শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন

রমজানে কোনো পণ্যের ঘাতটি হবে না: প্রধানমন্ত্রী

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০২৪

এফএনএস: রমজান মাসে নিত্য প্রয়োজনীয় কোনো পণ্যের ঘাটতি হবে না বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই কথা বলেন। গত ১৬ থেকে ১৮ ফেব্রুয়ারি জার্মানির মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশগ্রহণ নিয়ে এই সংবাদ সম্মেলন করেন সরকারপ্রধান। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রমজানে কোনো জিনিসের অভাব হবে না। ইতোমধ্যে সব ব্যবস্থা করা আছে। এটা নিয়ে অনেকে কথা বলবে। কিন্তু কোনো অসুবিধা হবে না। তিনি বলেন, রমজান তো কৃচ্ছ্রতাসাধনের জন্য। রমজানে মানুষ কম খায়। কিন্তু আমাদের সাইকোলজি হচ্ছে রমজান আসলে যেন খাওয়া-দাওয়ার চাহিদাটা বেড়ে যায়। রমজানে যে জিনিসগুলি বেশি দরকার যেমন ছোলা, খেজুর, চিনি- এগুলি পর্য়াপ্ত পরিমাণেনে আনার ব্যবস্থা আছে। কাজেই এটা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। এ ব্যবস্থা আমি করে রেখেছি অনেক আগে থেকেই। সামনে রোজা আসছে, দুই কোটি মানুষের নগরীতে যানজট একটা বড় সমস্যা। এর প্রধান সমস্যা অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চলাচল। ট্রাফিক আইন মানা হলে তা সম্ভব। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো ব্যবস্থা নেবেন কিনা তা জানতে চান সাংবাদিক। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, মেট্রোরেল ও এক্সপ্রেসওয়ে হওয়াতে যানজট অনেকটা সহনশীল হয়ে গেছে। তবে কিছুকিছু এলাকায় আছে। এক্সপ্রেসওয়েটা এখন মাঝামাঝি জায়গায় ফার্মগেট পর্যন্ত করা হয়েছে। পুরোটা হয়ে গেলে সুযোগটা সবাই পাবে। তাছাড়া আরও পাঁচটা (রুট) মেট্রোরেল সারা ঢাকা জুড়ে হবে। সেইভাবে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তিনি জানান, আমি গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) আইজিপির সঙ্গে কথা বলেছি, আমাদের ট্রাফিক লাইটগুলোকে সচল করে দিয়ে একটা শৃঙ্খলার মধ্যে নিয়ে আসার জন্য। যেহেতু আগেরমতো অতিরিক্ত চাপ নেই। এখন একটা সুবিধা আছে। ট্রাফিক লাইটের পদ্ধতিতে চলে গেলে, খুব বেশি সময় না। সেটা কম করে বারবার যদি চলে, চলমান থাকলে যতক্ষণই লাগুক তখন, বসে আছি এই অনুভূতি হবে না। সেইভাবে তার সঙ্গে কথা হয়েছে। যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলে দিয়েছি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, বুঝে সবাই। বুঝে না তা নয়, বুঝেও না বুঝার ভান করে। কিছু লোকতো আছেই। যুগ যুগ ধরে আছে, যুগ যুগ ধরে থাকবেই। ওগুলো বেশি পাত্তা না দিলেও চলে। আমি পাত্তা দেই না। শেখ হাসিনা বলেন, কিছু কথা বলা আমাদের বাঙালির চরিত্র, কিছু ভালো লাগে না। একটা দলই আছে যাদের কিছু ভালো লাগে না। তারপর যখন হয়, তখন সেটা তারা উপভোগ করে। তিনি বলেন, আমি নিজেই একটি টেলিভিশনের টকশোতে শুনেছি। হঠাৎ মাঝে মাঝে শোনা হয়। আমি জানি না, আমার কী রকম ভাগ্য আছে। মাঝে মাঝে কিছু ক্রিটিকাল জায়গায় হয়তো বসে আছি, (রিমোট কন্ট্রোল) টিপে একটার পর একটা দেখতে থাকি। খেলা যখন দেখি, তখন দেখলাম তুমুল আলোচনা। এই ৩০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে মেট্রোরেল করার কী দরকার ছিল, ৩ হাজার কোটি টাকায় ট্রাফিক জ্যাম বন্ধ করা যেত, এ টাকা বাস কিনে দিলে ট্রাফিক জ্যাম বন্ধ হয়ে যেত, কাজেই ৩০ হাজার কোটি টাকা কেন লাগবে?