এফএনএস : রাজনৈতিক তকমায় বিগত সরকারের আমলে বিপুলসংখ্যক সরকারি কর্মকর্তা নানাভাবে বঞ্চিত ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ওই কর্মকর্তাদের মূল্যায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। ওই লক্ষ্যে সরকার রিভিউ কমিটি গঠন করেছে। ওই কমিটি বিগত সময়ে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের আর্থিক সুবিধাসহ ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিতে সুপারিশ করবে। বিগত ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট পর্যন্ত যেসব কর্মকর্তা পদোন্নতিসহ নানাভাবে হয়রানি ও বঞ্চনার শিকার হয়ে অবসরে গেছেন, তাদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে রিভিউ কমিটি সুপারিশ করবে। খুব শিগগিরই রিভিউ ওই কমিটি এসংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেবে বলে জানা যায়। জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রিভিউ কমিটি ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে অবসরে যাওয়া অন্তত একশ জন কর্মকর্তাকে সচিব, আর প্রায় এক হাজার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত সচিব এবং চারশ কর্মকর্তাকে যুগ্ম—সচিব পদমর্যাদা দেয়ার সুপারিশ করার বিবেচনা করছে। প্রায় সাড়ে চার হাজার আবেদন জমা পড়লেও কমিটির বিবেচনায় রয়েছে দেড় হাজার আবেদন। আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ওসব কর্মকর্তা আর্থিক সুবিধাও পাবেন। ওসব কর্মকর্তাদের অনেকেই বছরের পর বছর ওএসডি (বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) থেকে মনঃকষ্ট নিয়ে অবসরে গেছেন। যোগ্যতা থাকার পরও বছরের পর বছর পদোন্নতিবঞ্চিত হয়ে প্রশাসনে জুনিয়রদের অধীনে কাজ করেছেন। এমনকি রাজনৈতিক মতভিন্নতার কারণে তাদের বিভাগীয় মামলা হজমও করতে হয়েছে। সূত্র জানায়, রিভিউ কমিটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করতে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) মতো করে বঞ্চিত ও ক্ষতিগ্রস্তদের বিষয়ে অনুসন্ধান করেছে। তাদের এজেন্সি প্রতিবেদন, বার্ষিক গোপনীয় অনুবেদন (এসিআর), এসিআরে প্রাপ্ত নম্বর, সার্ভিস রেকর্ড, শিক্ষাগত যোগ্যতা, বিভাগীয় মামলা, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলা, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালের (এটি) মামলা এবং শৃঙ্খলার মামলা আছে কি না তা যাচাই করা হয়েছে। এসএসবির মতো সব যাচাই—বাছাই করেই তাদের পদোন্নতির সুপারিশ করা হচ্ছে। সূত্র আরো জানায়, রিভিউ কমিটির প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে যাবে। সেখান থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। সুপারিশের ভিত্তিতে সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে যারা অবসরে গেছেন, তাদের কাউকে সচিব, অতিরিক্ত সচিব, যুগ্ম সচিব বা উপসচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে আদেশ জারি করা হবে। এসব আদেশের ভিত্তিতে দেনা—পাওনা এজি অফিস থেকে পরিশোধ করা হবে। কেউ কেউ কোটি টাকার ওপরও আর্থিক ক্ষতিপূরণ পাবেন। বঞ্চিতদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে আর্থিক সুবিধা দিতে সরকারের অতিরিক্ত অন্তত ১০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এদিকে বিগত সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আসতে শুরু করে। বিগত সরকারের আমলে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করে অবসরে থাকা বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের প্রশাসনে নিয়োগ দেয়া হয়। প্রশাসনে কর্মরত পদোন্নতিবঞ্চিত প্রায় ৭০০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। এরপর অতীতে যারা পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন এবং বছরের পর বছর ওএসডি ছিলেন তাদেরও ক্ষতিপূরণের দাবি ওঠে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত সেপ্টেম্বর সরকারি চাকরিতে বঞ্চিতদের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়। সাবেক অর্থসচিব জাকির আহমেদ খানকে প্রধান করে গঠন করা ওই কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন মন্ত্রিপরিষদ, অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন ও আইন মন্ত্রণালয়ের চার প্রতিনিধি। তিন মাসের মধ্যে কমিটিকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে রিভিউ কমিটি সংশ্লিষ্ট মতে, সরকারের বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে কমিটি প্রতিবেদন জমা দেবে। রাজনৈতিক কারণে যাদের বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছিল, যারা দীর্ঘদিন ওএসডি থেকে অবসরে গেছেন, বছরের পর বছর গুরুত্বহীন পদে ফেলে রাখা হয়েছিল, ছোট অপরাধে বিভাগীয় মামলা দেয়া হয়েছিল, কমিটি তাদের গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করবে।