল বাতাস শীতের তীব্রতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। দুদিন ধরে রংপুরে সূর্যের আলো দেখা যায়নি। ঘন কুয়াশা অব্যাহত থাকায় দুপুর পর্যন্ত হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। প্রচণ্ড শীতে জনজীবন জবুথবু হয়ে পড়েছে। শৈত্যপ্রবাহে নিউমোনিয়া, কোল্ড ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, সর্দিজ্বরসহ বিভিন্ন রোগবালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিনে এই হাসপাতালে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে ছয় শিশু চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে। তাদের মধ্যে ৩ জন ৮—১০ দিন বয়সী সদ্যপ্রসূত শিশু। আক্রান্ত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছে দেড় শতাধিক শিশু। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, গতকাল বুধবার সকাল ৯টায় রংপুর বিভাগের পঞ্চগড় জেলায় তেঁতুলিয়া ও ঠাকুরগাঁওয়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রংপুর বিভাগের এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। এদিকে, রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৩ ডিগ্রি, নীলফামারীর সৈয়দপুরে ১২ ডিগ্রি, কুড়িগ্রামের রাজারহাটে ১২ দশমিক ৩ ডিগ্রি, দিনাজপুরে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি, নীলফামারীর ডিমলায় ১২ দশমিক ৬ ডিগ্রি, লালমনিরহাটে ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি এবং গাইবান্ধায় ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সব এলাকায় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল সর্বোচ্চ ১শ শতাংশ, সর্বনিম্ন ৫৯ শতাংশ। রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, সকাল ৬টায় সাধারণত তাপমাত্রা কম থাকে কিন্তু এবার বেলা বাড়ার পরেও তাপমাত্রা কমছে। এটি আস্বাভাবিক ঘটনা। এ ব্যাপারে রংপুর আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মোস্তাফিজার রহমান জানিয়েছেন, মাঘ মাসের শুরুতে শীতের তীব্রতা পঞ্চগড় ও দিনাজপুরে বেশি ছিল। বর্তমানে রংপুর বিভাগে শীতের তীব্রতা কমতে শুরু করেছে। আগামী ৪—৫ দিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। তবে শহরাঞ্চলের চেয়ে শীতের তীব্রতা গ্রামাঞ্চলে আরও অনেক বেশি অনুভূত হয় বলে জানায় আবহাওয়া অফিস। দিগন্তজুড়ে খোলা জায়গা, শস্যক্ষেত আর গাছপালার কারণে সেখানে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। তীব্র শীতে বিপাকে পড়েছেন দরিদ্র মানুষরা। শীতবস্ত্রের অভাবে মানবেতর দিন কাটছে তাদের। অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার—পরিজন নিয়ে অর্থকষ্টে দিন কাটছে। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে শীতবস্ত্র বিতরণের তেমন কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে শীতার্ত মানুষদের অভিযোগ। এদিকে, শীতজনিত নানান রোগবালাই ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শত শত শিশুকে নিয়ে স্বজনরা ভিড় করছেন। অধিকাংশই জ্বর, সর্দি, নিউমোনিয়া আর কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিতে আসছে রংপুর অঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যেহেতু বিভাগে বেড খালি নেই সে কারণে মুমুর্ষূ রোগী ছাড়া ভর্তি নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম জানিয়েছেন, শীতের তীব্রতা বাড়ায় শিশু ও বয়স্কদের ঘরের বাইরে বের না হবার আহবান জানিয়েছেন।