এফএনএস স্বাস্থ্য: বর্তমানে ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাওয়া রোগ গুলোর মধ্যে প্রথম ও প্রধান হল উচ্চ রক্তচাপ যা ভুল লাইফস্টাইল বা অনিন্ত্রিত জীবনধারার কারনে সংঘটিত হচ্ছে। বেশ কয়েকবছর আগেও পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যাক্তি ছাড়া উচ্চ রক্তচাপ প্রায় কল্পনার বাইরে ছিল। এমনকি এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও ছিল কম। তবে বর্তমানে এ চিত্র পুরো বিপরীত । সাম্প্রতিক বিভিন্ন সমীক্ষা বলছে , উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে আরও বাড়ছে। যা বাড়িয়ে দিচ্ছে হৃদরোগ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি । এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে শুধু ঔষধ যথেষ্ট নয়, একই সাথে প্রয়োজন সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন । উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য পরীক্ষিত এবং কার্যকর একটি খাদ্যাভ্যাস হল উঅঝঐ ডায়েট । উঅঝঐ ডায়েট হল উরবঃধৎু অঢ়ঢ়ৎড়ধপযবং ঃড় ঝঃড়ঢ় ঐুঢ়বৎঃবহংরড়হ. অর্থাৎ, ড্যাশ ডায়েট বলতে মূলত বোঝায় এমন একটি খাদ্যাভ্যাস যা উচ্চ রক্তচাপ কে খাবারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করার সকল উপায় কে অন্তর্ভুক্ত করে।এই ডায়েটের মূল বিষয় চারটি—
১. প্রচুর তাজা ফলমূল, শাকসবজি ও কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত খাবার খেতে হবে।
২. সম্পৃক্ত চর্বি, উচ্চ কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার ও ট্রান্সফ্যাট পরিহার করতে হবে।
৩. গোটা শস্যের তৈরি খাবার, বাদাম, মাছ ও মুরগি খাওয়া যাবে।
৪. সোডিয়াম, চিনি, চিনিযুক্ত পানীয় ও রেডমিট গ্রহণ সীমিত রাখতে হবে।
কী খাবেন?
● প্রতিদিন ২৩০০ মিলিগ্রামের কম পরিমান সোডিয়াম গ্রহণ করুন
● দুপুরে ও রাতের খাবারে শাকসবজি অবশ্যই রাখুন
● খাবারের পর অথবা নাস্তায় দেশীয় ফলমূল রাখুন
● কম চর্বিযুক্ত দুধজাতীয় খাবার বা স্কিমড মিল্ক খাবারে রাখুন
● স্ন্যাক্স হিসেবে চিপস, ফাস্ট ফুড বা ডেজার্ট–জাতীয় খাবারের পরিবর্তে বেছে নিন লবণহীন বাদাম, টকদই, কিশমিশ, পপকর্ন , ফ্যাট ফ্রি টকদই ইত্যাদি।
● খাবার কেনার আগে তাতে লবনের পরিমান কতটুকু টা দেখে নিন।
● সালাদ ড্রেসিং, যেমন– মাখন, মার্জারিন জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলাই ভালো।
কী খাবেন না?
● অতিরিক্ত কলেস্টেরল যুক্ত খাবার যেমন- কলিজা, মগজ, হাড়ের মজ্জা।
● রক্তের লিপিড প্রোফাইল বাড়িয়ে দেয় যেসব উপাদান, সেই এলডিএল বা ক্ষতিকর কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের উৎস যেমন- মাছের মাথা বা মাছের ডিম।
● বিভিন্ন ধরনের ফাস্টফুড ও ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার
● উচ্চমাত্রার স্যাচুরেটেড ফ্যাট যেমন – ঘি ,মাখন ইত্যাদি। এর পরিবর্তে অলিভ অয়েল বা সরিষার তেল খাওয়া যেতে পারে।
● যে কোন খাবার ডুবো তেলে ভাজলে তা ট্রান্স ফ্যাট এ পরিনত হয় তাই এসব খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
● রেডমিটে কেবল কোলেস্টেরল বেশি তা নয়, রেডমিট ভেঙে কারনিটাইন নামে একটি যৌগ দেহে তৈরি হয়, যা ট্রিমাথাইলেমাইন এন অক্সাইড নিঃসরণ করে। এটি এথেরোসক্লেরোসিসে ভূমিকা রাখে। তাই উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে রেডমিট গ্রহনের পরিমান সীমিত করতে হবে।
● কেবল লবণ নয় চিনিযুক্ত পানীয়ও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। তাই ক্ষতিকর চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
রমজানে সেহরি ও ইফতার এ কি খাবেন?
ইফতার
● ইফতার এ পর্যাপ্ত সবজি ও সালাদ রাখবেন।
● ইফতারের শুরুতেই অনেকে একবারে বেশি পানি দিয়ে খাবার শুরু করেন যা অনুচিত।সামান্য ফল বা সালাদ দিয়ে ইফতার শুরু করা যেতে পারে।
● তেলেভাজা বিভিন্ন পদ যেমন- বেগুনি,পেয়াজু, চপ, অতিরিক্ত তেল- মশলাযুক্ত ছোলা, চিনিযুক্ত বিভিন্ন পানীয় বা শরবত ইত্যাদি পরিহার করতে হবে।
● অল্প অল্প পানি বা ফ্রেশ ফলের জুস অথবা বিভিন্ন সবজি থেকে তৈরি গ্রীন জুস হতে পারে শরীরের জন্য উপকারি খাবার।
● ইফতারে একবারে বেশি খাবার না খেয়ে একটু ব্রেক নিয়ে বাকি খাবার আবার খাওয়া শরীরের জন্য ভাল। প্রয়োজনে নামাজের পর বা একটু হেটে নেওয়া যেতে পারে।
● টকদই এর সাথে ফল, বাদাম মিশিয়ে খেতে পারেন ।
সেহরি
● সেহরি তে ভাত খেতে চাইলে লাল চালের ভাত এক কাপ পরিমান খেতে পারেন। সাথে পর্যাপ্ত সব্জি,সালাদ,মাছ/ মাংস রাখতে পারেন।
● পর্যাপ্ত পানি অল্প অল্প করে খেতে হবে।
● রান্নায় তেল ও খাবারে ফ্যাট ও লবন যেন খুব বেশি না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সাধারণ এসকল নির্দেশনা সকলের জন্য প্রযোজ্য হলেও ব্যক্তিগত সার্বিক স্বাস্থ্য পরামর্শের জন্য বাংলাদেশে ধানমন্ডিস্থ ‘আমেরিকান ওয়েলনেস সেন্টার’ -এ যোগাযোগ করতে পারেন।