এফএনএস আন্তজার্তিক ডেস্ক: রাশিয়াকে উপহার হিসেবে ছয়টি হাতির বাচ্চা পাঠিয়েছে মিয়ানমার। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৭৫তম বার্ষিকী উদযাপনে মস্কো স্টেট সার্কাস নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে এই উপহার দেয়া হয়েছে। রুশ সংবাদ সংস্থা তাস ও মিয়ানমারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ইরাবতী এ খবর জানিয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রাশিয়ার সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করেছে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় এবার দেখা গেল ‘হাতি কূটনীতি’। সংবাদ সংস্থা তাস জানায়, গত শুক্রবার একটি বিশেষ বিমানে করে তিনজন প্রশিক্ষক এবং একজন পশুচিকিৎসকসহ হাতির বাচ্চাগুলোকে মিয়ানমার থেকে রাশিয়ার মস্কোতে নেয়া হয়। গন্তব্যে পৌঁছাতে বিমানটির পুরো একদিন সময় লাগে এবং পথে অন্তত দুইবার জ্বালানি ভরার জন্য থামতে হয়। বাচ্চা হাতি হওয়ার এগুলোর পরিবহন একটা বড় চ্যালেঞ্জের ব্যাপার ছিল। গ্রেট মস্কো স্টেট সার্কাসের মহাপরিচালক এডগার্ড জাপাশনি বলেন, ‘আমরা পুরো যাত্রাপথে হাতিদের সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দিয়েছি। সময় ও অঞ্চলের ভিন্নতা সত্ত্বেও তারা পরিস্থিতির সাথে দ্রুত মানিয়ে নিয়েছিল।’
এর আগে ২০১৮ সালেও একইভাবে রাশিয়াকে কয়েকটি হাতি উপহার দিয়েছিল মিয়ানমার। প্রায় ছয় বছর পর আবারও হাতি উপহার দেয়া হল। এ ব্যাপারে রাশিয়ায় নিযুক্ত মিয়ানমারের রাষ্ট্রদূত উ থিত লিন ওন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মিন অং হ্লাইং নিজে থেকে হাতিগুলো বাছাই করে দিয়েছেন।’ রুশ সংবাদমাধ্যমের খবরে আরও বলা হয়েছে, মিয়ানমার থেকে হাতিগুলো মস্কো সার্কাসে নিয়ে আসার পুরো তত্ত্বাবধানে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ। হাতিগুলো মস্কোয় পৌঁছার পর পুরো প্রক্রিয়ার বিশদ বিবরণ তুলে ধরেন রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা। জাখারোভা মস্কো সার্কাসে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিয়ানমার থেকে হাতির বাচ্চাগুলো মস্কোয় আনার সমস্ত আনুষ্ঠানিকতার জন্য প্রায় দুই বছর সময় লেগেছে। কারণ আমাদের প্রচুর সংখ্যক নথিপত্রের কাজ সম্পন্ন করতে হয়েছে। হাতিগুলো উপহার দেয়ায় মিয়ানমারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র। এরপর সার্কাসের কর্মকর্তাদের সাথে নিয়ে হাতিগুলোকে নিজ হাতে খাইয়ে দেন এবং তাদের সাথে ছবিও তোলেন। জান্তা সরকার প্রধান মিন অং হ্লাইং ২০২১ ও ২০২২ সালে পরপর দুইবার রাশিয়া সফর করেন। দেখা করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভস্নাদিমির পুতিনের সাথে। মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধে জান্তা সরকারকে সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থন দিচ্ছে মস্কো। বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে মারাত্মক বিমান হামলার জন্য সম্প্রতি মিন অং হ্লাইং সরকারকে ছয়টি এসইউ—৩০ যুদ্ধবিমান সরবরাহ দিয়েছে পুতিন প্রশাসন। মিয়ানমারে হাতিকে শক্তি ও সৌভাগ্যের প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। মিয়ানমার জাতির সংস্কৃতিতে এটি একটা বিশেষ স্থান অধিকার করে আছে। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নিরীহ এই প্রাণীকে ‘কূটনৈতিক হাতিয়ার’ করে তুলেছে দেশটির সামরিক জান্তা কতৃর্পক্ষ। ‘হাতি কূটনীতি’র অংশ হিসেবে এর আগে ২০২৪ সালে জাপানের ফুকুওকাতে কয়েকটি হাতি পাঠানো হয়। ২০২১ সালের সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমার ও রাশিয়া সামরিক ও কূটনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করেছে।