শনিবার, ১১ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন

শিক্ষার্থীর মৃত্যু ঘিরে চীনে সহিংস বিক্ষোভ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১১ জানুয়ারী, ২০২৫

এফএনএস বিদেশ : চীনের উত্তর—পশ্চিমের একটি শহরে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় দেশটিতে সহিংস বিক্ষোভের সূত্রপাত হয়েছে। যাচাইকৃত ভিডিওর মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিবিসি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করা ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, শানসি প্রদেশের পুচেং শহরে কিছু বিক্ষোভকারী পুলিশকে লক্ষ্য করে নানা কিছু ছুড়ে মারছে। এ সময় অফিসারদের কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে মারধর করতেও দেখা যায়। কর্তৃপক্ষ বলছে, ওই কিশোর গত ২ জানুয়ারি তার স্কুলের ছাত্রাবাসে এক দুর্ঘটনায় মারা গেছে। তবে তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অভিযোগ উঠতে থাকে যে, ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। ওই কিশোরের মৃত্যুর পরপরই বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে এবং কয়েকদিন ধরে তা চলতে থাকে, তবে এই সপ্তাহের শুরুতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে মনে হচ্ছে। বিবিসি এরপর থেকে পুচেং—এ আর কোনো বিক্ষোভের প্রমাণ পায়নি। চীনের জন্য প্রকাশ্যে বিক্ষোভ নতুন কিছু নয়। তবে ২০২২ সালে কোভিড নীতির বিরুদ্ধে হওয়া হোয়াইট পেপার বিক্ষোভের পর থেকে কর্তৃপক্ষ এ ধরনের বিক্ষোভের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। কারণ সেগুলোতে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি এবং প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং—এর সমালোচনা করতে দেখা গিয়েছিল, যা দেশটিতে বিরল। পুচেং—এর বিক্ষোভ নিয়ে নীরব রয়েছে দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম। কর্তৃপক্ষের কাছে সংবেদনশীল মনে হওয়া অন্য যেকোনো ঘটনার মতোই এবারের বিক্ষোভেরও কোনো ভিডিও ক্লিপ বা এ নিয়ে দেওয়া পোস্ট চীনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অনেকাংশে সেন্সর করা হয়েছে। তবে চীন থেকে ফাঁস হওয়া বেশ কিছু ভিডিও এক্সে (আগের টুইটার) পোস্ট করা হয়েছে। এই ভিডিওগুলো পুচেং ভোকেশনাল এডুকেশন সেন্টারে ধারণ করার সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি। তবে বিক্ষোভ শুরু হবার আগের কোনো সংস্করণ অনলাইনে পাওয়া যায়নি। বিবিসির পক্ষ থেকে পুচেং প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে প্রচার বিভাগের একজন প্রতিনিধি বিক্ষোভের বিষয়টি নাকচ করে দেন। গণমাধ্যমের সঙ্গে যোগাযোগের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার পক্ষ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। এই সপ্তাহের শুরুতে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওই কিশোরের পদবি ছিল ড্যাং। তিনি পুচেং—এর এডুকেশন সেন্টারের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মৃত্যুর আগে রাতের বেলা শিক্ষার্থীদের আড্ডার শব্দে ড্যাংয়ের ঘুম ভেঙে যায়। এনিয়ে এক শিক্ষার্থীর সঙ্গে তর্কে জড়িয়ে পড়লে স্কুলের এক কর্মকর্তা সেটি মীমাংসা করে দেন। সেই রাতেই ছাত্রাবাসের নিচে এক শিক্ষার্থী ড্যাংয়ের মৃতদেহ দেখতে পায়। বিবৃতিতে একে স্কুলের ছাদ থেকে পড়ে যাওয়ায় ঘটা দুর্ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। এতে আরও বলা হয়, পুলিশ তদন্ত এবং ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করে বর্তমানে ঘটনাটিকে ফৌজদারি মামলার বাইরে রেখেছে। তবে অনলাইনে অভিযোগ উঠছে যে ঘটনাটির পেছনে আরও ঘটনা আছে এবং কর্তৃপক্ষ সত্য গোপন করছে। তথ্য—প্রমাণহীন একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, ড্যাং আত্মহত্যা করেছে কারণ তার সঙ্গে ঝগড়া করা ছেলেটি তাকে হয়রানি করেছিল। সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ছাড়া ছড়িয়ে পড়া তার পরিবারের কিছু মন্তব্যে দাবি করা হয়েছে যে ড্যাংয়ের শরীরে পাওয়া আঘাতের চিহ্নের সঙ্গে কর্তৃপক্ষের বর্ণিত ঘটনার মিল নেই আর তাদেরকে অনেকক্ষণ তার মৃতদেহ পরীক্ষা করতে দেয়া হয়নি। এসব অভিযোগ পুচেং—এর অনেক মানুষকে ক্ষুব্ধ করে, যা অন্তত কয়েকশো মানুষকে নিয়ে হওয়া বিক্ষোভের সূত্রপাত ঘটায়। সা¤প্রতিক বছরগুলোতে চীনের জন্য বুলিং একটি সংবেদনশীল বিষয় হয়ে উঠেছে। এর আগেও ছাত্রদের মৃত্যুর কিছু ঘটনা বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। গত মাসে চীনের একটি আদালত সহপাঠীকে হত্যার দায়ে দুই কিশোরকে দীর্ঘ কারাদণ্ড দিয়েছে। সোমবার এক্স (পূর্বে টুইটার) এ পোস্ট করা পুচেং ভোকেশনাল এডুকেশন সেন্টারের আরও কিছু ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেছে বিবিসি। ভিডিওগুলোতে সাধারণ মানুষকে ওই কিশোরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে দেখা যায়। তারা স্কুলের মূল ফটকে ফুল এবং অন্যান্য অর্ঘ্য রেখে এবং স্কুল ভবনের ছাদ থেকে কাগজের টুকরো ফেলে রীতি অনুযায়ী শোক পালন করে। অন্য ভিডিওগুলোতে দেখা গেছে, বিক্ষোভকারীরা একটি ভবনে ঢুকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে এবং আমাদের সত্য বলো বলে চিৎকার করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই তরুণ ছিল। যাচাই করা আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, একজন স্কুল কর্মকর্তা চিৎকার করে বিক্ষোভকারীদের মুখোমুখি হলে তারা তাকে ধাক্কা দিয়ে ঘুরিয়ে দিচ্ছে। অন্য ভিডিওতে স্কুল প্রাঙ্গণের ধ্বংসপ্রাপ্ত অফিস এবং বিক্ষোভকারীদের স্কুলের প্রবেশপথে স্থাপিত ব্যারিকেড ভেঙে ফেলার দৃশ্য দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, পিছু হটা পুলিশদের দিকে বিক্ষোভকারীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের জিনিসগুলো ছুড়ে মারছে আর পুলিশ কর্মকর্তারা কিছু বিক্ষোভকারীকে আটকের পর লাঠি দিয়ে মারধর করছে। এসময় কয়েকজন বিক্ষোভকারীর মাথা এবং মুখ থেকে রক্ত ঝরতে দেখা যায়। এরপর কী ঘটেছিল সে সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যাচ্ছে, তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, সা¤প্রতিক দিনগুলোতে পুচেং—এ পুলিশের উপস্থিতি অনেক বেশি বেড়েছে এবং সেখানে আর কোনো বিক্ষোভের খবর পাওয়া যায়নি। তথ্যসূত্র: বিবিসি

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com