এফএনএস: অন্তর্বতীর্কালীন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর আগের সময়ের তুলনায় রেমিট্যান্স ২৬ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। গতকাল বুধবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। প্রবাসীরা ইসলামী ব্যাংকগুলোতে টাকা পাঠাতে বেশি পছন্দ করেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আর ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার লুট করার জন্য বেছে নিয়েছিল এই ইসলামী ব্যাংকগুলোকেই। ছয়টি ইসলামী ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে তাদের প্রিয় ব্যবসায়িক গ্রুপ। একটা চেক দিলে সেটি অনার করতে পারে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাংক ছিল ইসলামী ধারার ব্যাংকগুলো। এই ব্যাংকগুলোকে টার্গেট করে দুর্বল করা হয়েছিল। এই ব্যাংকগুলোকে চাঙ্গা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। প্রবাসীদের পাসপোর্ট নিয়ে অনেকেই অভিযোগ জানিয়েছেন উল্লেখ করে উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই, পাসপোর্টের দায়িত্ব প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের না। অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে, আমি কিছু করছি না। আমার এখতিয়ারে নেই, তবুও আমি কনসার্ন দপ্তরে মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। এসময় নিজ দপ্তরের নেওয়া কিছু উদ্যোগের কথাও তুলে ধরেন উপদেষ্টা। উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, আমরা আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অল্প কিছু উদ্যোগ নিয়েছি, যা গর্ব করে বলার মতো না। বিমানবন্দরে লাউঞ্জ করেছি, আমার ধারণা প্রবাসীরা পছন্দ করেছেন। সরাসরি সেবা দেওয়ার জন্য প্রায় ২০০ কর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বিমানবন্দরে। প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকে রেমিট্যান্স আনার ব্যবস্থা করেছি। কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ করায় সংযুক্ত আরব আমিরাতে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি সাজাপ্রাপ্ত হন। পরে কূটনৈতিক তৎপরতায় তাদের তাদের ক্ষমা করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান। এ প্রসঙ্গ স্মরণ করে উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, বিদেশে আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে প্রবাসী ভাইয়েরা কত বড় স্যাক্রিফাইস করেছেন। তাদের আমরা পুনর্বাসনের চেষ্টা করছি। বড় বড় ব্যবসায়িক শিল্প গ্রুপ তাদের চাকরি দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। প্রবাসীদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ অভিবাসন ব্যয় কমানো উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি ব্যয় কমানোর। আমাদের এখানে রিক্রুটিং এজেন্ট আছে ভালো, আবার কিছু আছেন কত বেশি করে মানুষকে ঠকানো যায়। গত সরকারের আমলে এই ধরনের রিক্রুটিং এজেন্সিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছিল। সাব—এজেন্টের কাছে অনেক টাকা দিয়ে বিদেশে যান, আমাদের কাছে বলতেও চান না যে, অনেক টাকা দিয়ে গেছেন। আমাদের সাপ্লাইয়ের তুলনায় ডিমান্ড খুব বেশি। এজন্য সুযোগ নেওয়া হয়। আমরা সাব—এজেন্টের দায়দায়িত্ব নিরূপণের চেষ্টা করছি। আমরা চেষ্টা করছি বায়রাতে যেন একটা যথার্থ নেতৃত্ব আসে, এখানে আবার মামলা ঝুলে আছে। আকাঙক্ষা ব্যক্ত করা সহজ, কিন্তু করতে গেলে অনেক ঝামেলা। বাংলাদেশ থেকে বিদেশে দক্ষ শ্রমিক কম যায় উল্লেখ করে আসিফ নজরুল বলেন, এই সমস্যা অল্প সময়ে মেটানো সম্ভব না। ইউরোপে দক্ষ কর্মীর চাহিদা আছে সেখানে আমরা খুবই কম লোক পাঠাতে পারি। আমরা সেটা বাড়ানোর চেষ্টা করবো। ‘রি—ইন্টিগ্রেশন’ আরেকটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে জানান প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, আমাদের প্রবাসী ভাইয়েরা অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা জমান। সেই টাকা দেশে এনে দালালের খপ্পরে পড়ে জমি, ফ্ল্যাট, ভুয়া ব্যবসা করতে গিয়ে ঠকে যান। এই সমস্যা দূর করতে আমরা প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে কাজ করবো। উপদেষ্টা বলেন, ‘সবকিছু আমার অধীনে না। পাসপোর্ট সমস্যা, বিমানবন্দরে হয়রানি আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে না। আপনারা যদি এখানে এসে কোনও বিনিয়োগ করে প্রতারিত হন, সেটা আমার মন্ত্রণালয়ের অধীনে না। আমরা যেটা করতে পারি অন্যান্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করতে পারি।