এফএনএস স্পোর্টস: শুরুর ২০ মিনিটে যে দাপুটে ফুটবল খেলল লাইপজিগ, তাতেই যেন এলোমেলো হয়ে গেল রিয়াল মাদ্রিদ। কার্লো আনচেলত্তির দল ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিলেও প্রতিপক্ষের গতির সঙ্গে পেরে উঠল না। ইউরোপ চ্যাম্পিয়নদের মৌসুমে প্রথম হারের তেতো স্বাদ দিয়ে নকআউট পর্বে ওঠার পথে এগিয়ে গেল জার্মান ক্লাবটি। লাইপজিগের রেড বুল অ্যারেনায় মঙ্গলবার রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে গ্র“প পর্বের ম্যাচটি ৩-২ গোলে জিতেছে স্বাগতিকরা। করিম বেনজেমা ও ফেদে ভালভেরদে চোটের কারণে আগে থেকেই বাইরে। আর লুকা মদ্রিচ স্কোয়াডে থাকলেও আগের দিন সরিয়ে নেওয়া হয়। নির্ভরযোগ্য তিন খেলোয়াড়ের শূন্যতা যেন অনেক বড় হয়ে উঠল। পুরো ম্যাচে কখনোই সেভাবে আধিপত্য দেখাতে পারেনি রিয়াল। শুরুর দিকে পাঁচ মিনিটের ব্যবধানে ইশকো গাবারদিওল ও ক্রিস্তোফা এনকুনকুর গোলে নিয়ন্ত্রণ নেয় লাইপজিগ। বিরতির আগে ভিনিসিউস একটি গোল শোধ করলেও দ্বিতীয়ার্ধে আবারও ব্যবধান বাড়িয়ে নেন টিমো ভেরনার। একেবারে শেষ সময়ে রদ্রিগোর গোলটা হয়ে থাকে সান্ত্বনা। সেপ্টেম্বরে প্রথম দেখায় কঠিন লড়াইয়ের পর শেষ দিকে ভালভেরদে ও মার্কো আসেনসিওর গোলে ২-০ ব্যবধানে জিতেছিল রিয়াল। এবার তাদের সেই সুযোগ দেয়নি লাইপজিগ। পাঁচ রাউন্ড শেষে ১০ পয়েন্ট নিয়ে ‘এফ’ গ্র“পের শীর্ষেই আছে রিয়াল। ৯ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে লাইপজিগ। তৃতীয় স্থানে শাখতার দোনেৎস্কের পয়েন্ট ৬। ম্যাচ শুরু হতেই আক্রমণ শাণায় লাইপজিগ। শুরুর বিপদ রিয়াল সামলে নিলেও প্রতিপক্ষের আগ্রাসী ফুটবলের সামনে যেন দিশেহারা হয়ে পড়ে সফরকারীরা। প্রথম ২০ মিনিটে গোলের উদ্দেশ্যে পাঁচটি শট নিয়ে চারটি লক্ষ্যে রাখে লাইপজিগ এবং তার দুটি সফল। ত্রয়োদশ মিনিটে কর্নারে প্রতিপক্ষের প্রথম প্রচেষ্টা ঝাঁপিয়ে ঠেকালেও বিপদমুক্ত করতে পারেননি থিবো কোর্তোয়া। ফিরতি বল পেয়ে গোলমুখ থেকে হেডে দলকে এগিয়ে নেন ক্রোয়াট ডিফেন্ডার গাবারদিওল। চার মিনিট পর গোলরক্ষকের ভুলে আবারও গোল খেতে বসেছিল রিয়াল। স্বাগতিকদের প্রতি-আক্রমণে উন্মুক্ত হয়ে পড়ে তাদের রক্ষণ। ডি-বক্স থেকে বেরিয়ে এসে বল নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হন কোর্তোয়া। তাকে কাটিয়ে একনজরে ফাঁকা গোলপোস্ট দেখেই দূর থেকে শট নেন এনকুনকু। একটুর জন্য বল পাশের জালে লাগলে সে যাত্রায় বেঁচে যায় শিরোপাধারীরা। খানিক পরেই অবশ্য দ্বিতীয় গোল হজম করে তারা। সতীর্থের শট প্রতিপক্ষের পায়ে লেগে বক্সে পেয়ে যান এনকুনকু। জায়গা বানিয়ে নেন বুলেট গতির শট, বল ক্রসবারের ভেতরের দিকে লেগে জালে জড়ায়। এরপর ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে রিয়াল। চাপ ধরে রেখে তারা সাফল্য পায় বিরতির ঠিক আগে। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি ক্রস বাড়ান আসেনসিও। ফাঁকায় বল পেয়ে নিখুঁত হেডে ব্যবধান কমান ভিনিসিউস। দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণ-পাল্টা আক্রমণ চললেও অনেকটা সময় কেউ কোনো সুযোগ তৈরি করতে পারছিল না। ৭১তম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান বাড়ানোর ভালো সম্ভাবনা জাগান ভেরনার। এনকুনকুর থ্রু বল ধরে ডি-বক্সে একজনকে কাটিয়ে কোনাকুনি শট নেন জার্মান ফরোয়ার্ড, পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বল। সাত মিনিট পর নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করেন ভিনিসিউস। বাঁ থেকে আসেনসিওর গোলমুখে বাড়ানো বল অবিশ্বাস্যভাবে বাইরে মারেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। পরক্ষণেই পাল্টা আক্রমণে তাদের স্তব্ধ করে দেয় লাইপজিগ। ডান দিক দিয়ে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন মোহামেদ সিমাকান, তার দিকে এগিয়ে যান কোর্তোয়া। সুযোগ বুঝে সিমাকান পাস দেন দূরের পোস্টে, অনায়াসে ফাঁকা জালে বল পাঠান ভেরনার। ম্যাচের একেবারে অন্তিম মুহূর্তে স্পট কিকে রদ্রিগো ব্যবধান কমালেও লড়াইয়ের সময় আর ছিল না। পাঁচ মাসের বেশি সময় পর প্রথম হারের স্বাদ নিয়ে মাঠ ছাড়ে আনচেলত্তির দল। গত মৌসুমে লা লিগায় মে মাসে সবশেষ আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে হেরেছিল লিগ চ্যাম্পিয়নরা। ইউরোপ সেরার মঞ্চে এই নিয়ে টানা দুই ম্যাচে জয়শূন্য রইল রিয়াল। গত রাউন্ডে শাখতারের মাঠে ১-১ ড্র করেছিল তারা, তাতে মিলেছিল শেষ ষোলোর টিকেট। লাইপজিগের দুর্দান্ত এই জয়ে গ্র“পের লড়াইটা বেশ জমে উঠেছে। অন্য ম্যাচের ওপর নির্ভর না করে গ্র“প সেরা হতে শেষ ম্যাচে সেল্টিকের বিপক্ষে জিততে হবে রিয়ালকে। আর দ্বিতীয় সেরা দল হয়ে পরের ধাপে ওঠার সুযোগ আছে লাইপজিগ ও শাখতারের সামনে। শেষ রাউন্ডে মুখোমুখি হবে দল দুটি।