বৃহস্পতিবার, ০২ জানুয়ারী ২০২৫, ১১:৩১ অপরাহ্ন

শহীদ মিনারে মাজহারুল আনোয়ারকে শেষ শ্রদ্ধা

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২

এফএনএস: স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত কিংবদন্তী গীতিকবি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের প্রতি জাতীর শ্রদ্ধা জানাতে তার লাশ শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। এ সময় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে তাকে একবার শ্রদ্ধা জানাতে। গতকাল সোমবার সকাল ১০টায় তার লাশ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সম্মাননা গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পরে বেলা ১১টার দিকে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সর্ব সাধারণের জন্য শ্রদ্ধা জানাতে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। প্রিয় ব্যক্তিকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নামে। সাধারণ মানুষ ব্যক্তিগতভাবে শ্রদ্ধা জানান। সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। শ্রদ্ধা জানাতে আসেন দেশ বরেণ্য শিল্পীরা। শ্রদ্ধা জানাতে এসে কান্নায় ভেঙে পরেন সংগীত শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। এ সময় তিনি বলেন, গাজী ভাইয়ের সঙ্গে আমার সম্পর্ক ছিল অন্য রকম। তার লেখা হাজার হাজার গানের মধ্যে ৬-৭ হাজার গান আমি নিজেই গেয়েছি। আমাদের মধ্যে একটা টিম ওয়ার্কিং ছিল। আমি তার জন্য আল­াহর কাছে জান্নাতের সর্বোচ্চ জায়গা কামনা করি। গাজী মাজহারুল আনোয়ারে মেয়ে দিঠী আনোয়ার বলেন, যারা আমার বাবাকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন, তাদের প্রতি আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইলো। এ সময় তার বাবাকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান তিনি। গত রোববার সকাল ৭টায় রাজধানীর বারিধারায় নিজ বাসায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার, চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক গাজী মাজহারুল আনোয়ার। পরে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়ে, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ১৯৪৩ সালের ২২ ফেব্র“য়ারি কুমিল­ার দাউদকান্দি থানার তালেশ্বর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৪ সালে ২১ বছর বয়সে রেডিও পাকিস্তানে গান লেখা শুরু করেন তিনি। পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের জন্মলগ্ন থেকেই নিয়মিত গান ও নাটক রচনা করেন। গাজী মাজহারুল আনোয়ার প্রথম চলচ্চিত্রের জন্য গান লেখেন ১৯৬৭ সালে। ওই চলচ্চিত্রের নাম ছিল ‘আয়না ও অবশিষ্ট’। ১৯৬৭ সালে চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর থেকে কাহিনী, চিত্রনাট্য, সংলাপ ও গান লেখায়ও দক্ষতা দেখান তিনি। তার পরিচালিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নান্টু ঘটক’ মুক্তি পায় ১৯৮২ সালে। তিনি মোট ৪১টি চলচ্চিত্র পরিচালনা করেছেন। গাজী মাজহারুলের পরিচালিত চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম- ‘শাস্তি’, ‘চোর’, ‘শর্ত’, ‘স্বাধীন’, ‘সমর’, ‘রাগী’, ‘আর্তনাদ’, ‘জীবনের গল্প’, ‘পাষাণের প্রেম’, ‘তপস্যা’, ‘ক্ষুধা’, ‘পরাধীন’, ‘এই যে দুনিয়া’, ‘হৃদয় ভাঙ্গা ঢেউ’। অসংখ্য কালজয়ী গানের রচয়িতা গাজী মাজহারুল আনোয়ার। দীর্ঘ কর্মজীবনে তিনি অসংখ্য শ্রোতাপ্রিয় গান লিখেছেন। ২০ হাজারেরও বেশি গানের রচয়িতা তিনি। ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ ও ‘আছেন আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার’ তার লেখা তুমুল জনপ্রিয় দুটি গান। বিবিসি বাংলার জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ২০টি বাংলা গানের তালিকায় স্থান পেয়েছে তার লেখা তিনটি গান। গাজী মাজহারুল আনোয়ার ‘পীচ ঢালা পথ’, ‘নীল আকাশের নিচে’, ‘দীপ নেভে নাই’, ‘অবুঝ মন’, ‘চাষির মেয়ে’, ‘সূর্যগ্রহণ’, ‘অনন্ত প্রেম’, ‘গোলাপি এখন ট্রেনে’, ‘অশিক্ষিত’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘মহানগর’, ‘নতুন বউ’, ‘নাজমা’, ‘অভিযান’, ‘মা ও ছেলে’, ‘রাজল²ী শ্রীকান্ত’, ‘রাঙা ভাবী’, ‘ছুটির ফাঁদে’, ‘বাবার আদেশ’, ‘নিঃস্বার্থ ভালোবাসা’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে গান লিখেছেন। ২০০২ সালে ‘একুশে পদক’ লাভ করেন গাজী মাজহারুল আনোয়ার। ২০২১ সালে তিনি সংস্কৃতিতে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ অর্জন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য গাজী মাজহারুল স্বাধীন দেশের সর্বপ্রথম পুরস্কার ‘বাংলাদেশ প্রেসিডেন্ট গোল্ড মেডেল অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেন। এছাড়াও গাজী মাজহারুল আনোয়ার পাঁচবার ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’, একাধিকবার ‘বাচসাস পুরস্কার’, ‘বিজেএমই অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com