এফএনএস স্পোর্টস: বোলিংয়ে শেষ দিনে অসাধারণ কিছু করে দেখাতে পারল না ভারত। আগের দিন গড়া মঞ্চে সেঞ্চুরির উৎসবে মাতলেন জো রুট। জনি বেয়ারস্টো গড়লেন ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরির কীর্তি। তাদের রেকর্ড জুটিতে অসাধারণ রান তাড়ায় অনায়াস জয়ে সিরিজ শেষ করল ইংল্যান্ড। এজবাস্টন টেস্ট মঙ্গলবার ইংল্যান্ড জিতল ৭ উইকেটে। পাঁচ ম্যাচের সিরিজ শেষ হলো ২-২ সমতায়। ৭ উইকেট হাতে নিয়ে পঞ্চম দিনে ইংল্যান্ডের দরকার ছিল ১১৯ রান। ৩৭৮ রানের লক্ষ্য স্বাগতিকরা ছুঁয়ে ফেলে প্রথম সেশনেই। টেস্ট ক্রিকেটে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রান তাড়া করে জয় এটিই। ২০১৯ সালে হেডিংলিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ ৩৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১ উইকেটে জিতেছিল বেন স্টোকসের অসাধারণ সেঞ্চুরির সৌজন্যে। অথচ ম্যাচের প্রথম তিন দিন ইংল্যান্ডের জয়ের কথা কজনইবা ভেবেছিল! প্রথম ইনিংসে ভারতের চারশ ছাড়ানো রানের জবাবে একপর্যায়ে যারা ৮৩ রানে হারিয়েছিল ৫ উইকেট, প্রথম ইনিংসে পিছিয়ে ছিল ১৩২ রানে, সেই দলই রান তাড়ায় আরেকটি চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্সে তুলে নিল দুর্দান্ত এক জয়। জয়ের মূল কারিগর অবশ্যই বেয়ারস্টো। প্রথম ইনিংসে তার সেঞ্চুরিই বিপর্যয় থেকে টেনে তুলেছিল দলকে। রান তাড়ায় আরেকটি সেঞ্চুরিতে ম্যাচের সেরা তিনিই। সবশেষ ৫ ইনিংসে তার সেঞ্চুরি হলো ৪টি! ১৪৫ বলে ১৫ চার ও একটি ছক্কায় ১১৪ রানে অপরাজিত থাকেন বেয়ারস্টো। এই সিরিজে চতুর্থ সেঞ্চুরিতে রুট ১৭৩ বলে ১৯ চার ও একটি ছক্কায় করেন অপরাজিত ১৪২ রান। দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটির রান ৩১৬ বলে ২৬৯। টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে চতুর্থ উইকেটে সর্বোচ্চ জুটি এটিই। ১৯৭৮ সালে গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩৫৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার গ্রায়েম উড ও ক্রেইগ সার্জেন্টের ২৫১ রানের জুটি ছিল আগের রেকর্ড। নতুন টেস্ট অধিনায়ক স্টোকস ও নতুন কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালামের হাত ধরে বদলে যাওয়া ইংল্যান্ড আগের সিরিজে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা তিন টেস্ট জিতেছিল ২৭৭, ২৯৯ ও ২৯৬ রানের লক্ষ্য তাড়া করে। এবার তারা ছাড়িয়ে গেল নিজেদেরই। ভারত দলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় গত বছর স্থগিত করা হয়েছিল সিরিজের পঞ্চম টেস্ট। ম্যানচেস্টারের সেই ম্যাচটিই নতুন সূচিতে হলো এজবাস্টনে। ২০০৭ সালের পর ইংল্যান্ডে প্রথমবার টেস্ট সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েও হারের বেদনায় পুড়ল ভারত। প্রথম তিন দিন সফরকারীরা যেভাবে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল, তাদের হারের কথা হয়তো কেউ ভাবেনি। প্রথম ইনিংসে শুরুর বিপর্যয় সামলে রিশাভ পান্ত ও রবীন্দ্র জাদেজার সেঞ্চুরি, রোহিত শর্মার অনুপস্থিতে নেতৃত্বের অভিষেকে জাসপ্রিত বুমরাহর টেস্টের এক ওভারে সবচেয়ে বেশি রান নেওয়ার রেকর্ড, প্রথম ইনিংসের বড় লিড মিলিয়ে দারুণ কিছুরই স্বপ্ন দেখেছিল তারা। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এই নিয়ে মাত্র দ্বিতীয়বার প্রতিপক্ষকে তিনশর বেশি রানের লক্ষ্য দিয়ে হেরে গেল ভারত। ১৯৭৭ সালে পার্থে তাদের দেওয়া ৩৩৯ রানের লক্ষ্য তাড়ায় অস্ট্রেলিয়া জিতেছিল ২ উইকেটে। সেবার নাইটওয়াচম্যান হিসেবে তিন নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করেছিলেন টনি মান। রুট ৭৬ ও বেয়ারস্টো ৭২ রান নিয়ে পঞ্চম দিন শুরু করেন। উইকেটে বোলারদের জন্য ছিল না তেমন একটা সুবিধা। মোহাম্মদ সিরাজকে চার মেরে রুট ক্যারিয়ারের ২৮তম টেস্ট সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৩৬ বলে। এই বছরে তার পঞ্চম সেঞ্চুরি এটি। পরে তিনি র্যাম্প শটে ছক্কা মারেন শার্দুল ঠাকুরকে। বেয়ারস্টো সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১৩৮ বলে। ২০০৮ সালে অ্যান্ড্রু স্ট্রাউসের পর ইংল্যান্ডের হয়ে ম্যাচে জোড়া সেঞ্চুরি করলেন কেউ। পরের ওভারে সিরাজকে টানা তিনটি চার মারেন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।জাদেজার পরের ওভারে রিভার্স-সুইপে চার মেরে স্কোর সমান করেন রুট। এক বল পর আরেকটি রিভার্স-সুইপেই সিঙ্গেল নিয়ে জয়ে তুলির শেষ আঁচর টেনে দেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক। সিরিজে ৯ ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরিতে রুটের রান ৭৩৭। গড় অবিশ্বাস্য, ১০৫.২৮! সংক্ষিপ্ত স্কোর: ভারত ১ম ইনিংস: ৪১৬। ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ২৮৪। ভারত ২য় ইনিংস: ২৪৫। ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৭৮) ৭৬.৪ ওভারে ৩৭৮/৩ (আগের দিন ২৫৯/৩) (রুট ১৪২*, বেয়ারস্টো ১১৪*; বুমরাহ ১৭-১-৭৪-২, শামি ১৫-২-৬৪-০, জাদেজা ১৮.৪-৩-৬২-০, সিরাজ ১৫-০-৯৮-০, শার্দুল ১১-০-৬৫-০)। ফল: ইংল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী। সিরিজ: ৫ ম্যাচের সিরিজ ২-২ সমতায় শেষ। ম্যান অব দা ম্যাচ: জনি বেয়ারস্টো। ম্যান অব দা সিরিজ: জো রুট, জাসপ্রিত বুমরাহ।