এফএনএস স্পোর্টস: শেষ দিনের লাঞ্চের আগে ও পরে সম্ভাবনা জেগেছিল একটু। বাংলাদেশ বেশ ভালোভাবেই চেপে ধরেছিল শ্রীলঙ্কাকে। তবে কোনও রোমাঞ্চ ছাড়াই নিষ্প্রাণ ড্রতে শেষ হলো চট্টগ্রাম টেস্ট। দিন শেষের নির্ধারিত সময়ের একঘণ্টা আগেই দুই দল ড্র মেনে নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম টেস্টের পঞ্চম দিনে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা। যদিও একটা দিন বাকি, তারপরও চতুর্থ দিনে শেষ বিকালে বাংলাদেশের বোলিং সামান্য হলেও আশা দেখাচ্ছিল ফল হওয়ার। কিন্তু কিছুই হলো না। প্রত্যাশিত ড্রতেই শেষ হয়েছে প্রথম টেস্টের লড়াই। দ্বিতীয় ইনিংসে শ্রীলঙ্কা ৯০.১ ওভারে ৬ উইকেটে করে ২৬০ রান। এরপরই ড্র মেনে নেয় দুই দল। শ্রীলঙ্কা ইনিংস ঘোষণা করেনি, তাই দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা হয়নি বাংলাদেশের। প্রথম ইনিংসে লঙ্কানদের ৩৯৭ রানের জবাবে স্বাগতিকরা করেছিল ৪৬৫ রান। জহুর আহমেদ চৌধুরীর রান উৎসবের উইকেটে ড্র-ই মনে হচ্ছিল সম্ভাব্য গন্তব্য। তবে চতুর্থ দিনের শেষ বিকালে বাংলাদেশ ২ উইকেট তুলে নেওয়ায় রোমাঞ্চকর শেষ দিনের আভাস মিলেছিল। যদিও পঞ্চম দিনে লঙ্কান ব্যাটারদের দাপটে সামান্য লড়াইও হলো না। লাঞ্চের আগে-পরে সফরকারীরা ৪ উইকেট হারিয়েছিল। এরপর নিরোশান ডিকবেলা ও দিনেশ চান্ডিমাল মিলে বিপদ আর বাড়তে দেননি। সপ্তম উইকেট জুটিতে তারা অবিচ্ছিন্ন থাকেন ৯৯ রানে। ড্র মেনে নেওয়ার আগে ডিকবেলা অপরাজিত ছিলেন ৬১ রানে। ৯৬ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৬ বাউন্ডারিতে। অন্যদিকে চান্ডিমাল ১৩৫ বলে খেলেন ৩৯ রানের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে আলো ছড়িয়েছেন তাইজুল ইসলাম। লঙ্কানদের হারানো ৬ উইকেটের ৪টিই এই স্পিনারের। আগের দিনের শেষ বিকালের একটির সঙ্গে আজ যোগ করেন আরও ৩টি। এই স্পিনার পঞ্চম দিনে উইকেট উদযাপন শুরুটা করেছিলেন কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে। টেস্ট ম্যাচ হলেও মেন্ডিসের ব্যাটিং দেখে তা বোঝার উপায় ছিল না। যেন টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমেছিলেন তিনি! বাংলাদেশের বোলারদের ওপর ঝড় বইয়ে দিয়ে বাউন্ডারির পর বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছিলেন। আগ্রাসী এই ব্যাটারকে অবশেষে থামালেন তাইজুল। খালেদ আহমেদের টানা তিন বলে মেন্ডিস মারেন তিন বাউন্ডারি। নাঈম হাসানের আরেক ওভারে পরপর দুই বলে চার-ছক্কা হাঁকান তিনি। দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরির কাছাকাছিও চলে গিয়েছিলেন। কিন্তু তাইজুলের ঘূর্ণির সামনে ৪৮ রানে থামতে হয়েছে মেন্ডিসকে। বাঁহাতি স্পিনারের বলে ক্লিন বোল্ড হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন তিনি। ফেরার আগে ৪৩ বলে ৮ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কায় মেন্ডিস খেলে যান ৪৮ রানের ইনিংস। খানিক পর আবারও উইকেট