রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৫২ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
কলারোয়ার তুলসীডাঙ্গায় বিএনপির মতবিনিময় সভা শ্যামনগরে ঠিকাদার কল্যাণ সমিতির নির্বাচনে সভাপতি আসাদুল্লাহ, সম্পাদক হাফিজুর ব্রহ্মরাজপুরে সেলুন মালিক কল্যাণ সমিতির কমিটি গঠন সভাপতি শম্ভু সম্পাদক মানিক সাতক্ষীরা জেলা চিংড়ি পোনা ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সভা সাতক্ষীরা স্কাউটস্ ত্রৈ—বার্ষিক কাউন্সিল কমিশনার শাহজাহান সম্পাদক মনোরঞ্জন পুরাতন সাতক্ষীরা সরলাপাড়া যুব সংঘের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে দোয়া মাহফিল পীরমাতা ব্লাড ব্যাংক নলতা শরীফ’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ও মিলন মেলা অনুষ্ঠিত আশাশুনির খাজরা ও বড়দল সীমান্তে কালকী স্লুইস গেট পরিদর্শনে রবিউল বাশার শ্যামনগরে মটর সাইকেল দূর্ঘটনায় চালক নিহত ও আহত ১ কালিগঞ্জে সু—নাগরিকের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ

লাগামহীন খেলাপি ঋণ নিয়ে বিপাকে ব্যাংক খাত

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২২

এফএনএস : খেলাপি ঋণ নিয়ে বিপাকে আছে পুরো ব্যাংক খাত। বেকায়দায় রয়েছে সরকারও। ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকা খেলাপি ঋণ ঘোষণা দিয়েও নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না। প্রভাবশালীদের নানামুখী চাপে কার্যকর কোনো পদক্ষেপও নিতে পারছে না নিয়ন্ত্রক সংস্থা। খেলাপি ঋণ কমাতে দু’বছর আগে বিশেষ কমিটিও গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু তারপরও পরিস্থিতি পাল্টায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ২০২১ সালের আর্থিক স্থিতিশীল প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত বছর শেষে ব্যাংকখাতে মোট খেলাপি ঋণের ৯১ হাজার ৫৭ কোটি টাকাই মন্দ ঋণে (ব্যাড লোন) পরিণত হয়েছে। যা শতাংশ হিসাবে প্রায় ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশ। আদায় অযোগ্য বা তামাদি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৯১ হাজার ৬০ কোটি টাকা বা শতকরা হিসাবে ৮৮ দশমকি ১০ শতাংশ। তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, ২০১২ সাল থেকে ব্যাংকখাতে ধারাবাহিকভাবে বাড়তে থাকে মন্দ মানের ঋণ। ২০১২ সালে মন্দ মানের (ব্যাড লোন) খেলাপি ঋণ ছিল ৬৬ দশমিক ৭০ শতাংশ, ২০১৩ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮ দশমিক ৭০ শতাংশ। এটি ২০১৬ সালে আরও বেড়ে ৮৪ দশমিক ৪০ শতাংশে দাঁড়ায়। আর ২০১৮ সালে দাঁড়ায় ৮৫ দশমিক ৯০ শতাংশ, ২০১৯ সাল শেষে ৮৬ দশমিক ৮০ শতাংশ, ২০২০ সাল শেষে ৮৭ শতাংশ এবং ২০২১ সাল শেষে তা দাঁড়ায় ৮৮ দশমিক ১৭ শতাংশে। ব্যাংকিং খাতের নিয়ম মতে, মন্দ মানের খেলাপি ঋণ আদায় না হলে অবলোপন করতে হয়। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাবে না রেখে অন্য হিসাবে রাখা হয়। এটাকে আবার গোপন খেলাপিও বলা হয়ে থাকে। ব্যাংকিং সেক্টরে অবলোপনকৃত ঋণের পরিমাণ এখন প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এসব ঋণ গ্রহীতাদের বিরুদ্ধে ব্যাংকগুলো মামলা টেনে আসছে বছরের পর বছর। এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক স্থিতিশীল প্রতিবেদন বলছে, ২০২১ সাল শেষে ব্যাংকগুলো বিভিন্ন খাতে প্রায় ১২ লাখ ১৮ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। বিতরণকৃত এসব ঋণের মধ্যে খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ৯৩৫ হাজার কোটি টাকা। তবে রাইট অফ (ঋণ অবলোপন) ও উচ্চ আদালতের নির্দেশে স্থগিত ঋণের পরিমাণ হিসাবে নিলে এটি প্রায় দুই লাখ কোটি টাকায় দাঁড়াবে। তেমন তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তথ্য বলছে, ২০২১ সাল শেষে মোট খেলাপি ঋণের ৮৮ শতাংশই আদায় অযোগ্য (ব্যাড অ্যান্ড লস) হয়ে পড়েছে। এতে বিঘœ ঘটছে আয় ও নগদ অর্থের প্রবাহে। ব্যাংকখাত বিশ্লেষকদের মতে, এ খাতের মন্দ ঋণ বড় সমস্যা। মন্দ ঋণ আদায়ের সম্ভাবনাও কম। এ ধরনের ঋণ বেশি হলে ব্যাংকগুলোর জন্য বাড়তি চাপ তৈরি হয়। ঝুঁকি সৃষ্টি হয় এবং গ্রাহকের আস্থার সংকটও দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠানের আয়ের ওপর চাপ পড়ে। একটি প্রতিষ্ঠানকে এ ঋণ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। তাই ঝুঁকি মেকোবিলায় খেলাপি ঋণের বিষয়ে আরও সতর্ক হওয়ার পরামর্শ তাদের। জানা গেছে, দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে সরকারের মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকে। ব্যাংকটিতে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। তবে খেলাপি ঋণের হার সবচেয়ে বেশি রয়েছে বিদেশি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তানের। ব্যাংকটির বিতরণ করা ঋণের ৯৭ দশমিক ৯০ শতাংশই খেলাপি। অবশ্য গত জুলাই-সেপ্টেম্বরে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির দিক থেকে শীর্ষে উঠে এসেছে বেসরকারি খাতের ন্যাশনাল ব্যাংক। খেলাপি ঋণ বৃদ্ধিতে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরের অবস্থানে রয়েছে রাষ্ট্রমালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের নাম। