জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে \ প্রাণ-সংহারী করোনার পর ফের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নতুন ভোটারের তথ্য সংগ্রহ আজ শুক্রবার থেকে শুরু হচ্ছে। তবে, হালনাগাদ প্রক্রিয়ায় মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত একজন রোহিঙ্গা যাতে ভোটার তালিকায় নাম উঠানে না পারেন সেজন্য বিশেষ সতর্কতা ও নজরদারি করার নিদের্শনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। রোহিঙ্গা ঠেকানো ইসির জন্য এখন বড় চ্যালেঞ্জ। এ লক্ষ্যে ১৩ শর্তজুড়ে রোহিঙ্গা ঠেকানোর চেষ্টা সংশ্লিষ্টদের। জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার মো. আনিছুর রহমান বলেন, নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন করার জন্য আমরা সব ধরণের নিদের্শনা দিয়েছি। বলেছি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে নাগরিকের সঠিক তথ্য নিয়ে তালিকা হালনাগাদ করার জন্য। তবে, রাজধানীতে কিছুটা সমস্যা হয় কারণ দারোয়ানরা বাড়িতে ঢুকতে বাধা প্রদান করেন। কিন্তু গ্রামে এই সমস্যা নেই। নানা প্রতিদ্বন্ধকতার পরও আমরা বলেছি একটি নির্ভুল তালিকা করার জন্য। কারণ একটি ভোটার সনদ দিয়ে নাগরিকের সেবা নিয়ে থাকেন ৩৯টি। তাই নিবন্ধন কর্মকর্তা এবং যিনি ভোটার হবেন উভয়ের সহায়তা জরুরি। নির্বাচন কমিশনার ব্রি. জে. (অব.) মো. আহসান হাবিব খান বলেন, একজন রোহিঙ্গা যাতে ভোটার হতে না পারেন সেজন্য কঠোর নজরদারি রাখতে নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। কারো পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে বিশেষ এলাকায় কাউকে ভোটার করা যাবে না। সনাক্তকারী ব্যক্তির নাম-পরিচয়-ও নিশ্চিত করতে হবে। নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানা বলেন, ২০ মে ভোটার হালনাগাদ শুরু হলেও ওই দিন কমিশন নিজেরাই বসবে। রোহিঙ্গারা যাতে কোন অবস্থায় ভোটার পরিচয়পত্র না পায় সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থা রাখতে সভায় সুপারিশ জানানো হবে। ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, রোহিঙ্গাদের বিষয়ে চারটি ওয়ার্কশপ হয়েছে। সেখান থেকে যে ফিডব্যাক এসেছে সে অনুযায়ী কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আরও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হবে। ইসি সূত্রমতে, করোনা মহামারীর আগে হালনাগাদ করার সময় অর্থের বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার করা হয়। এ নিয়ে গোয়েন্দা সংস্থা থেকে প্রতিবেদন দেয়া হয়। সেখানে ইসির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন কর্মকর্তার সম্পৃক্ততা রয়েছে এমন অভিযোগ উঠেছিল। পরে বিশেষ তদন্তে ছাড় পেয়েছিল ওই কর্মকর্তারা। করোনার পর আবার বাড়ি বাড়ি গিয়ে ইসির হালনাগাদ শুরু হচ্ছে। আজ থেকে তথ্য সংগ্রহকারীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবেন। জানা গেছে, স¤প্রতি ইসির সহকারি সচিব মো . মোশাররফ হোসেন স্বাক্ষরিত এই সংক্রান্ত ১৩টি শর্ত যুক্ত করে সকল সিনিয়র জেলা/জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা/ থানা নির্বাচন কর্মকর্তা এবং রেজিস্ট্রেশন অফিসারের কাছে নির্দেশনাপাঠানো হয়েছে। শর্তগুলো হলো- রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন এবং মিথ্যা কাগজপত্র সরবরাহ করেন এবং তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদে বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং প্রচলিত অন্যান্য আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে; বিশেষ এলাকাসমূহে ভোটারদের ভোটার এলাকা স্থানান্তর কার্যক্রম সর্বোচ্চ সতর্কতার সাথে সম্পন্ন করতে হবে; রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়ার বিষয়ে যদি কেউ তাদের স্বপক্ষে সহযোগিতা অথবা মিথ্যা তথ্য দেন অথবা ভুয়া কাগজপত্র সরবরাহ করেন তা যদি তদন্তে প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকা আইন, ২০০৯ এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হবে। বিশেষ এলাকার জন্য অতিরিক্ত বিশেষ তথ্য ফরম আবশ্যিকভাবে পূরণ করে দাখিল করতে হবে; রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকায় তথ্য সংগ্রহকারী এবং সুপারভাইজাররা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি চেয়ারম্যান/সাধারণ ম্বেম্বার/সংরক্ষিত মেম্বার/চৌকিদারের সহায়তায় তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করবেন; এবং রোহিঙ্গারা যাতে কোনো মতেই ভোটার হিসেবে বিশেষ এলাকাসমূহে বা দেশের অন্য কোনো অঞ্চলে নিবন্ধিত না হতে পারে সেবিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিশেষ এলাকাসমূহের ক্ষেত্রে নিবন্ধনের জন্য ফরমে উলেখিত যাবতীয় তথ্যাদি এবং তথ্যাদির স্বপক্ষে প্রমাণক হিসেবে দাখিলকৃত ডকুমেন্টস ‘বিশেষ কমিটি’ কে বিশেষ এলাকার জন্য প্রযোজ্য প্রতিটি বিশেষ ফরম পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে যাচাই-পূর্বক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে বলেও নির্দেশনায় উলেখ করা হয়। ইতিমধ্যে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত দেশের চার জেলা- চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙামাটি ও কক্সবাজারের ৩২টি উপজেলাকে বিশেষ এলাকা ঘোষণা করেছে ইসি। আর এসব এলাকায় ভোটার করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে বিশেষ কমিটিও গঠন করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ এলাকার মধ্যে কক্সবাজার জেলার ৮টি, বান্দরবানের ৭টি, রাঙামাটির ৮ এবং চট্টগ্রামের ৯টি উপজেলা রয়েছে। ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিসহ ভোটার তালিকা কার্যক্রম হাতে নেয় ইসি। বর্তমানে ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন ভোটার রয়েছে।