এম আবু ইদ্রিস \ বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সাতক্ষীরা জেলার অর্থনৈতিক মেরুদন্ড মৎস্য ও কৃষি চাষের উপর ভর করে আছে। শহর থেকে প্রত্যন্ত অঞ্চল মৎস্য ও কৃষি চাষের সাথে নিবিড় ভাবে বিস্তৃত। জেলার অধিকাংশ পরিবার মৎস্য ও কৃষি ক্ষেত্রে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এ অঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার ক্ষেত্রে এ দুই সেক্টর অনবদ্য, অনন্য ভূমিকা পালন করছে। জাতীয় পর্যায়ে চিংড়ি রপ্তানিতে এ জেলা থেকে হচ্ছে প্রায় ৭০ শতাংশ। চাষাবাদে উৎপন্ন খাদ্যশস্য আন্তেঃ দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে ও বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। পন্যের গুণগত মান ও স্বাদ ভালো হওয়ায় দেশ ও দেশের বাইরে চাহিদার পরিমাণ প্রচুর। ফলে কৃষক ও মধ্যসত্তা ভোগী ব্যবসায়ীরা এসব পণ্য বেচা কেনার মধ্য দিয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছে। এরই সাথে জেলার অর্থনৈতিক চালিকা শক্তি ত্বরানীত হচ্ছে। জেলার মোট ভূমির এক তৃতীয়াংশ বাদে বাকি অংশ মৎস্য ও কৃষি বিষয়ের সাথে জড়িত। কিন্তু আবাদি অনাবাদি ভূমি আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত পরিকল্পিত উপায়ে ব্যবহার না হওয়াই আশানুরুপ কাঙ্খিত ফসল উৎপাদিত হচ্ছে না। জেলার প্রত্যেকটি উপজেলার ভূমি বিশেষ গুণে গুণান্বিত সুউর্বর শক্তি সম্পন্ন। ভূমি ব্যবহার যথার্থ পরিকল্পনা অনুযায়ী হলে এ জেলার খাদ্যশস্য ও অন্যান্য ফসল মোট উৎপাদনের উপর আরো বহু গুনে বেড়ে যাবে। এখানকার ভূমিতে তাল, নারকেল, আম, বরুই সহ বসতভিটার আশপাশে সৌন্দর্য বর্ধক অন্যান্য গাছ ও ধান, পান, আখ, তরমুজ ইত্যাদি ফসল অপরিকল্পিত অগোছালো, এলোমেলো ভাবে চাষাবাদ করা হচ্ছে। লবন পানির মৎস্য ঘের ও মিঠা পানি মৎস্য চাষের অবস্থা একই। এমন চিত্র সাতক্ষীরার সর্বত্র বিদ্যমান। সরকারি কর্মযজ্ঞের বাইরে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের ভাবার অবকাশ কোথায়? বিষয়টি মনোজগতের চিন্তা চেতনা কেন্দি্রক শুধুমাত্র সুহৃদয়বান চৌকস কর্মকর্তা দ্বারা এমন উদ্ভাবনীমূলক চিন্তা চেতনা করা সম্ভব। মানুষ বয়সের ফ্রেমে নয় কর্মের মধ্যেই বাঁচে। পৃথিবীর বুকে মানুষ যত যশ, খ্যাতি, সুনাম অর্জন করেছে তা তার কর্মের মাধ্যমেই। কর্মের আলোক দ্যুতির উজ্জ্বল বিচ্ছুরন তথা প্রতিফলনের মাধ্যমে অনেকেই ইতিহাসের পাতায় অমলিন। চেয়ার কেন্দি্রক কর্মক্ষমতার বাইরে যেয়ে মাতৃভূমির প্রতি অকৃত্রিম ভালবাসা, সমাজ ও সমাজের মানুষেমানুষের প্রতি সহমর্মিতা, সহানুভুতি থাকলে সে আন্তরিকতার পরশকাঠি দ্বারা সৃষ্ট কর্মের ফল সমাজের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে দৃশ্যমান তথা স্বস্ফূর্ত ভাবে প্রস্ফুটিত হয়। ক্ষেত্রগুলো রংধনুর সাতরঙা রঙে রঙিন পরশে ঝলমল করে ওঠে। সচেতনরাই অজ্ঞ, অচেতনদের পথ প্রদর্শক হিসেবে বিবেচিত হতে হবে। সুজনকেই দুর্জনকে বধ করতে হবে। না হলে সমাজ বিনষ্ট হবে। শিক্ষিত সৎ গুণীজন, সুধীজন দ্বারাই শিক্ষিত শয়তানদের সকল ষড়যন্ত্রের নীল নকশা কে নস্যাৎ করে সমাজ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। ঠিক এক্ষেত্রেও জেলার কৃষি ব্যবস্থাকে প্রাণ চাঞ্চল্য করে তুলতে হলে অজ্ঞ, অসচেতন ও কুসংস্কারের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে সংশ্লিষ্ট কৃষি ও মৎস প্রশাসন কে এগিয়ে আসতে হবে মৎস্য ও কৃষি চাষের উপর ভর করে থাকা জাতীয় অর্থনীতির মেরুদন্ডকে আরো শক্তিশালী করতে হলে গতানুগতিক কৃষি ব্যবস্থাকে বাদ দিয়ে কৃষি ক্ষেত্রকে আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত, পরিকল্পিত কৃষি ব্যবস্থাপনার আওতায় আনতে হবে। তাহলে শস্য পণ্যের সোনালী ভান্ডার থেকে আমরা অধিক থেকে অধিকতর খাদ্যশস্য সহ অন্যান শস্য পণ্য উৎপাদন করতে পারব। কৃষি ক্ষেত্র হবে বিপ্লবময় উৎপাদন্মুখী। জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদারিত্ব পালন করা সাতক্ষীরার কৃষি ব্যবস্থাকে এগিয়ে নিতে হলে প্রথমেই কৃষকদেরকে সচেতন করতে হবে। এজন্য জেলার সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে, দিতে হবে দায়িত্বশীলতার পরিচয়।