তাইজুলের। এবার ফেরান অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজকে। মাত্র ১ রানের জন্য ডাবল সেঞ্চুরি মিস করেছিলেন লঙ্কান ব্যাটার। আক্ষেপ-হতাশা থাকাই স্বাভাবিক, যদিও তিনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছিলেন। কিন্তু প্রথম ইনিংসের ম্যাথুজের ছিটেফোঁটাও পাওয়া যায়নি দ্বিতীয় ইনিংসে। এবার তাকে রানের খাতাই খুলতে দেননি তাইজুল। তাতে চট্টগ্রাম টেস্টে রোমাঞ্চের আভাস মেলে। যে শ্রীলঙ্কা দিনের শুরুতে ছড়ি ঘুরিয়েছে বাংলাদেশের ওপর, সেই তারাই ব্যাকফুটে চলে যায় তাইজুলের জোড়া আঘাতে। ক্রিজে আসার পর থেকে অস্বস্তি দেখা যাচ্ছিল ম্যাথুজের ব্যাটিংয়ে। টিকতেও পারলেন না। তাইজুলকে রিটার্ন ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাজঘরে। যাওয়ার আগে ১৫ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি প্রথম ইনিংসে ১৯৯ রানের অসাধারণ ইনিংস খেলা সাবেক লঙ্কান অধিনায়ক। যদিও ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে ম্যাথুজের হাতেই। লাঞ্চের পরেও তাইজুল-ম্যাজিক। দিমুথ করুণারতেœকেও আউট করেছেন বাঁহাতি স্পিনার। সকালের সেশনে জোড়া আঘাতে বাংলাদেশ ক্যাম্পে স্বস্তি ফেরানো বাঁহাতি স্পিনার লাঞ্চ থেকে ঘুরে এসে আবার পেয়েছেন সাফল্য। তার বলে মুমিনুল হককে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন করুণারতেœ। ফেরার আগে ১৩৮ বলে ২ বাউন্ডারিতে খেলে যান ৫২ রানের ইনিংস। করুণারতেœ আউট হলেও ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে তার প্রতিরোধ ভাঙেন সাকিব আল হাসান। মুশফিকুর রহিমের হাতে ক্যাচ বানিয়ে লঙ্কান ব্যাটারকে আউট করে দ্বিতীয় ইনিংসে প্রথম উইকেট পান সাকিব। এরপর আর বিপদ বাড়েনি সফরকারীদের। তাদের টেনে নিয়ে যান ডিকবেলা ও চান্ডিমাল। দ্বিতীয় ইনিংসে তাইজুল ৩৪ ওভারে ৮২ রান দিয়ে নেন ৪ উইকেট। সাকিব ২৫ ওভারে ৫৮ রান খরচায় নেন ১ একটি। প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেট পাওয়া নাঈম হাসান ২৩ ওভারে ৭৯ রান দিয়ে উইকেটশূন্য। সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলঙ্কা: প্রথম ইনিংসে ১৫৩ ওভারে ৩৯৭ (অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ ১৯৯, দিনেশ চান্ডিমাল ৬৬, কুশল মেন্ডিস ৫৪, ওশাডা ফার্নান্ডো ৩৬; নাঈম হাসান ৬/১০৫, সাকিব আল হাসান ৩/৬০, তাইজুল ইসলাম ১/১০৭) ও দ্বিতীয় ইনিংসে ৯০.১ ওভারে ২৬০/৬ (নিরোশান ডিকবেলা ৬১*, দিমুথ করুণারতেœ ৫২, কুশল মেন্ডিস ৪৮, দিনেশ চান্ডিমাল ৩৯*, ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ৩৩; তাইজুল ইসলাম ৪/৮২, সাকিব আল হাসান ১/৫৮)। বাংলাদেশ: প্রথম ইনিংসে ১৭০.১ ওভারে ৪৬৫ (তামিম ইকবাল ১৩৩, মুশফিকুর রহিম ১০৫, লিটন দাস ৮৮, মাহমুদুল হাসান জয় ৫৮, সাকিব আল হাসান ২৬; কাসুন রাজিথা ৪/৬০, অসিথা ফার্নান্ডো ৩/৭২)। ফল: ড্র। ম্যাচসেরা: অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ।