এফএনএস স্পোর্টস: চোট কাটিয়ে মাঠে নেমেই চিরচেনা রূপে ফিরলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। অসাধারণ এক হ্যাটট্রিক করার পথে ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে সবচেয়ে বেশি গোলের ‘সবশেষ রেকর্ডটাও’ ভেঙে দিলেন পর্তুগিজ তারকা। রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে টটেনহ্যাম হটস্পারকে হারিয়ে লিগ টেবিলে শীর্ষ চারে ফিরল ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে শনিবার প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচটি ৩-২ গোলে জিতেছে রালফ রাংনিকের দল। প্রথম দুইবার রোনালদো ইউনাইটেডকে এগিয়ে নেওয়ার পর প্রতিবারই সমতায় ফিরে লড়াই জমিয়ে তোলে টটেনহ্যাম। শেষ দিকে রোনালদোই গড়ে দেন পার্থক্য। দুই ম্যাচ পর লিগে জয়ের স্বাদ পেল ইউনাইটেড। গত রাউন্ডে ম্যানচেস্টার সিটির মাঠে ৪-১ গোলে হারের আগে ওয়াটফোর্ডের সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করেছিল তারা। নিতম্বের চোটে সিটির মাঠে খেলতে পারেননি রোনালদো। এবার তিনিই দলের জয়ের নায়ক। দ্বাদশ মিনিটে রোনালদোর চমৎকার গোলে এগিয়ে যায় ইউনাইটেড। ফ্রেদের ফ্লিকে বল পেয়ে একটু জায়গা বানিয়ে ২৫ গজ দূর থেকে পাঁচবারের বর্ষসেরা ফুটবলারের শটে ওপরের কোনা দিয়ে বল জালে আশ্রয় নেয়। অষ্টাদশ মিনিটে টটেনহ্যামের বেন ডেভিস বল ইউনাইটেডের জালে পাঠালেও গোল মেলেনি, পরিষ্কার অফসাইডে ছিলেন তিনি। ২৬তম মিনিটে দিয়োগো দালোতের দৃঢ়তায় ব্যবধান ধরে রাখে স্বাগতিকরা। কর্নারে কাছ থেকে এরিক ডায়ারের হেড গোললাইন থেকে হেডেই ফেরান পর্তুগিজ ডিফেন্ডার। ৩৫তম মিনিটে আর রক্ষা হয়নি ইউনাইটেডের। সফল স্পট কিকে সমতা টানেন হ্যারি কেইন। ডি-বক্সে দেজান কুলুসেভস্কির ক্রস প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডার আলেক্স তেলেসের হাতে লাগলে পেনাল্টিটি দিয়েছিলেন রেফারি। লিড পুনরুদ্ধার করতে ইউনাইটেডের লাগে ¯্রফে তিন মিনিট। মাঝমাঠ থেকে সতীর্থের পাস ধরে অফসাইডের ফাঁদ এড়িয়ে জেডন স্যানচো বল বাড়ান ছয় গজ বক্সের মুখে। প্রথম স্পর্শে জাল খুঁজে নেন পর্তুগাল অধিনায়ক রোনালদো। ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে রোনালদোর এটি ৮০৬তম গোল। ইতিহাসে ক্যারিয়ার গোলের হিসেবে সব সেরাদের অনেক আগেই পেছনে ফেলেছেন রোনালদো। তারপরও ক্লাব ও আন্তর্জাতিক ফুটবল মিলিয়ে পুরুষ ফুটবলে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড নিয়ে ছোট্ট একটা বিতর্ক ছিলই। আনঅফিসিয়াল পরিসংখ্যানবিদদের সংগঠন ‘আরএসএসএসএফ’-এর হিসাব অনুযায়ী, সাবেক অস্ট্রিয়া ও তৎকালীন চেকোস্লোভাকিয়ার স্ট্রাইকার ইয়োসেফ বিকানের গোল ৮০৫টি। এবার তাকেও ছাড়িয়ে গেলেন রোনালদো। ৩৭ বা এর বেশি বয়সী তৃতীয় খেলোয়াড় হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে এক ম্যাচে একাধিক গোল করলেন রোনালদো। আগের দুজন টেডি শেরিংহাম (একবার) ও গ্রাহাম অ্যাকেজ্যান্ডার (দুইবার)। দ্বিতীয়ার্ধে খেলার গতি কমে আসে কিছুটা। ৭২তম মিনিটে হ্যারি ম্যাগুইয়ারের আত্মঘাতী গোলে আবার সমতায় ফেরে টটেনহ্যাম। সফরকারীদের ডিফেন্ডার সের্হিও রেগিলনের ক্রস ক্লিয়ার করার চেষ্টায় নিজেদের জালে বল পাঠান ইউনাইটেড ডিফেন্ডার। তিন মিনিট পর দূর থেকে চেষ্টা করেন রোনালদো। তার নিচু শট ঝাঁপিয়ে ঠেকান গোলরক্ষক উগো লরিস। ইউনাইটেড শিবিরে তখন পয়েন্ট হারানোর শঙ্কা, এরপরই ৮১তম মিনিটে আরেকবার রোনালদোর ঝলক। কর্নারে হেডে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। ২০০৮ সালের জানুয়ারির পর ইউনাইটেডের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করলেন রোনালদো। সেবার নিউক্যাসলের বিপক্ষে ৬-০ গোলে জয়ের ম্যাচে তিনটি করেছিলেন তিনি। ক্লাব ও জাতীয় দল মিলিয়ে রোনালদোর হ্যাটট্রিক হলো ৫৯টি। ক্যারিয়ার গোল সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ৮০৭টি। এবারের লিগে তার গোল হলো ১২টি। প্রথম দল হিসেবে প্রিমিয়ার লিগে ঘরের মাঠে ৪০০ ম্যাচ জয়ের মাইলফলক স্পর্শ করল ইউনাইটেড। এর মধ্যে ২৩টি টটেনহ্যামের বিপক্ষে, এটিও রেকর্ড। আগামী মঙ্গলবার এই মাঠেই চ্যাম্পিয়ন্স লিগে শেষ ষোলোর ফিরতি লেগে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে নামবে রোনালদোরা। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটির আগে এই জয় নিশ্চিতভাবে আত্মবিশ্বাস বাড়াবে ম্যানচেস্টারের দলটির। মাদ্রিদে প্রথম লেগ ১-১ গোলে ড্র হয়েছিল। প্রিমিয়ার লিগে ২৯ ম্যাচে ১৪ জয় ও ৮ ড্রয়ে ৫০ পয়েন্ট নিয়ে চারে আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ২৫ ম্যাচে ৪৮ পয়েন্ট নিয়ে পাঁচে নেমে গেছে আর্সেনাল। ২৭ ম্যাচে ৫৬ পয়েন্ট নিয়ে তিনে চেলসি। আরেক ম্যাচে ব্রাইটনকে ২-০ গোলে হারানো লিভারপুল ২৮ ম্যাচে ৬৬ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে। সমান ম্যাচে ৩ পয়েন্ট বেশি নিয়ে শীর্ষে ম্যানচেস্টার সিটি। ২৭ ম্যাচে ৪৫ পয়েন্ট নিয়ে সাত নম্বরে আছে টটেনহ্যাম।