ফতোয়া : সালাতে অধিক নড়াচড়া করা প্রসঙ্গ— মূলত প্রয়োজন ছাড়া সালাতে নড়াচড়া করা মাকরূহ। তবে সালাতের মধ্যে নড়াচড়া করা পাঁচটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন : (১) ওয়াজিব নড়াচড়া (২) হারাম নড়াচড়া (৩) মাকরূহ নড়াচড়া (৪) মুস্তাহাব নড়াচড়া (৫) মুবাহ বা জায়েয নড়াচড়া। ওয়াজিব বলতে বুঝায় এমন নড়াচড়া যার উপর সালাত শুদ্ধ হওয়া নির্ভর করে। যেমন সালাত অবস্থায় কারো পাগড়িতে নাপাক বস্তু দেখা গেল। তখন ওয়াজিব হবে নড়াচড়া করে নাপাক বস্তুটি ফেলে দিয়ে পাগড়িকে না পাকী থেকে হেফাজত করা। যেমন হাদীসে এসেছে যে একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে ইমামতি করছিলেন, এমতাবস্থা জিবরীল (আঃ) এসে বললেন যে, আপনার জুতায় না পাকী আছে। তখন তিনি সালাতের মধ্যে জুতা খুলে ফেললেন ও সালাতে নিমগ্ন থাকলেন। এমন আরেকটি দৃষ্টান্ত হল কিবলা পরিবর্তনের মাছআলা। সকলে সালাতে মগ্ন ছিলেন। একজন এসে খবর দিলেন কিবলা পরিবর্তন হয়েছে। সাথে সাথে সকলে সালাতের মধ্যেই ঘুরে গেলেন। আর হারাম নড়াচড়া বলতে বুঝায় কোন ধরনের প্রয়োজন ছাড়া অনর্থক অধিক নড়াচড়া করা। এতে সালাত বাতিল হয়ে যায়। যা সালাত বাতিল করে তা সালাতের মধ্যে করা হারাম বলেই গণ্য এবং আল্লাহর হুকুমের সাথে বিদ্রƒপ করার শামিল। আর মুস্তাহাব নড়াচড়া হল সালাতের মধ্যে কোন মুস্তাহাব আমল সম্পাদন করার জন্য যে সকল নড়াচড়া করার দরকার হয়। যেমন কেহ কাতার সোজা করার জন্য অথবা সামনের কাতারে স্থান পূরণ করার জন্য সামনে চলে গেল অথবা কাতারের খালি জায়গা পূরণ করার জন্য সরে দাঁড়াল। এ ধরনের কাজের জন্য নড়াচড়া করলে অসুবিধা নেই, কারণ ইহা সালাতের পূর্ণতার জন্য করা হয়। তাই তো হাদীসে এসেছে সাহাবী ইবনে আব্বাস (রা:) সালাত আদায়ের জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাম পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি তাকে ধরে পিছন দিক থেকে ডান পাশে এনে দাঁড় করিয়ে দিলেন। আর মুবাহ নড়াচড়া হল প্রয়োজনে নড়াচড়া করা। কম হোক বা বেশি। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাত আদায়রত অবস্থায় তার নাতনী উমামাহ বিনতে জয়নবকে কোলে তুলে নিতেন, যখন তিনি সেজদায় যেতেন তখন তাকে রেখে দিতেন। এ হল প্রয়োজনে অল্প নড়াচড়া করার দৃষ্টান্ত। প্রয়োজনে অধিক নড়াচড়া করার দৃষ্টান্ত ও রয়েছে। যেমন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন : “তোমরা সালাতের প্রতি যত্নবান হবে। বিশেষত মধ্যবর্তী সালাতের এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে তোমরা বিনীত ভাবে দাঁড়াবে। যদি তোমরা শক্রের আশঙ্কা কর তবে পদচারী অথবা আরোহী অবস্থায় সালাত আদায়ে যত্নবান হবে, যখন তোমরা নিরাপদ বোধ কর তখন আল্লাহকে স্মরণ করবে যেভাবে তিনি তোমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা জানতে না। সূরা বাকারা :২৩৮—৯ পথচলা অবস্থায় সালাত আদায় করলে অধিক নড়াচড়া করতে হয়। কিন্তু ইহা প্রয়োজনে, তাই তা সালাত ভঙ্গ করবে না। আর উপরে উল্লেখিত নড়াচড়া ব্যতীত যতপ্রকার নড়াচড়া আছে সবগুলো মাকরূহ নড়াচড়া বলে গণ্য। এর উপর ভিত্তি করে আমি ঐ ভাইকে বলব যাকে প্রশ্নকারী নড়াচড়া করতে দেখেছেন, আপনি যে নড়াচড়া করেছেন তা নিশ্চয়ই মাকরূহ। এতে সওয়াব কমে যায়। আর এক পা কে অপর পায়ের চেয়ে আগে বাড়ানো উচিত নয়। বরং সুন্নত হল আপনার দু পা সামন্ত রাল থাকবে। শুধু আপনার নয় সকল মুসল্লিদের পা সামন্ত—রাল থাকবে। কেননা কাতার সোজা করা ওয়াজিব। যদি তা ত্যাগ করা হয় তবে আল্লাহর রাসূলের অবাধ্যতা হবে। আর রাসূলুল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবীদের পিঠে ও কাঁধে হাত দিয়ে কাতার সোজা করে দিতেন আর বলতেন“তোমরা আলাদা হয়োনা যদি হও তাহলে আল্লাহ তোমাদের অন্তর আলাদা করে দিবেন।’ তিনি একদিন কাতার সোজা করার হুকুম জারি করার পর এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে সে তার বুক সামনে নিয়ে গেছে তখন বললেন : “হে আল্লাহর বান্দাগন! তোমরা অবশ্যই কাতার সোজা রাখবে অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মধ্যে মতানৈক্য সৃষ্টি করে দিবেন।” আসল কথা হল কাতার সোজা করা ওয়াজিব। এ টা ইমাম ও মুক্তাদীর উভয়ের দায়িত্ব। আল্লাহ তাআলাই সর্বাধিক জ্ঞাত।