এফএনএস: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এক বহিরাগত শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের পাশে এই ঘটনা ঘটে। নিহত শিমুল (২১) নগরের মতিহার থানাধীন মধ্য মেহেরচণ্ডী বুধপাড়া এলাকার জামাল মিয়ার ছেলে। তিনি রাজশাহী কলেজে পড়াশোনা করতেন। শিমুলের মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধেঁায়াশা। একাধিক সূত্রে এখন পর্যন্ত তিন ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে। ডাক্তার বলছেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে তিনি মারা গেছেন। তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন বা রক্তের দাগ পাওয়া যায়নি। তবে তার পরিবারের দাবি, তাকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এদিকে প্রক্টর বলছেন, বাইক নিয়ে পালানোর সময় দুর্ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের ভেতরে বান্ধবীকে নিয়ে বেড়াতে যান শিমুল। পরে ক্যাম্পাসের ভেতরে কয়েকজন ছেলে তাদের ধাওয়া করে। এতে শিমুল মোটরসাইকেলে নিয়ে দ্রুতগতিতে পালিয়ে আসার চেষ্টা করেন। এ সময় ব্যাডমিন্টন খেলছিলেন এমন কয়েকজন তার পথরোধ করে এলোপাতাড়ি মারধর করে গুরুতর আহত করে। পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। জানতে চাইলে নিহত শিক্ষার্থীর বাবা জামাল মিয়া বলেন, আমার ছেলে তার বান্ধবীকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে যায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির গাড়ি দেখে তারা সেখান থেকে দ্রুত মোটরসাইকেলে করে চলে যায়। সামনে একদল শিক্ষার্থী তাদের পথরোধ করে এবং আমার ছেলেকে সন্দেহজনক মনে করে ব্যাট দিয়ে আঘাত করে। গুরুতর আহত হয় সে। পরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আমি মতিহার থানায় আসছি মামলা করার জন্য। এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ঘটনার সময় তিনি রাস্তার পাশে ছিলেন যেখানে অনেকে ব্যাডমিন্টন খেলছিল। হঠাৎ একটি বাইক রাস্তায় দ্রুতগতিতে আসে, যা দেখে খেলা ছেড়ে অনেকে ধাওয়া করে। তিনি ভাবেন, এটি ছিনতাই হতে পারে। বাইকটি উল্টে যায়, সঙ্গে থাকা এক মেয়েও মাটিতে পড়ে যায়। ছেলেটি বেশ আহত হয়ে অজ্ঞান হয়। লোকজন তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়। তিনি নিশ্চিত নন আসল ঘটনা কী, তবে তখন কেউ তাকে মারেনি। এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে আমাদের সহকারী প্রক্টররা টহল দিচ্ছিলেন। তখন এক ছেলে ও মেয়ে তৃতীয় বিজ্ঞান ভবনের পেছনে ছিল। প্রক্টরের গাড়ি দেখে তারা মোটরসাইকেলে করে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করে। সেই রাস্তা নির্মাণের কাজ হচ্ছে। সেখানেই দুর্ঘটনাটি ঘটে। পরে আমাদের লোকজন তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যালে পাঠায়। সেখান থেকে তাকে রামেকে নেওয়া হয়। ছেলেটির বাইক প্রক্টর দফতরে আছে। রামেকে পাঠানোর কিছুক্ষণ পর জানতে পারি ছেলেটি মারা গেছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে জরুরি বিভাগের এক চিকিৎসক বলেন, রাবি থেকে রাত ১১টার দিকে একজনকে নিয়ে আসা হয়। তবে তখন সে মৃত অবস্থায় ছিল। তার শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। শরীরের বাইরের কোনও অংশে কোনও দাগ পাওয়া যায়নি। তার মরদেহ মর্গে পাঠানো হয়েছে। মতিহার থানার ওসি আব্দুল মালেক বলেন, আমরা বিষয়টির খেঁাজখবর রাখছি। তবে সঠিক ঘটনাটি এখনও আমরা জানতে পারিনি। আমরা সবার সঙ্গে কথা বলে ঘটনাটি জানার চেষ্টা করছি। এ ঘটনায় এখনও কোনও মামলা হয়নি তবে হতে পারে।