মনিরুজ্জামান মনি, কালিগঞ্জ ব্যাুরো: কালিগঞ্জের কাজী আলাউদ্দীন কলেজর সহকারী অধ্যাপক ( ইংরেজি) রাম প্রসাদ ঘোষ মাদার তেরেসা গোল্ডল এওয়ার্ডে ভূষিত হয়েছে। জীবন যুদ্ধের এক সফল মানুষ রাম প্রসাদ ঘোষ ১৯৭৭ সালে ৫ আগস্ট কালিগঞ্জ আমিয়ান গ্রামের জন্ম গ্রহন করেন।। পিতা : কৃষ্ণ পদ ঘোষ ও মাতা : বিজয় লক্ষ্মী ঘোষের, ৫ পুত্র ও কন্যার মধ্যে রাম প্রসাদ চতুর্থ। দেড় বছর বয়সে ভয়ংকর পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসেন। অচল হয়ে যায় একটি পা। শৈশব থেকেই শুরু হয় ক্রাচে ভর দিয়ে পথ চলা। বড় ভাই শংকর প্রসাদের কাঁধে চড়ে প্রথম স্কুলে যাওয়া। বাথুয়াডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জীবনের প্রথম পরীক্ষাতেই প্রথম স্থান অধিকার করেন। শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়। বাবার স্কুল কালিগঞ্জ উপজেলার ভাড়াশিমলা কারবালা মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৯৯৩ সালে এসএসসি পাশ করেন। কালিগঞ্জ মহাবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৫ সালে এইচএসসি পাশ করেন। ক্রাচে ভর দিয়েই এগিয়ে যেতে থাকেন জীবনের লক্ষ্যে। বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় খুলনা ব্রজলাল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ১৯৯৯ সালে ইংরেজি সাহিত্যে স্নাতক (সম্মান) এবং ২০০০ সালে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। শিক্ষকতা : ছাত্রছাত্রী পড়ানো তার কাছে একটা প্রিয় ও মজার বিষয়। অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন নিজের ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর মাধ্যমেই শিক্ষাকতায় হাতেখড়ি। অনার্স পড়াকালীন ক্রাচে ভর দিয়েই তিনি বিভিন্ন কোচিং সেন্টারে পড়িয়েছেন। এম. এ. পাসের আগেই তিনি সাতক্ষীরা জেলার কালিগঞ্জ থানার কাজী আলাউদ্দীন ডিগ্রী কলেজে ক্লাস নিতে শুরু করেন। ২০০৩ সালে তিনি প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। শুরু হয় আনুষ্ঠানিক শিক্ষাকতা জীবন। সামাজিক কাজ: বিভিন্ন এলাকার গরীব ও অসহায় ছাত্রছাত্রীদের বিনাটাকায় বা নামমাত্র টাকায় পড়িয়ে চলেছেন। বাল্যবিবাহ, যৌতুক প্রথা ও বিভিন্ন সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধে তিনি বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। বুয়েট, মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সহ দেশ – বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে আছে তাঁর হাজারো ছাত্রছাত্রী। সবার কাছে তিনি প্রিয় রাম প্রসাদ স্যার। ২০০৯ সালে নিজের বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন একটি লাইব্রেরি। নাম ” স্মৃতি অনির্বাণ গ্রন্থালয় “। সংগ্রহশালায় আছে মূল্যবান অসংখ্য বই। কিছু বই স্যারের নিজের কেনা আর কিছু বই ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পাওয়া। স্যার বলেন– “একদিন এই লাইব্রেরি অনেক বড়ো হবে। মানুষ আমাকে এই লাইব্রেরির মাধ্যমেই স্মরণ রাখবে।” তার লেখনীতেই আমরা দেখি ইংরেজি সাহিত্েেযর শিক্ষক হয়েও বাংলা ভাষার প্রতি রয়েছে তাঁর অফুরন্ত প্রেম। ছাত্র জীবন থেকেই লেখালেখিতে স্যারের হাতেখড়ি। একুশে বই মেলায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে তার লেখা কবিতার বই। সমাজের যে কোন অনিয়ম, অত্যাচার, অন্যায় ও সামাজিক অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে কলম ধরতে তিনি পছন্দ করেন। স্যারের লেখা কাব্যগ্রন্থের মধ্যে জল নুপুর, জলঙ্গী(ভারত), সন্ধান, স্বপ্ন রাঙা শশি ও জ্যোৎস্না মোহন পদ্ম বিশেষ ভাবে উলেখযোগ্য। বাংলা সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ২০১৭ সালে তিনি অভিযাত্রীক সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংসদ, রংপুর কতৃক ” বিশিষ্ট কবি” সম্মাননায় ভূষিত হন। পারিবারিক জীবন : প্রায় ৪০ বছর ধরে চলছে ক্রাচে ভর দিয়ে চলা স্যারের জীবন যুদ্ধ। অনেক মানুষ তাঁর এই জীবন সংগ্রামে সঙ্গী হয়েছেন। তাদেরই একজন হলেন সম্পা মলিক। অনার্স পড়াকালীন পরিচয় হয় দু’জনের। গড়ে ওঠে প্রেমের সম্পর্ক। মধুর সম্পর্কের সফল পরিনতি হয় পবিত্র বিবাহ বন্ধনে। অন্তিকা আর অর্জন তাদের দুই সন্তান। মা- বাবা সহ পরিবারের সবাইকে নিয়ে স্যার ভিষণ সুখী। এখন জাতীয় পর্যায়ে ” মাদার তেরেসা গোল্ডেন এওয়ার্ড ২০২২ ” প্রাপ্তি তাঁর জীবনের সেরা অর্জন।