- এটা নিয়ে তুমুল অবস্থা, অনেক আলোচনা। যারা এ আলোচনাগুলো করেছিল এখন কী ভাবছে? তার মধ্যে একজন ছিল দূষণের ব্যাপারে। মেট্রোরেল তো দূষণ করে না। এটা নিয়ে তার কিছুই বলার ছিল না, বলেনি। একজনকে পেয়েছিলাম, জিজ্ঞেস করলাম কী ব্যাপার? তখন সে বলেছিল আপা আমি কিছু বলি নাই। আগামী ৫ বছরে বাংলাদেশকে কোন জায়গায় নিয়ে যেতে চান- এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখা। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাবো। ইতোমধ্যে আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা, প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ থেকে ২০৪১ ঘোষণা দিয়েছি। সেখানে প্রত্যেকটা মানুষের জীবনমান আরও উন্নত হবে, বাংলাদেশ উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হবে- এটাই আমাদের লক্ষ্য। তিনি বলেন, আজ এটা প্রমাণিত সত্য যে একমাত্র গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা যদি বজায় থাকে একটা দেশ উন্নত হয়। গত ১৫ বছরে আমরা দেশটাকে যে উন্নত করতে পেরেছি, আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে, মানুষের মন-মানোসিকতার পরিবর্তন হয়েছে, শিক্ষা-দীক্ষা, স্বাস্থ্য- সব দিক দিয়ে বাংলাদেশ অনেক ওপরে উঠে আসতে সক্ষম হয়েছে। আমরা স্বল্প উন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। আগামী ৫ বছরে আমাদের কাজ হবে এই উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যেহেতু যাত্রা শুরু ২০২৬ সালে, যে সময়টুকু পাবো উন্নয়নশীল দেশ এটাকে যথাযথভাবে যেন আমরা এগিয়ে যেতে পারি, সেই কাজটা করাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা। সেদিকে আমরা মনোযোগ দিয়েছি। কমিটি করেছি, সবই করছি। আমরা সেভাবে কাজ করে যাচ্ছি। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশে রাজনৈতিক দলের অভাব মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ ১৯৪৯ সালে গঠিত হয়েছিল গণমানুষের কথা বলে। সেই সময় থেকে যত আন্দোলন-সংগ্রাম করেই কিন্তু আওয়ামী লীগ এগিয়ে গেছে। আমি আমার প্রতিপক্ষ কয়েকটি দল দেখি- একটা যুদ্ধাপরাধীর দল জামায়াতে ইসলামি, যাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করে জিয়াউর রহমান তাদের রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিল সংবিধান সংশোধন করে। ভোটের অধিকার, এমনকি পাসপোর্ট নিয়ে পাকিস্তানে গেছে তাদেরও ভোটের অধিকার দিয়েছে এবং দল করার অধিকার দিয়েছে। জাতির পিতার হত্যাকারী তাদেরও পার্লামেন্টে এনে ভোট চুরি করে খালেদা জিয়া বসিয়েছিল। তিনি বলেন, আজ আমি যদি দেখি মিলিটারি ডিকটেটরদের পকেটের দুটি পার্টি একটি বিএনপি, আরেকটি জাতীয় পার্টি। ক্ষমতার উচ্চ আসনে বসে যে দলগুলো তৈরি হয় সে দলগুলোর মাটি-মানুষের সঙ্গে সম্পর্কটা থাকে না। তাদের শেকড়ের সন্ধানটা কোথায়? তাদের চিন্তা-চেতনা এমন একটা পরিবেশ হোক তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। সেটা করতে গিয়ে প্রথম ধরা খেলো ২০০৮ এর নির্বাচনে। প্রচার-প্রচারণা সব দিক থেকে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমান সমান এইরকম একটা ভাব ছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের যে মাটি ও মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক, আস্থা-বিশ্বাস আওয়ামী লীগের ওপর আছে এটা কিন্তু অপপ্রচারের কারণে অনেকটা ঢেকে গিয়েছিল। ওই নির্বাচনে দেখা গেলো, নির্বাচন নিয়ে কেউ কোনো প্রশ্ন করতে পারেনি। নির্বাচনের রেজাল্টটা কী? আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসন পেলো ৩০০ সিটের মধ্যে। বিএনপি ২০ দলীয় ঐক্যজোট নিয়ে পেলো ৩০টা আসন। এরপর থেকে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ধ্বংস করার একটা চেষ্টা। বারবার সেই ষড়যন্ত্র করা হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যেভাবে পারি সেখান থেকে উত্তরণ ঘটিয়ে এই গণতান্ত্রিক ধারাটা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। আমার সামনে এটাই থাকবে এই যে গণতান্ত্রিক ধারাকে যে আমরা স্থায়ী করেছি যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে, তাদের জীবনমান উন্নত হয়েছে। এই ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা এগিযে যাব। তিনি বলেন, আমাদের প্রতিপক্ষের কী দেখি? জ¦ালাও-পোড়াও, মানুষ খুন, রেলে আগুন, বাসে আগুন! এটাই করে যাচ্ছে। এটা তো মানুষকে সেটা দেখতে হবে কারা মানুষের পাশে আছে। রাজনীতি জনগণের কল্যাণে কাজ করে। আর রাজনীতি যদি ক্ষমতা দখল আর ক্ষমতা উপভোগ করা হলে তো মানুষ কিছু পাবে না। টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই সনদ নেওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অলরেডি আমরা আবেদন করেছি। কয়েকদিন আমি সমানতালে টাঙ্গাইলের শাড়ি পড়লাম এইজন্য যে, যাতে দেখাতে পারি এটা আমাদের। কাজেই এটা অন্য কেউ নিতে পারবে না। এ সময় নিজের পরনে থাকা সফিপুরের শাড়ির আঁচল দেখিয়ে এর প্রশংসা করেন তিনি। ‘বিশ্ব মোড়লদের’ বিরুদ্ধে দুমুখো নীতি গ্রহণের অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের বিশ্ব মোড়লরা দুমুখো নীতিতে বিশ্বাস করে। এক জায়গায় ফিলিস্তিনের সমস্ত জমি দখল করে রেখেছে, সেটা ইনভেশন (আগ্রাসন) না। ইউক্রেনেরটা ইনভেশন! এই দুমুখো নীতি কেন হবে, সেটা আমার প্রশ্ন ছিল। অনেকেই সাহস করে বলবে না। আমি বলেছি। সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকেই সাহস করে বলবে না। নানাজনের নানা দুর্বলতা আছে, আমার কোনো দুর্বলতা নেই। আমার কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। আমার কাছে ক্ষমতাটা হলো ‘থাকে লক্ষ্মী যায় বলাই’, একটা কথা আছে না, আমার কাছে সেটাই। থাকলে ভালো! আমি দেশের জন্য কাজ করতে পারবো। না থাকলে আমার কোনো আফসোস নেই। শেখ হাসিনা বলেন, আমি যুদ্ধ চাই না। যুদ্ধকালীন যে কষ্ট আমরা তার ভুক্তভোগী। আমি নিজেই ভুক্তভোগী। আমাদের দেশের মানুষ যে গণহত্যার শিকার হয়েছে সেটা তো আমি জানি। সেজন্য সব সময় বলে আসছি, আমরা যুদ্ধ চাই না। শান্তি চাই। আজ ফিলিস্তিনে যেটি হচ্ছে সেটি তো অমানবিক কাজ। হাসপাতালের ওপর আক্রমণ। হাসপাতালে গিয়ে মানুষ মারা। সব থেকে বেশি, বাচ্চাদের কী দূরবস্থা! এটা মানবতাবিরোধী। তিনি বলেন, আমার লক্ষ্য ছিল ২০২১ পর্যন্ত থাকতে হবে। বাংলাদেশকে একটা ধাপে তুলতে হবে। আমি সেটি করে দিয়েছি। আমি ক্ষমতায় আসবো কি আসবো না, আমি তো পরনির্ভরশীল হয়ে করি নাই। আমার একমাত্র নির্ভরতা হচ্ছে দেশের জনগণ। আমি সব সময় চেয়েছি জনগণের সমর্থন। হ্যাঁ, আন্তর্জাতিক সহযোগিতা ও বন্ধুত্ব প্রয়োজন। দেশের উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন হবে। এখন তো বিশ্বটা গ্লোবাল ভিলেজ, একে অন্যের ওপর নির্ভরশীল। আমাদের অনেক জিনিস কিনতে হচ্ছে, আমরা বাধা পাচ্ছি। সে ক্ষেত্রে আমরা বলেছি যুদ্ধটা যখন শুরু হয়, নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়, সেটি ওই জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে না। সারা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দেশে মুদ্রাস্ফীতি ছড়িয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে সারাবিশ্ব কষ্ট পাচ্ছে। এর ক্ষতিকর প্রভাব