এফএনএস স্পোর্টস: আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণে ম্যাচ জুড়ে ছড়াল উত্তেজনার রেণু। দুই দলই হাতছাড়া করল সুবর্ণ সুযোগ। উভয়েরই বাতিল হলো ‘গোল।’ রোমাঞ্চের ভেলায় ভেসে মূল ম্যাচ ও অতিরিক্ত সময় পেরিয়ে খেলা গড়াল টাইব্রেকারে। সেখানেও যেন শেষ হয় না লড়াই! সাডেন ডেথে বল উড়িয়ে মারলেন এমন একজন, যাকে নামানোই হয়েছিল টাইব্রেকার শুরুর একটু আগে- চেলসির গোলরক্ষক কেপা আরিসাবালাগা! লিগ কাপের শিরোপা উলাসে ফেটে পড়ল লিভারপুল। লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে রোববারের ফাইনালে টাইব্রেকারে ১১-১০ ব্যবধানে জিতেছে ইয়ুর্গেন ক্লপের দল। মূল ম্যাচ ও অতিরিক্ত সময়ে স্কোরলাইন ছিল গোলশূন্য। ম্যানচেস্টার সিটিকে ছাড়িয়ে প্রতিযোগিতাটিতে সবচেয়ে বেশি শিরোপা জয়ের রেকর্ড নিজেদের করে নিল লিভারপুল, ৯ বার। লিগ কাপের ফাইনালে এর আগে একবারই মুখোমুখি হয়েছিল চেলসি ও লিভারপুল। ১৭ বছর আগে কার্ডিফে অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো ম্যাচে ৩-২ গোলে জিতেছিল চেলসি। এবার তাদের হারিয়ে মধুর প্রতিশোধ নিল লিভারপুল। টাইব্রেকারে দুই দলের ২০ আউটফিল্ড খেলোয়াড়ই বল জালে পাঠান। জাল খুঁজে নেন লিভারপুল গোলরক্ষক কুইভিন কেলেহারও। এরপরই আরিসাবালাগার ওই শট উড়ে যায় ক্রসবারের অনেক ওপর দিয়ে। উৎসবে মাতেন মোহামেদ সালাহ, সাদিও মানেরা। ইংলিশ ফুটবলের দুই শীর্ষ সারির দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে এর আগে কখনোই টাইব্রেকারে এত বেশি শট নিতে হয়নি। ষষ্ঠ মিনিটে ম্যাচের প্রথম সুযোগ পায় চেলসি। কাই হাভার্টজ ডি-বক্সের ডান দিকে খুঁজে নেন সেসার আসপিলিকুয়েতাকে। এই স্প্যানিশ ডিফেন্ডারের পাসে ছয় গজ বক্সের মুখ থেকে ওয়ান-অন-ওয়ানে ক্রিস্টিয়ান পুলিসিকের শট পা দিয়ে ঠেকিয়ে দেন তরুণ গোলরক্ষক কেলেহার। সপ্তদশ মিনিটে ভালো একটি সুযোগ পান লিভারপুলের মানে। ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের লম্বা করে বাড়ানো বলে ডি-বক্সে ঠিকমতো হেড করতে পারেননি সেনেগালের এই ফরোয়ার্ড। ৩০তম মিনিটে দুর্দান্ত ডাবল সেভে জাল অক্ষত রাখেন চেলসি গোলরক্ষক এদুয়াঁ মঁদি। নাবি কেইতার ২০ গজ দূর থেকে নেওয়া শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে ঠেকানোর পর কাছ থেকে মানের প্রচেষ্টাও দারুণ দক্ষতায় ফিরিয়ে দেন তিনি। বিরতির আগে সুবর্ণ সুযোগ হারান ম্যাসন মাউন্ট। পুলিসিক ডি-বক্সে বল বাড়ান হাভার্টজকে। তার পাসে ১০ গজ দূর থেকে অবিশ্বাস্যভাবে বল বাইরে মারেন অরক্ষিত মাউন্ট। দ্বিতীয়ার্ধের পঞ্চম মিনিটে আরেকটি সুযোগ হাতছাড়ার হতাশা সঙ্গী হয় তার। পুলিসিকের লম্বা করে বাড়ানো বলে ১৪ গজ দূর থেকে ইংলিশ মিডফিল্ডারের শট পোষ্টে লাগে। ৬৭তম মিনিটে লিভারপুল জালে বল পাঠিয়ে উৎসবে মাতলেও গোল মেলেনি। অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ডের ফ্রি-কিকে মানের হেড পাসে দুই গজ দূর থেকে হেডেই ফাঁকা জালে বল পাঠান জোয়েল মাতিপ। কিন্তু ভিএআরের সাহায্যে অফসাইডের বাঁশি বাজান রেফারি। বলে স্পর্শ না করলেও ফ্রি-কিকের সময়ে সামান্য ব্যবধানে অফসাইডে ছিলেন ভার্জিল ফন ডাইক। ৭৮তম মিনিটে চেলসির টিমো ভেরনারও হেডে জালে বল পাঠান। কিন্তু এখানেও অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। অতিরিক্ত সময়ে ৯৮তম মিনিটেও একই অভিজ্ঞতা সঙ্গী হয় চেলসির। চালোবাহর থ্রু বল ধরে বল জালে পাঠান দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা রোমেলু লুকাকু, কিন্তু অফসাইডে ছিলেন বেলজিয়ান স্ট্রাইকার। ১১০তম মিনিটে হাভার্টজ জাল খুঁজে নিলেও অফসাইডের পতাকা তোলেন লাইন্সম্যান। টাইব্রেকার সামনে রেখে অতিরিক্ত সময়ের এক মিনিট বাকি থাকতে মঁদিকে তুলে আরিসাবালাগাকে নামান চেলসি কোচ টমাস টুখেল। তবে নায়ক নয়, শেষ পর্যন্ত স্প্যানিশ এই গোলরক্ষকই হয়ে গেলেন খলনায়ক!