এফএনএস এক্সক্লুসিভ: রাজধানীর বেদখল হয়ে যাওয়া খালগুলো উদ্ধারের উদ্যোগ নিয়েছে বর্তমান অন্তর্বতীর্কালীন সরকার। চলতি বছরই ১৯টি খালের ১২৫ কিলোমিটার নেটওয়ার্ক সচল করা হবে। ওই লক্ষ্যে অতিসম্প্রতি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ৬টি খাল সংস্কার কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়েছে। এর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) চারটি ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) দুটি খাল সংস্কার করা হবে। যদিও এর আগের সরকারগুলোও রাজধানীর খাল উদ্ধারের নামে বারবার উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটি খালও পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার করা যায়নি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের চার মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত উদ্যোগে ঢাকার পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে চলতি বছর রাজধানীর ১৯টি খাল পুনরুদ্ধার করা হবে। প্রাথমিকভাবে বাছাই করা খালগুলোর মধ্যে ডিএনসিসির বেগুনবাড়ি খাল, কড়াইল লেক, বাউনিয়া খাল, রূপনগর খাল এবং ডিএসসিসির মান্ডা ও কালুনগর খাল রয়েছে। খাল সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে সীমানা নির্ধারণ, খাল পরিষ্কার, পাড় সংরক্ষণসহ ব্লু নেটওয়ার্ক নির্মাণ করা হবে। সেজন্য ১৯টি খাল বাছাই করা হয়েছে। অন্য খালগুলো হলো বোয়ালিয়া খাল, ডুমনি খাল, কসাইবাড়ি খাল, শাহজাদপুর খাল, সুতিভোলা খাল, নরাই খাল, দ্বিগুণ খাল, সেনতি খাল, ভারাইল পোড়াখালি খাল, সাঁতারকুল খাল ও শ্যামপুর খাল। এর মধ্যে শ্যামপুর খাল ডিএসসিসির অন্তভুর্ক্ত, আর বাকিগুলো ডিএনসিসির আওতাধীন। সূত্র জানায়, বেদখলের কারণে বর্তমান ঢাকার খালগুলোর অসিত্ত্ব খুঁজে পাওয়াই এখন দুষ্কর। তারপরও মিরপুরের রূপনগর খাল সংস্কারের মাধ্যমে সরকারের খাল উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। কিন্তু ওই খালের ওপর রয়েছে সরকারি—বেসরকারি একাধিক অবকাঠামো। রয়েছে হাউজিং প্রকল্পও। একসময় রূপনগর খাল আয়তন ও দৈর্ঘে্য বেশ বড় থাকলেও ময়লা—আবর্জনায় পূর্ণ খালটি এখন কোনোমতে নালার আকার নিয়ে টিকে আছে। খালের জায়গা দখল করে নতুন সড়ক নির্মাণ করেছে খোদ তত্ত্বাবধানকারী সংস্থা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। এর আগে ২০১৯ সালে ডিএনসিসির বিরুদ্ধে মিরপুর—১ নম্বরের রূপনগর খাল দখল করে রাস্তা নির্মাণের অভিযোগ তোলে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। তা নিয়ে একটি মামলাও হয়েছে। মামলার নথিপত্রের তথ্যানুযায়ী, খালটি এখন দেখাশোনা করছে ডিএনসিসি। এর আগে এটি দেখভালের দায়িত্বে ছিল ঢাকা ওয়াসা। তবে খালটির প্রকৃত মালিক জাতীয় গৃহায়ন কতৃর্পক্ষ। সূত্র আরো জানায়, জলাবদ্ধতা নিরসনের অংশ হিসেবে এর আগে ঢাকা ওয়াসা ২৬টি খাল (প্রায় ৮০ কিলোমিটার) ও প্রায় ৩৮৫ কিলোমিটার বড় আকারের নালা ও চারটি পাম্প স্টেশন পরিচালনা করতো। দুই সিটি করপোরেশন দেখভাল করে প্রায় ২ হাজার ২১১ কিলোমিটার নালা। ২০২০ সালে ওয়াসার অধীনে থাকা সব নালা ও খাল দুই সিটি করপোরেশনের হাতে যায়। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার মন্ত্রীর উপস্থিতিতে ওয়াসার ২৬ খাল ডিএসসিসি ও ডিএনসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়। আর দায়িত্ব পেয়ে সিটি জরিপ অনুসারে দ্রুত খালের সীমানা চিহ্নিত করার ঘোষণা দেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র। তাছাড়া তখন খালের দুই পাড়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ, পুনঃখনন করে পানি ধারণের ক্ষমতা বৃদ্ধি, পাড় বাঁধাই করে সবুজায়ন, ওয়াকওয়ে (হাঁটার পথ) ও সাইকেল লেন তৈরি করার কথাও বলা হয়। কিন্তু গত চার বছরে দুই সিটি করপোরেশন ঢাকার খালে সময়ে সময়ে বর্জ্য পরিষ্কার ছাড়া বড় কোনো কাজই করেনি। এদিকে এ বিষয়ে নগরবিদরা বলছেণ, ঢাকার খাল পুনরুদ্ধারের জন্য সবার আগে পয়োনিষ্কাশন লাইন ঠিক করা প্রয়োজন। কিন্তু ঢাকা ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন নেটওয়ার্ক নেই। ফলে খাল পরিষ্কার করলেও পয়োনিষ্কাশন বর্জ্য দিয়ে আবার খাল ভরে যাবে। সরকারের উচিত ডিটেইল মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে খাল পুনরুদ্ধার করা। আর তা করা না গেলে অবস্থা আগের মতোই হবে। অন্যদিকে খাল সংস্কার প্রকল্প সম্পর্কে ডিএসসিসির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সফিউল্লাহ সিদ্দিক ভূঁইয়া জানান, ইতিমধ্যে খালের সীমানা পিলার স্থাপন করা হয়েছে। যেসব অবকাঠামো খালের সীমানায় পড়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করে খালের প্রবাহ ফিরিয়ে আনা হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীও সহযোগিতা করছে। সিটি কর্পোরেশন খালের পাড় সংরক্ষণ করবে। খালের দুই পাড়ে হাঁটার রাস্তা করা হবে। পুরো ঢাকার খাল নেটওয়ার্ক পুনরুদ্ধারেই কাজ করা হচ্ছে।