কয়রা (খুলনা) প্রতিনিধি ॥ গ্রামীণ অর্থনীতিতে সুবাতাস দিচ্ছে ভুট্রা চাষ। স্বচ্ছলতার স্বপ্ন নিয়ে ভুট্রা চাষে ঝুঁকছে কয়রার প্রান্তিক কৃষক। গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ জমিতে ভুট্রার চাষ হয়েছে। তাই এ বছর ভুট্রার বাম্পার ফলনের স্বপ্ন বুনছেন কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহারে স্বল্প খরচে অধিক ফলন হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। বিগত কয়েক বছর ভাল ফলন ও ক্রমাগত ফসলের দাম বৃদ্ধিতে ভুট্রা চাষে স্বনির্ভতার স্বপ্ন দেখছেন প্রান্তি কৃষক। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় দিন দিন এ উপজেলায় ভুট্রা চাষ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। প্রতি বছরই ভুট্রা চাষে নতুন নতুন রেকর্ড গড়ছে চাষিরা। শুধু তাই নয় প্রতিবছরই দুই-চার শত টাকা ভুট্রার দাম প্রতি বছর বাড়ছে। এতে করে ভুট্রা চাষে কৃষকের আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করেন তারা। এক শতাংশ জমিতে একমণ ভুট্রা হয়। শতাংশ প্রতি ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা বলে জানালেন উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কৃষক প্রভাষক শাহাবাজ আলী। তিনি বলেন, অন্যান্য ফসল আবাদের চেয়ে ভুট্রা চাষে খরচ কম আয় বেশি। আজ কয়েক বছর নিজের জমিতে ভুট্রা চাষ করছি। আগে অনেক ফসল আবাদ করতাম কিন্তু ফসল উৎপাদনের পর লাভের হিসাব মেলাতে কষ্ট হয়ে যেত। আমার দেখদেখি অনেকেই এখন ভুট্রা চাষে লাভের মুখ দেখছেন বলে তিনি উল্লেখ করেন। অন্যান্য আবাদের চেয়ে ভুট্রা চাষে সার-কীটনাশক কম লাগে। বৃষ্টি হলে সেচেরও খুব একটা প্রয়োজন হয়না। ফসল তোলা পর্যন্ত বাড়তি তেমন কোন ঝামেলাও নেই। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় এ চাষে দ্বিগুন লাভ হয়। চাষের ক্ষেত্রে সরকারের নানা ধরনের সহায়তা ও পরামর্শ পেলে আগামীতে আরও দ্বিগুণভাবে বাড়বে ভুট্রা চাষ। বাগালী ইউনিয়নের ফতেকাটি ও বৈরাগির চক গ্রামের কৃষক সাইদুর মোড়ল ও মনিন্দ্রনাথ বলেন, ধানের চেয়ে কম খরচ করেও দ্বিগুণ ভুট্রা উৎপাদন করা যায়। ভুট্রা চাষ থেকে শুরু করে ফসল উঠানো পর্যন্ত চার মাসের ফসল ভুট্রা। ডিসেম্বর মাসের প্রথম দিকে ভুট্রার বীজ বপন করতে হয়। এক বিঘা ভুট্রা চাষ করতে খরচ হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। বিঘা প্রতি ফলন হয় ২৫ থেকে ৩০ মণ। যা বাজার দর মণপ্রতি ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। বাজার দর ভাল থাকলে বিঘাপ্রতি বিক্রি হবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অথ্যাৎ অল্প সময়ে অধিক লাভ। এজন্য ভুট্রা চাষে কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। সরেজমিনে ভুট্রার মাঠ ঘুরে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, যেভাবে ভুট্রার ব্যবহার বাড়ছে সে অনুযায়ী কোন বাজার পাচ্ছে না। তাই এ অঞ্চলে ভুট্রার আটা ও পশু খাদ্য তৈরির মিল স্থাপন করা হলে এবং ভুট্রার বাজারজাত সহজলভ্য হলে ভুট্রা চাষ আরোও বৃদ্ধি পাবে এবং চাষিরা তাদের ফসলের ন্যায্যমূল্য পাবে। ভুট্রা চাষে কৃষকরা যেভাবে আগ্রহ দেখাচ্ছে তা অত্যান্ত ইতিবাচক। এটি কৃষি ক্ষেত্রে সরকারের আরও একটি সাফল্য। এজন্য কিছু পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি তাদের। (১)ভুট্রা চাষে শতকরা ৪ ভাগ সুদে কৃষিঋণ প্রদানের সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও ব্যাংকগুলো তা পালন করে না। কয়রার শতকরা ২ ভাগ ভুট্রাচাষিও এই ঋণ পায় না। তাই উৎপাদন বৃদ্ধিতে ভুট্রা চাষীদের মধ্যে শতকরা ৪ ভাগ সুদে ঋণ বিতরণ নিশ্চিত করা গেলে করা গেলে। (২) ভুট্রার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করনে ধানের মতো প্রতি মৌসুমে সরকারি মূল্য নির্ধারণের ব্যবস্থা। (৩) ভুট্রা চাষের আধুনিক প্রযুক্তি, পোকামাকড় ও রোগ বালাই দমন, ফসল সংগ্রহ ও সংরক্ষণের উপর বেশি করে কৃষক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা গেলে কৃষক একদিকে যেমন লাভবান হবে, অন্যদিকে ভুট্রা উৎপাদন বাড়বে এবং কৃষক লাভবান হবেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা। উপসহকারি কৃষি কমৃকর্তা ফারুক হোসেন বলেন, অনাবাদি জমিতে ভুট্রা চাষে উদ্বুদ্ধ করতে কৃষক, জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে উঠান বৈঠক থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে নিয়মিত মতবিনিময় সভা করছি যার ফলে আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভুট্রা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ কমৃসুচি চলছে। আগামী দিনে এর চাষ আরও বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চলতি মৌসুমে এ উপজেলায় রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্রা আবাদ হয়েছে। সব ধরনের ফসল উৎপাদনে আমরা চাষিদেও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহাওে উদ্বুদ্ধ করছি। ভুট্রা চাষে খরচ অনেক কম, কিন্তু দাম অনেক ভাল। সেই সঙ্গে ভুট্রার গাছ গো-খাদ্র ও জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এবার উপজেলায় ৪০ হেক্টর জমিতে ভুট্রা চাষের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৮০ হেক্টর জমিতে ভুট্রার চাষ হয়েছে। এখন ভুট্রা চাষ লাভ জনক হওয়ায় ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। এদিকে সরকারের পক্ষ থেকেও ভুট্রা চাষে কৃষককে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে। এবার কৃষি অফিস থেকে ৫০০ বিঘা জমিতে ভুট্রা চাষের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে এবং ভুট্রা চাষে সরকারের সহায়তা ও প্রণোদনা অব্যাহত আছে।