শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৮:৪৭ অপরাহ্ন

রাতেই কেন্দ্রে ব্যালট পাঠাতে আবারও আর্জি পুলিশের ইসির না

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৩

## বৈধ অস্ত্র জমা নয়, প্রদর্শনে কড়াকড়ি আরোপ
## কেন্দ্রে অস্ত্রধারী পুলিশের সংখ্যা বাড়বে
জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে যেকোন নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেক বেশি দক্ষ (ট্রেন্ড)। বিগত ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের উদ্দেশ্যে যে নৈরাজ্য ও তান্ডব চালানো হয়েছিল এবার ওই ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হলে তা কঠোরভাবে দমন করতে সক্ষম পুুলিশ। কারণ ২০১৪ সাল আর ২০২৪ সাল এক নয় বলেও নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আশস্ত করা হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত সভায় কমিশনকে আশস্ত করে ওই মন্তব্য করেছে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। সভায় ভোট কেন্দ্রে রাতেরই ব্যালট পাঠানোর বিষয়ে আবারও পুলিশের পক্ষ থেকে আর্জি জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্নে ও নিরবচ্ছিন্নভাবে শেষ করতে কেন্দ্রওয়ারী অস্ত্রধারী পুলিশের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, বিজিবির প্লাটুন বাড়ানো, ব্যক্তির নিরাপত্তার স্বার্থে এবার বৈধ অস্ত্র জমা না রাখা, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে দেশজুড়ে সাঁড়াশি অভিযান চালানো, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো; নাশকতামূলক কোন ঝুঁকি (এলারমিং) নেই, – এমন অভিমত ব্যক্ত করা হয়। শনিবার (২৮ অক্টোবর) বিএনপির সমাবেশ ঘিরে একজন পুলিশ সদস্য, একজন রাজনৈতিক কর্মী ও একজন সাংবাদিক নিহত হওয়ার ঘটনা পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি এই সভা আহবান করা হয়। মূলত এ ধরণের সভা তফসিল ঘোষণার পর অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে তফসিল ঘোষণার পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি অস্থিতিশীল না হতে পারে তা অবহিত হওয়ার জন্য কমিশন এ সভাটিতে মিলিত হয় বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কমিশনকে আশস্ত করে বলা হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিসহ সমমনা দলগুলোর সমাবেশ পন্ড পরবর্তী হরতাল এবং আগামীকাল মঙ্গলবার (আজ ৩১ অক্টোবর থেকে ১ ও ২ নভেম্বর) পর্যন্ত দেশজুড়ে স্থল, নৌ ও রেল পথ অবরোথের ঘোষণা দিলেও দেশে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি তৈরি বলেও আরেকটি গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ইসিকে আশস্ত করা হয়েছে। একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান পুলিশ বা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা বুঝাতে গিয়ে তার বক্তব্যে বলেছেন, ২০১৪ সাল এবং ২০২৪ সাল দুটি সময়ের মধ্যে ব্যবধান রয়েছে। পুলিশ বাহিনী এখন অনেক বেশি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ। শুধু সংখ্যা বৃদ্ধি নয়, টেকনোলজির দিক থেকে অনেক বেশি ট্রেন্ডআপ। যেকোন নাশকতামূলক পরিস্থিতি মোকাবেলায় সক্ষম। কারণ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সক্ষমতা অনেক বেড়েছে। তফসিল ঘোষনায় কোন সমস্যা নেই পরিস্থিতি ভালো আছে। এদিকে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাতেই ব্যালট কেটে বাক্স ভর্তি করা হয়েছিল বলে দেশে এক ধরণের আলোচনা রয়েছে। এ নিয়ে বিগত কমিশনকে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। তাই কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধিন কমিশন আগের কমিশনের বদনাম গায়ে না মাখতে সকালে কেন্দ্রে কেন্দ্রে ব্যালট পাঠানোর বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়। কমিশনের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে প্রথমে আপত্তি তোলে ইসির সঙ্গে পুলিশ সুপারদের সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সংক্রান্ত প্রশিক্ষণে। তবে কমিশন তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন। পুলিশের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল, তিনশ সংসদীয় আসনে ভোট করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অপ্রতুলতা রয়েছে। অনেক কেন্দ্র দুর্গম সেখানে সকালে ব্যালট কেন্দ্রে পৌঁছানো কঠিন ও জটিল পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হবে এবং সময় লাগতে পারে। তাই পুলিশ চেয়েছিল কমিশন যেনো তাদের সিদ্ধান্ত পুর্নবিবেচনা করেন। সোমবার (৩০ অক্টোবর) আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানদের সঙ্গে অনুষ্ঠেয় সভায় একটি বাহিনীর প্রধানের পক্ষ থেকে ফের সকালে ব্যালট নয় রাতেই কেন্দ্রে ব্যালট নেয়ার বিষয়ে আর্জি জানানো হয়। তবে কমিশন থেকে তাদেরকে বলা হয়েছে, এখনিই এই বিষয়ে সিদ্ধান্তের সময় আসেনি। তফসিল ঘোষণার পর যখন যে প্রয়োজন হবে তার আলোকে পরিপত্র জারি করে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানানো হবে। এদিকে, অতীতে সংসদ নির্বাচনগুলোতে কেন্দ্র পাহারায় একজন অস্ত্রধারী পুলিশের নেতৃত্বে কয়েকজন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করলেও এবার কেন্দ্রপাহারায় দু’জন অস্ত্রধারী সাব-ইন্সপেক্টর এর নেতৃত্বে কেন্দ্র পাহারার ব্যবস্থা রাখা হচ্ছে, যা সভায় ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি আনসার সদস্যর সংখ্যক বাড়তে পারে। তবে, আধা-সামরিক বাহিনী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর পক্ষ থেকে কমিশনকে জানানো হয়েছে, তাদের প্রধান কাজ সীমান্ত সুরক্ষিত রেখে বাকি কাজে মনোযোগ দেয়া। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে তারা দায়িত্ব পালন করলেও সব বিজিবিকে নির্বাচনে কাজে লাগানো সম্ভব নয়। তবে বিগত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে ৯০০ প্লাটুন বিজিবি দায়িত্ব পালন করেছিল এবার সংখ্যা বাড়িয়ে তা সর্বোচ্চ ১১০০-১২০০ প্লাটুন দিতে পারবে। আর সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কমিশন চাইলে তারা নির্বাচনের কাজে সহায়তা করতে প্রস্তুত আছেন। কমিশন যেভাবে চাইবেন ভিজিবলিই তারা দায়িত্ব পালন করতে প্রস্তুত আছেন। সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক বলে কমিশনকে জানানো হয়। তবে বিএনপির ডাকা অবরোধ ঘিরে কি ধরণের পরিস্থিতি তৈরি হয় গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে ইসিকে অবহিত করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেন। তবে কমিশন থেকে জানানো হয়, নির্বাচনে কে এলো আর কে এলো না তা নিয়ে চিন্তিত নয়। সংবিধানের বাধ্যবাধকতার মধ্যে তফসিল ঘোষণা করার বিষয়ে কমিশনের পক্ষ থেকে পুনব্যক্ত করা হয়।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com