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। খেলাপি ঋণে শীর্ষ দশে থাকা জনতা ব্যাংক থেকে অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট, নূরজাহানসহ অন্যান্য গ্র“প মিলে হাতিয়ে নিয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। বর্তমানে ব্যাংকটির মোট ঋণের মধ্যে খেলাপি হয়েছে ২৭ দশমিক ৮৩ শতাংশ। অর্থাৎ গত এক বছরে জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৬ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। আর অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী-উচ্চ খেলাপি ঋণের হার বিবেচনায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (সাবেক ওরিয়েন্টাল)। এই ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের ৮৩ শতাংশের বেশি খেলাপি। এই ওরিয়েন্টাল ব্যাংকে ২০০৬ সালে সীমাহীন ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছিল। এই ব্যাংকের আমানতকারীদের অনেকেই এখনও আমানতের টাকা ফেরত পায়নি। পদ্মা ব্যাংকের (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) খেলাপি ঋণের হার প্রায় ৬৭ শতাংশ। ব্যাংকটির বিতরণ করা ৫ হাজার ৮৪৩ কোটি টাকার মধ্যে ৩ হাজার ৮৪০ কোটি টাকাই খেলাপি। খেলাপি ঋণের শীর্ষ দশে থাকা বেসিক ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৭ হাজার ৯৫৯ কোটি টাকা বা ৫৮ দশমিক ৬২ শতাংশ। এই ব্যাংকটি থেকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা লোপাট করা হয়। প্রসঙ্গত, দেশের ব্যাংক খাতে গত একযুগ ধরে বড় বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে উলে­খযোগ্য হলো, হলমার্ক, বিসমিল­াহ, অ্যাননটেক্স, ক্রিসেন্ট, এসএ গ্র“প, নূরজাহান, অলটেক্স, সানমুন গ্র“প ও বেসিক ব্যাংকের ঋণ কেলেঙ্কারি। এসব ঘটনায় সুদসহ ৩০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এর পুরোটাই এখন খেলাপি।  কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী ব্যাংক খাতে গত এক বছরে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৩৩ হাজার কোটি টাকা। গত সেপ্টেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকায়। আর গত বছরের সেপ্টেম্বরে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ১ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। গত জুন শেষে খেলাপি ঋণ ছিল ১ লাখ ২৫ হাজার ২৫৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ ৩ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ১৩৯ কোটি টাকা। যদিও স¤প্রতি বাংলাদেশ সফরকালে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল-আইএমএফের প্রতিনিধি দল উচ্চ খেলাপি ঋণ ব্যাংক খাতে মারাত্মক ঝুঁকি তৈরি করছে উলে­খ করে তা কমানোর উদ্যোগ ও পরিকল্পনা জানতে চেয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংক খাতের মোট ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৪ লাখ ৩৬ হাজার কোটি টাকা। এরমধ্যে খেলাপি হয়েছে মোট ঋণের ৯ দশমিক ৩৬ শতাংশ। এরমধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৬০ হাজার ৫০২ কোটি টাকা। বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৬৬ হাজার ৬৯৫ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকের ২ হাজার ৯৭০ কোটি ও বিশেষায়িত ব্যাংকে খেলাপি রয়েছে ৪ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণ বেশি থাকা অন্য ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের খেলাপি ঋণ এক হাজার ৫৩ কোটি টাকা বা ৪৫ দশমিক ৪২ শতাংশ, এবি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৪ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা বা ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ, ওয়ান ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ২ হাজার ৬৮৫ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ এবং উত্তরা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১ হাজার ৪৪১ কোটি বা ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। এ ছাড়া বিদেশি খাতের হাবিব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১২ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের বেশি হলেই তা উদ্বেগজনক। কাজেই খেলাপি ঋণ কমানোর জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com