এফএনএস : লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়ছে দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী। প্রতি বছর ঝরে পড়ছে গড়ে ২ লাখ শিক্ষার্থী। যা খুবই উদ্বেগজনক। মূলত বাল্যবিবাহ এবং পরিবারের দারিদ্র্যতার কারণেই স্কুল—কলেজ পার হওয়ার আগেই শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। গত সাত বছরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী কমেছে ১৪ লাখ। বিগত ২০১৬ সালে পঞ্চম শ্রেণি শেষ করে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও ইবতেদায়ী পরীক্ষায় ২৮ লাখ ২ হাজার ৭১৫ জন শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়েছিল। চলতি বছরে তাদের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় বসার কথা ছিলো। কিন্তু এবারের এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষায় সারা দেশে ১৪ লাখ ৫০ হাজার ৭৯০ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। আর গত সাত বছরের শ্রেণি কার্যক্রমে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার স্বাভাবিক পথ থেকে ছিটকে পড়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী। গত বছর মাধ্যমিকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার ছিল প্রায় ৩৩ শতাংশ। শিক্ষাখাত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, মাধ্যমিকের গণ্ডি পেরোতে পারলে উচ্চমাধ্যমিকে গিয়ে ঝরে পড়ার হার কিছুটা কম থাকে। তবে চার বছরের ব্যবধানে উচ্চমাধ্যমিকে ওই হার বেড়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার এখন ২১ শতাংশের বেশি, যা চার বছর আগে ছিল প্রায় ১৮ শতাংশ। বিগত ২০১৫ সালে প্রাথমিক শেষ করা সাড়ে ৩০ লাখ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৬৯ জন অষ্টম শ্রেণি শেষ করে ২০১৮ সালে জেএসসি—জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেয়। তাদের মধ্যে পাশ করে ২২ লাখ ৩০ হাজার ৮২৯ জন। আর অষ্টম শ্রেণির গণ্ডি শেষ করে ২০২২ সালে নবম শ্রেণিতে রেজিস্ট্রেশন করেছিল ২২ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৩ শিক্ষার্থী। ২০২৪ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় (এসএসসি) তাদের বসার কথা ছিল। কিন্তু চলতি বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বসে ১৭ লাখ ১০ হাজার ২৯৬ শিক্ষার্থী। অর্থাৎ মাধ্যমিক পর্যায়ে গত ২ বছরে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৩৭ শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, যা মোট শিক্ষার্থীর ২৩ দশমিক ৮০ শতাংশ। দুই বছরে বিশালসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়াকে শিক্ষাবিদরা উদ্বেগজনক বলছেন । তাদের মতে, প্রাথমিকে ভর্তির হার প্রায় শতভাগ নিশ্চিত করা গেলেও মাধ্যমিকে ঝরে পড়ার হার কোনোভাবেই কমানো যাচ্ছে না। এ জায়গায় সরকারের আরো বেশি মনোযোগী হওয়া জরুরি। যদিও শিক্ষার্থীদের স্কুলমুখী করা ও ধরে রাখার জন্য সরকার প্রতি বছর উপবৃত্তি, বিনা মূল্যে বই, খাবার দেওয়াসহ অন্যান্য খাতে হাজার কোটি টাকা ব্যয় করছে। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন পর্যায়ে এত অধিকসংখ্যক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। সূত্র জানায়, গত মার্চ মাসে বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকস ২০২৩—এর ফলাফল প্রকাশ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। তাতে বলা হয়, গত বছরের ১ জুলাই দেশে ৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী ৬ কোটি ৩৭ লাখ মানুষ ছিলো। এর মধ্যে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশ শিক্ষায় রয়েছে, অর্থাৎ তারা আনুষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ করছে। বাকি ৪০ দশমিক ৭২ শতাংশ বা ২ কোটি ৬২ লাখ শিশু ও তরুণ প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৪০ দশমিক ৯১। মহামারির ঠিক আগে ২০১৯ সালে দেশে আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে না থাকা জনগোষ্ঠীর হার ছিল ২৯ দশমিক ২৭। ওই হিসাবে শিক্ষার বাইরে থাকা জনগোষ্ঠীর হার গত পাঁচ বছরে প্রায় ১১ শতাংশ বেড়েছে। এদিকে এ প্রসঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সিদ্দিক জোবায়ের জানান, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার হার বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা এখান থেকে কওমি মাদ্রাসায় চলে যাচ্ছে। যে শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষাজীবন শুরু করেছিল। তারা একটু বড় হয়েই সাধারণ শিক্ষায় না থেকে মাদ্রাসায় কেন চলে যাচ্ছে তার কারণটা খেঁাজা জরুরি। যারা সাধারণ শিক্ষা দিয়ে অর্থাৎ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষাজীবন প্রবেশ করছে, তারা যেন সেখান (স্কুল—কলেজ) থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারে সেদিকে নজর দিতে হবে। ওই লক্ষ্যে কারণ চিহ্নিত করে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে।