কালিগঞ্জ প্রতিনিধি \ কালিগঞ্জে ৪০ বছরের ভোগ দখলীয় সম্পত্তির বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে আয়োজিত শালিশ বৈঠকে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। (১২ এপ্রিল) শনিবার সন্ধ্যায় উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের শ্রীকলা মাধ্যমিক বিদ্যালয় শালিশ বৈঠক চলাকালীন এ হামলায় গুরুতর আহত হয়েছেন হালিমা খাতুন (৪৫), মনিরুল ইসলাম (৪৫) ও আব্দুল আজিজ (৪০)। আহতদের মধ্যে হালিমা খাতুনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে চলমান জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে শ্রীকলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে শালিশের আয়োজন করা হয়। বিরোধের মূল কেন্দ্র শ্রীকলা মৌজার বি.এস ১৯৮, ৮৯৩ ও ৮৮৬ দাগে প্রায় ৭৮ শতক জমি। এই সম্পত্তির একটি অংশে (প্রায় ০.০৯০৩ শতক) আসাদুজ্জামান হাসা ও তার পরিবার বিগত ৫০ বছর ধরে বসবাস করে আসছেন। তবে চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি সকালে হঠাৎ করেই আব্দুর রহিম, আব্দুল করিম, মোকছেদুর রহমান ও মমতাজুর রহমান গং সম্পত্তিটি জোরপূর্বক দখলের চেষ্টা চালায় এবং আসাদুজ্জামানের উঠোন ঘিরে খোঁটা মারেন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আসাদুজ্জামানের ছেলে আমির হামজা ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৫ ধারা মোতাবেক আদালতের আশ্রয় নেন এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বসবাসের দাবি জানান। আদালত দুই পক্ষের দাবি যাচাইয়ে জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন। এই তদন্ত কার্যক্রম চলাকালে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিরোধ মীমাংসার উদ্দেশ্যে আয়োজিত শালিশের শেষ মুহূর্তে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। অভিযুক্ত আব্দুল করিমের ছেলে ইমরান হোসেন কটূক্তি ও উত্তেজনাকর আচরণ শুরু করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এরপর পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ওত পেতে থাকা আব্দুর রহিমের ছেলে ইয়াসিন আলী এবং ফরিদ হোসেন তাদের সঙ্গীয় সন্ত্রাসীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র দা, সাবল ও লাঠি দিয়ে উপস্থিত ব্যক্তিদের উপর হামলা চালায়। হামলায় হালিমা খাতুনের মাথায়, মনিরুল ইসলামের হাতে এবং আব্দুল আজিজের গলায় দায়ের কোপ লাগে। এ সময় গুরুতর আহত অবস্থায় স্থানীয় গ্রামবাসী তাদেরকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। স্থানীয় বাসিন্দা মোমিন আলী বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে একত্রে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছি। হামলাকারীরা এখন ৪০ বছরের ভোগ দখলীয় সম্পত্তি জোরপূর্বক দখলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। এটি ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত হামলা। শালিশকারি আব্দুল আজিজ জানান, শালিশের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ করে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। আমাদের উপর দা, সাবল ও লাঠি দিয়ে হামলা চালানো হয়। এখন আমরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্থানীয় ইউপি সদস্য মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে চেষ্টা করেছি বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করতে। কিন্তু তারা যেভাবে পরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়েছে, সেটা অত্যন্ত দুঃখজনক। থানার অফিসার ইনচার্জ হাফিজুর রহমান ঘটনা সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মারামারির ঘটনায় অভিযোগ পেয়েছি। তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।