শুধু একটা জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকছে না। সারা বিশ্বে প্রভাব পড়ছে। মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। যুদ্ধ বন্ধ করার দাবি করেছি। আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে যুদ্ধ করতে যাইনি, ঝগড়া করতে যাইনি। আমরা ধৈর্য ধরেছি, আলোচনা করেছি। আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করে যাচ্ছি, তারা ফেরত নিক। এখন যে অবস্থা চলছে, আমি সবাইকে বলেছি ধৈর্য ধরতে। আমরা লক্ষ্য রাখবো কোনো কিছুতে আমাদের কোনো রকম উত্তেজিত হলে চলবে না। শান্ত মাথায় পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। সেটা করে আমরা সুফল পাচ্ছি। যদি হিসাব করেন, দক্ষিণ এশিয়া-দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় আমরাই কিন্তু সব থেকে সুস্থ অবস্থায় বিরাজ করছি। অন্য দেশগুলো কষ্ট পাচ্ছে। এক সংবাদিক প্রশ্ন করেন, আমরা চীন, ভারত, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়ার একটা চাপের ভেতরে আছি। এ অবস্থায় বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মিডল পাওয়ার বা ইমার্জিং পাওয়ারের একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরির চিন্তা কি আপনি করছেন? এর জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সাধারণ একজন মানুষ। ছোট একটা ভূখণ্ডে বিশাল জনগোষ্ঠী। আমি সেটি নিয়েই ব্যস্ত। তবে কোথাও কোনো অন্যায় দেখলে আমি আমার কণ্ঠ সোচ্চার করি। প্রতিবাদ করি। যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই- এই কথাটা বলি। কিন্তু কোনো প্ল্যাটফর্ম করবার মতো দক্ষতা আমার নেই। যোগ্যতাও আমার নেই। সেই চিন্তাও আমার নেই। আমি মনে করি অনেক প্ল্যাটফর্ম হয়ে গেছে। কিন্তু আসলে তো কাজের সময় কাজে লাগে না, সেটা হলো বাস্তব। না হলে আজ গাজায় যুদ্ধ বন্ধে নিরাপত্তা কাউন্সিলে প্রস্তাব আসে। সেখানে ভেটো দেওয়া হয়। বাংলাদেশের যুদ্ধ চলার সময়ও এই অবস্থাটা আমরা দেখেছি। আমার যেটুকু ক্ষমতা। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে যথেষ্ট সচেতন। এর থেকে বড় কিছু চিন্তা করার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। সেই দক্ষতাও আমার নেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের কাছে যুদ্ধ কীভাবে বন্ধ হবে সেটা জানতে চেয়েছি। রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বা দেখা হলেও সেটা জানতে চাইবো। আমি চাইবো যুদ্ধ বন্ধ হোক। আমার কথা আমি বলে যাব। যে বোঝার বুঝক, না বুঝলে আমার কিছু আসে যায় না। পরিস্কার কথা। সমবায়ের মাধ্যমে কৃষিযান্ত্রিকীরণ করে চাষাবাদের উন্নয়নের কথা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজের নির্বাচনি এলাকায় মডেল হিসেবে শুরু করার পাশাপাশি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টেদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। সরকারের প্রচেষ্টায় কৃষি উৎপাদন বেড়েছে এবং প্রায় সব শাকসবজিই ১২ মাস পাওয়া যাচ্ছে বলেও এ সময় উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। সরকার হাওর অঞ্চলে কৃষিযান্ত্রিকী করণে ৭০ শতাংশ ও অন্য অঞ্চলে ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নির্দেশ দিয়েছি কো-অপারেটিভ করে মেশিনপত্র যা থাকবে সমবায়ের থাকবে। কৃষক নেবে। তেলপানির খরচ দেবে। তারা ব্যবহার করবে। তাহলে তো ব্যক্তির ওপর কৃষকদের নির্ভরশীল থাকতে হবে না। সেই উদ্যেগটা আমরা নিচ্ছি। আমার ওখানে আমি শুরু করেছি। এই মডেলটা আমি করবো। বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট থেকে একটি হারভেস্টর ও একটি এসকেভেটর ইতোমধ্যে কিনে দিয়েছি। সেটা রাখা আছে। আমি বলেছি এটা কো-অপরাটিভ করে আমার দুই এলাকায় (টু্ঙ্িগপাড়া-কোটালীপাড়া) জমি পরিষ্কার ও চাষ করা। সেই সঙ্গে অন্যান্য ছোট মেশিন। আর ছোট ছোট মেশিন কিন্তু আমাদের এখানেও তৈরি করছি। তিনি বলেন, আমাদের উৎপাদন কিছু বেড়েছে। কোনো জায়গায় উৎপাদন কিন্তু কমেনি। আমরা সেই কৃষি ক্যালেন্ডার পাল্টে দিয়েছি। এখন সবকিছুই ১২ মাস পাওয়া যাচ্ছে। ওই সিম হওয়ার জন্য শীতকালের জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে না। শোল মাছ দিয়ে লাউ এখন আমরা ১২ মাস খেতে পাচ্ছি। সরকার কৃষিতে ৪৫ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে বলেও জানান সরকার প্রধান। ভবিষ্যতে সেচকাজে বিদ্যুতের পরিবর্তে সোলার ব্যবহারের পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি। তিনি বলেন, এটা হলে বিদ্যুতের প্রয়োজন হবে না। আমরা ধীরে ধীরে সেই পথে যাচ্ছি। কারসাজি করে যারা পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে, তাদের বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ‘চক্রান্ত’ ও ‘পরিকল্পনা’ করে জিনিসের দাম বাড়ানো হয় বলে তিনি মন্তব্য করেন। মজুত করে রেখে পচিয়ে যারা বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজ পানিতে ফেলে তাদের ‘গণধোলাই দেওয়া উচিত’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। দ্রব্যমূল্য নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে পাল্টা প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ডিম লুকিয়ে রেখে দাম বাড়ানোর ঘটনায় যারা সরকার উৎখাতের আন্দোলন করে, তাদের কারসাজি আছে- সেটি মনে হয় না? এর আগেও এইরকম ঘটেছে। পেঁয়াজের খুব অভাব। দেখা গেলো, বস্তায় বস্তায় পচা পেঁয়াজ পানিতে ফেলে দিচ্ছে। এই লোকগুলোকে কী করা উচিত? সেটি আপনারাই বলুন। গণধোলাই দেওয়া উচিত। সরকার কিছু করতে গেলে বলবে, সরকার করছে। তার থেকে প্রতিকারে পাবলিক কিছু করলে সব থেকে ভালো। কেউ কিছু বলতে পারবে না। জিনিস লুকিয়ে রেখে পচিয়ে ফেলে দেবে, আর জিনিসের দাম বাড়বে! তিনি বলেন, পেঁয়াজ আমাদের যথেষ্ট উৎপাদন হচ্ছে। সেটি আমরাই শুরু করেছি। পেঁয়াজের বীজ উৎপাদন আমরা শুরু করেছি। কোন কোন এলাকায় পেঁয়াজ হয়, সেগুলো আমরা খুঁজে বের করেছি। কাজ করে যাচ্ছি। আগামীতে বাইরে থেকে আনতে হবে না। তবে আমদানির কথাটা বলতে হয় এই কারণে যে, এত পেঁয়াজ আসছে, নিউজ হলে যারা লুকিয়ে রাখে তারা তারাতাড়ি বের করে। বাজারে তার একটা প্রভাব আছে। সে জন্য দামের সামঞ্জস্য হয়। এটি বাস্তবতা, খুব খোলামেলা কথা বলছি। লুকানোর কিছু নেই। বাংলাদেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির শঙ্কার কথা আগেই জানিয়ে দেশবাসীকে সতর্ক হতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি বছরের মার্চে দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করার শঙ্কা আছে কিনা- এ-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ষড়যন্ত্র তো ছিল, ষড়যন্ত্র তো আছে। চলতি বছরের মার্চে দেশে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ সৃষ্টির শঙ্কার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, আমি আসার পর থেকে আমাকে বারবার বাধা দেওয়া, ক্ষমতায় যেন না যেতে পারি। পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার কথাই ধরুন, শিশু রাসেলকেও তো ছাড়েনি। কেন, যাতে ওই রক্তের কেউ যেন বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসতে না পারে। আমি এবং ছোট বোন বিদেশে থাকায় বেঁচে গেছি। তারপর ফিরে এসে দায়িত্ব নিয়েছি। আমার চেষ্টাই হচ্ছে, স্বপ্ন নিয়ে জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন, সেই স্বপ্ন পূরণ করা। সেক্ষেত্রে ষড়যন্ত্র প্রত্যেকবারই হচ্ছে। বারবার মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করেছি, গণতান্ত্রিক ধারা ফিরিয়ে এনেছি। যার সুফল দেশবাসী পাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন যাতে না হয়, সে জন্য বিরাট চক্রান্ত ছিল- সেটি আপনারা জানেন। ২৮ অক্টোবরের ঘটনাটা একবার চিন্তা করেন। ২০১৩, ১৪, ১৫ সালের সেই অগ্নিসন্ত্রাস। তারপর আবার গত বছরের ২৮ অক্টোবরৃ। এগুলো হঠাৎ করে করা, তা নয়- পরিকল্পিত। যারা এই ধরনের নির্বাচন বানচালের পক্ষে তারা যখন দেখলো, নির্বাচন কিছুতেই আটকাতে পারবে না, কারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ততা আছে, তখন চক্রান্ত হলো যে জিনিসের দাম বাড়বে। তারপর সরকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবে। তখন আন্দোলন করে সরকারকে উৎখাত করবে। এটি তাদের পরিকল্পনার একটা অংশ। কাদের সেটা আপনারা ভালো বোঝেন। আমি আর কারও নাম বলতে চাই না, বলার দরকারও নেই আমার। কিন্তু এই চক্রান্তটা আছে। সরকারপ্রধান বলেন, তবে আমি বলতে পারি। এই যে দেখেন, কালকে বৃষ্টি হলো! কথায়ই তো আছে- ‘যদি বর্ষে মাঘের শেষ, ধন্যি রাজার পুণ্য দেশ’। এই যে মাঘের শেষেও বৃষ্টি হলো, ফাল্গুনের শুরুতেই বৃষ্টি। আমের মুকুল তরতাজা হয়ে উঠছে। ক্ষেতে ধানের চারা রোপণ, সেখানেও সেচের প্রয়োজন হবে না। ভালো বৃষ্টি হলে ফসল ভালো হবে। খাদ্যপণ্য উৎপাদনে কোনো অসুবিধা হবে না। করোনাকাল, বিশ্বব্যাপী স্যাংশন, পণ্য পরিবহনে বাধাগ্রস্ত হওয়ার সময় থেকেই নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদনের তাগিদ দেওয়ার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, তখন থেকেই নিজেদের খাদ্য নিজেদের উৎপাদন করতে হবে বলে যাচ্ছি। এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে। সেটি বলা না, কার্যকরও করেছি। আমাদের পরিবারের যত জমি ছিল সেগুলোর সঙ্গে আশপাশের সমস্ত জমি পরিষ্কার করা এবং সেগুলোতে চাষ করা আমরা শুরু করে দিয়েছি। নিচু জমিতে মাছ আর উঁচু জমিতে ধান চাষ করতে বলেছি। যার যত জমি আছে, সে হিসেবে ভাগ পাবে। ফলে এবার কম করে হলেও ১০-১৫ হাজার টাকা করে একেকজন পেলো।’ একসময় অভাব বলতে পেটে ভাত নেই শোনা যেত- মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন কী সেই কথাটা বলে? বলে না। কী বলে? ডিমের দাম, পেঁয়াজের দাম, গরুর মাংসের দাম অথবা পাঙাস মাছের পেটি খেতে পারছে না- এই তো! এটা কি একটা পরিবর্তন না? ১৫ বছরে এই পরিবর্তনটা তো এসেছে, সেটা তো স্বীকার করবেন। ১৫ বছর আগে কী ছিল? ভাতের জন্য হাহাকার ছিল। একটু নুন ভাত। ভাতের ফেন চেতো। এখন তো তা চায় না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের যে খাদ্যগ্রহণ বেড়েছে, ক্রয় ক্ষমতা বেড়েছে এটা স্বীকার করলে সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু সেটা করবে না। যেখানে প্রতিবছর দুর্ভিক্ষ লেগে থাকতো। আমি ১৯৮১ সালে দেশে আসার পরে লঙ্গরখানা খুলেছি। কিন্তু এখন তো সেই অবস্থা নেই। এখন মানুষের পেটে মোটা ভাত, মোটা কাপড়ের ব্যবস্থা আছে। আগে মানুষের পায়ে রাবারের স্যান্ডেলও ছিল না। এখন তো সেই অবস্থা নেই। এগুলো এমনি হয়নি পরিকল্পনা করে কাজ করেছি বলেই উন্নতি হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com