এফএনএস স্পোর্টস: ফেডারেশন কাপের সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায়ের হতাশা ঝেড়ে ফেলতে পারল না বসুন্ধরা কিংস। প্রিমিয়ার লিগে ঘুরে দাঁড়াবে কী, উল্টো আক্রমণভাগের বিবর্ণতায়, রক্ষণের মলিনতায় পুলিশ এফসির কাছে হেরে গেল তারা! চলতি লিগে প্রথম হারের তেতো স্বাদ পেল অস্কার ব্রæসনের দল। ময়মনসিংহ স্টেডিয়ামে শুক্রবার কিংসকে ২-১ গোলে হারায় পুলিশ এফসি। একই দিনে ঐতিহ্যবাহী আবাহনীকে ৩-২ ব্যবধানে হারিয়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী। অপর ম্যাচে কিংস অ্যারেনায় শেখ জামাল ধানমÐি ক্লাব ও শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মধ্যের ম্যাচটি হয়েছে গোলশূন্য ড্র। অবশ্য হারলেও শিরোপা ধরে রাখার পথেই আছে কিংস; ১৫ ম্যাচে ৪০ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে তারা। ৩০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা মোটামুটি নিশ্চতই আবাহনীর। ২২ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় শেখ রাসেল, চতুর্থ স্থানে শেখ জামাল আছে। শেখ রাসেল কম খেলেছে এক ম্যাচ।
মুরিওর ঝলকে এগিয়ে পুলিশ
প্রথমার্ধে কিংসকে দেখা গেল না চেনা চেহারায়। তাদের আক্রমণ ছিল না তেমন ধারাল। রক্ষণও রাখতে পারেনি জমাট। আগের ম্যাচে ফেডারেশন কাপে মোহামেডানের কাছে ২-১ গোলে হেরে যাওয়া ম্যাচের মতোই নিষ্প্রভ ছিল তারা। চতুর্দশ মিনিটে পুলিশের এডুয়ার্দ মুরিওর কোনাকুনি শট যায় দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে। ২৩তম মিনিটে কিংসের ইয়াসিন আরাফাতের হেড হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। তিন মিনিট পর বক্সে ঢুকে ভালো অবস্থান থাকলেও ইয়াসিনের কোনাকুনি শট যায় দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে। ৩২তম মিনিটে ড্রিবলিং করতে করতে একক প্রচেষ্টায় এগিয়ে যান মুরিও। একাধিক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বাঁ পায়ের নিখুঁত শটে জাল খুঁজে নেন কলম্বিয়ার এই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার। আনিসুর রহমান জিকো কোনো প্রতিরোধই পড়তে পারেননি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দামাশেনোর পাসে দোরিয়েলতনের শট অল্পের জন্য হয় লক্ষ্যভ্রষ্ট। বিরতির আগে সমতায় ফেরার সেরা সুযোগটি নষ্ট হয় কিংসের।
রাকিবের গোলে কিংসের স্বস্তি
শুরুর বিবর্ণতা ঝেড়ে ফেলে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে কিংস। স্বস্তির হাসি ফেরে কোচ অস্কার ব্রæসনের মুখে। রবসন দি সিলভা রবিনিয়ার দারুণ থ্রু পাস ধরে কোনাকুনি শটে জাল খুঁজে নেন রাকিব হোসেন। একটু পর এগিয়েও যেতে পারতো কিংস। কিন্তু দোরিয়েলতনের কাট ব্যাকে রবিনিয়োর শট পুলিশের ডিফেন্ডারের পায়ে লেগে বাইরে যায়। এরপর একের পর আক্রমণে পুলিশকে কাঁপিয়ে দিতে থাকে কিংস। কিন্তু পোস্টের নিচে নেহাল হোসেন ছিলেন পাহাড়সমান দৃঢ়তা নিয়ে। ৫১তম মিনিটে দোরিয়েলতনের শট লক্ষ্যেই ছিল; কোনোমতে নেহাল টোকা দিতে সক্ষম হন, বল চলে যায় দূরের পোস্ট দিয়ে বাইরে। একটু পর দামাশেনোর শটও বøক করেন তিনি। ৫৯তম মিনিটে দোরিয়েলতনের ফিরতি পাসে রবিনিয়োর ভলি আটকান গোলরক্ষক।
আবারও মুরিওর গোল
কোণঠাসা পুলিশ আড়মোড় ভেঙে ফের মুরিওর হাত ধরেই জেগে ওঠে ৬২তম মিনিটে। এই গোলে আবারও ফুটে ওঠে কিংসের রক্ষণের দুর্বলতা। লেয়ান্দ্রো আম্বুইয়ার পাস ধরে একক প্রচেষ্টায় বল নিয়ে বক্সে ঢুকে পড়েন মুরিও। রিমন হোসেনকে দারুণ ডজে ছিটকে দিয়ে বাঁ পায়ের শটে দলকে ফের এগিয়ে নেন কলম্বিয়ার এই ফরোয়ার্ড। নেহালের চোটে ৬৫তম মিনিটে পোস্ট সামলাতে নামেন তুষার হাসান। দ্বিতীয়ার্ধের যোগ করা সময়ে দামাশেনোর শট আটকে দলকে জয়ের পথে রাখেন তিনি। এরপর শেষের বাঁশি বাজতেই অবিশ্বাস্য এক জয়ের আনন্দে মেতে ওঠে পুলিশ এফসি।
মুন্সিগঞ্জে ডুবল আবাহনীও
মুন্সিগঞ্জের শহীদ বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লে. মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে শুক্রবার চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ৩-২ গোলে হেরেছে আবাহনী। সপ্তম মিনিটে বক্সে জটলার ভেতর থেকে টোকায় চট্টগ্রাম আবাহনীকে এগিয়ে নেন নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড ডেভিড ওজুকু। অষ্টাদশ মিনিটে দেনিয়েল কলিনদ্রেসের কর্নারে হেডে সমতা ফেরান ইউসুফ মোহাম্মদ। ৩৫তম মিনিটে ফ্রি কিকে হেড করে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ফের এগিয়ে নেন ইকবাল হোসেন। পাঁচ মিনিট পর সতীর্থের লং পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে পোস্ট ছেড়ে বেরিয়ে আসা গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে ফাঁকা পোস্টে বল জড়ান ওজুকু। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় বন্দরনগরীর দলটির মুঠোয়। ৬৪তম মিনিটে কর্নারের পর বক্সের ভেতরে বল পেয়ে যান ইউসুফ। ঠাÐা মাথায় জোরাল শটে লক্ষ্যভেদ করেন মিশরীয় ডিফেন্ডার ইউসুফ। তাতে আবাহনীর ঘুরে দাঁড়ানোর পালে হাওয়া লাগে কিছুটা, যদিও হয়নি শেষ রক্ষা।