এফএনএস: আমেরিকাকে ইঙ্গিত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তারা অপরাধীদের রক্ষা করে তাদের দেশে স্থান দেয়। আর বিনা অপরাধে আমাদের দেশে (র্যাব সদস্যদের) নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘অত্যন্ত গর্হিত কাজ’ বলেও মনে করেন তিনি। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় কুর্মিটোলায় র্যাব সদরদপ্তরের শহীদ লে. কর্নেল আজাদ মেমোরিয়াল হলে বিশেষ দরবারে একথা বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশে আইনশৃঙ্খলা সংস্থার যে কেউ যদি অপরাধে জড়িয়ে পড়ে আমরা কিন্তু শাস্তির ব্যবস্থা করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, যারা আমাদের বিনা কারণে বিনাদোষে র্যাবের কয়েকজন সদস্যের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে, তাদের দেশে কিন্তু এ ধরনের অপরাধ করলে কোনো বাহিনীর বিরুদ্ধে কোনো রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে না। আমি স্পষ্ট বলি, আমেরিকায় ছোট্ট বাচ্চা ছেলে জাস্ট পকেটে হাত দিয়েছে, তাকে গুলি করে মারল অথবা পা দিয়ে পাড়া দিয়ে গলা চেপে মেরে ফেলে দিল। সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার নামে অপরাধ করলে শাস্তি দেওয়া হয় না। কিন্তু বাংলাদেশ একমাত্র দেশ, সেখানে কেউ অপরাধ করলে শাস্তি নিশ্চিত করি। তারপরও দুর্ভাগ্যের বিষয় যে যারা হলি আর্টিজানের মতো এ ধরনের অভিযান করে সাফল্য অর্জন করেছে, তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আমাদের এই সাফল্যে এরা দুঃখ পেয়েছে কি না আমি জানি না। তবে বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে, সেটাই সত্য। সেখানে এরকম নিষেধাজ্ঞা অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, সবচেয়ে দুঃখজনক হলো- আমাদের দেশের কিছু মানুষ নানা ধরনের অপপ্রচার চালায়। তারা কিন্তু অপরাধী। কোনো না কোনো কারণে চাকরি হারিয়েছে বা দেশ ছেড়েছে। সেখানে আমাদের যুদ্ধাপরাধীরা যেমন ঠাঁই পেয়েছে, তেমনি জাতির পিতার আত্মস্বীকৃত খুনিও আমেরিকায় বসবাস করছে। তাকে তারা সেখানকার সিটিজেন করে নিয়েছে। আমরা বারবার তাদের রিকোয়েস্ট করেছি। একের পর এক প্রেসিডেন্টের কাছে ধর্ণা দিয়ে যাচ্ছি। তারা অপরাধীদের রক্ষা করে তাদের দেশে স্থান দেয়। আর বিনা অপরাধে আমাদের দেশে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এটাই যাদের চরিত্র, তাদের বিষয়ে আর কী বলবো? প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের প্রচেষ্টা সব সময় বাংলাদেশের উন্নয়ন। একটাই লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশকে আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তুলবো। বঙ্গবন্ধু হত্যার ২১ বছর পরে হলেও বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা শুরু হয়। আজকের এই উন্নয়নে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানসহ র্যাবেরও বিশেষ ভ‚মিকা রয়েছে। কারণ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে দেশের আইনশৃঙখলা রক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা বিধানে র্যাবের প্রতিটি সদস্য আন্তরিকতা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। তাদের কর্মদক্ষতা ও পেশাদারত্ব এই বাহিনীকে ঈর্ষণীয় সাফল্য এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আজ যে এগিয়ে যাচ্ছে, এই ধারাবাহিকতা আমাদের বজায় রাখতে হবে। তার জন্য যে কাজগুলো চলছে- তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো বিশ্বব্যাপী যে জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস শুরু হলো। কিছু এলাকায় এমন কিছু ঘটনা ঘটত জলদস্যু বনদস্যু; এদের জন্য মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা ও পণ্য পরিবহন সবকিছু বিঘিœত হত। তাছাড়া সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ যেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বিশেষ করে ২০০১ এর পরে বিএনপি-জামায়াতের আমলে দেশে সবেচেয়ে বেশি প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। র্যাব সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন, অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র ও মাদক উদ্ধার, চরমপন্থিদের দমন ও ভেজালবিরোধী অভিযানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বিশেষ ভ‚মিকা পালন করে যাচ্ছে। বিশেষ করে জঙ্গিবাদ দমনে যথেষ্ট ভ‚মিকা রেখেছে আমাদের এই বাহিনী। এজন্য এই বাহিনীর সদস্যদের ধন্যবাদ জানাই। এসময় মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখার উপর তাগিদ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, রোজাকে সামনে রেখে কিছু মজুতদারী, কালোবাজারী আছে। এগুলোর বিরুদ্ধেও র্যাব অভিযান চালাচ্ছে। র্যাব মহাপরিচালক অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুলাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে এতে অংশ নেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন ও পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ। এ ছাড়া বিভিন্ন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।