সোহরাব হোসেন শ্যামনগর মুন্সীগঞ্জ থেকে \ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য সাতক্ষীরা রেঞ্জ পশ্চিম বন বিভাগের আওতাধীন কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকো—ট্যুরিজম কেন্দ্র এখন পর্যটকের পদচারণায় মুখর। ইট—পাথরের নগর জীবনের ক্লান্তি দূর করে মানসিক প্রশান্তির জন্য এই সাগরপাড়ে প্রকৃতির সবুজ দেয়াল আর পাখ—পাখালির করলবে মুখরিত সুন্দনবনে দলবেঁধে দেশের দূর—দূরান্ত থেকে আসছেন পর্যটকরা। ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়ক পথে সুন্দরবন’ এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। সোমবার কলাগাছিয়া টহল ফাঁড়ি ও ইকো—ট্যুরিজম কেন্দে্র গিয়ে দেখা মিলেছে এমনই নান্দনিক সৌন্দর্যের। সড়ক পথে সাতক্ষীরার মুন্সীগঞ্জ হয়ে বুড়িগোয়ালিনী খেয়াঘাট থেকে কলাগাছিয়া ইকো—ট্যুরিজমে গেলে একঝাঁক বানর ছুটে এসে স্বাগত জানায় পর্যটকদের। এরপর দেখা যায়, কিছু হরিণ আশপাশেই ঘুরাঘুরি করছে। এছাড়া আছে শ্বাসমূলে ভরা গেওয়া, গরান, বাইন, পশুর, গোলপাতা, হোগলা পাতাসহ মোট ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ। রয়েছে কুমির, মদন টাকসহ হাজারো প্রাণবৈচিত্র্য। শিশু—কিশোর যুব বৃদ্ধসহ নানা বয়সী মানুষ এসেছেন প্রকৃতির কোলে প্রশান্তির পরশ পাওয়ার আশায়। অবশেষে প্রকৃতির অপরূপ রূপে মুগ্ধ পর্যটকদের যেন ‘শান্ত হইল ব্যথা।’ সুন্দরবন ভ্রমণ উপভোগ করতে শীতের শুরু থেকে (নভেম্বর—জানুয়ারি) পর্যন্ত পর্যটকের পদচারণায় মুখর সুন্দরবনের এই নয়নাভিরাম ভ্রমণ স্পট কলাগাছিয়া ইকো—ট্যুরিজম কেন্দ্র। সুন্দরবন সংলগ্ন জেলা সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটক আসছেন এখানে। মেতে উঠছে সুন্দরবনের নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে। ইকো—ট্যুরিজম সেন্টারের ওয়াচ টাওয়ারে উঠে যতদূর চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। এক কথায় সবুজের সমরোহ। প্রকৃতির হাতছানি। কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার ভ্রমণে এসে পর্যটকরা কেউ বানরের সঙ্গে খেলায় মত্ত, কেউবা ছবি কিংবা সেলফি তুলেই হারিয়ে যেতে চান প্রকৃতির সৌন্দর্যের মাঝে। সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার হলো, মায়াবী শিংওয়ালা সব হরিণ আপনার পিছু পিছু ঘুরতে থাকে। যদি হাতে মুড়ি বা চিপস জাতীয় খাবার থাকে সেগুলো খাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে যায় হরিণগুলো। লোকালয় থেকে বেশ দূরে বনের ভেতরে এই ট্রেইলগুলো দিয়েই পর্যটকরা পায়ে হেঁটে যায়। এখানে বনজ বৃক্ষের সারিতে নিস্তব্ধতায় ছেয়ে থাকে চারপাশ। তবে সব নীরবতা ভেঙে বানরের ডাক আর ভেঙচিকাটা ভয়ের সঞ্চার করে।ট্রেইলের আশপাশে এত ঘন বৃক্ষ যে, দৃষ্টিসীমা নেমে আসে কয়েক গজের মধ্যে। আর সঙ্গে তো বাঘের ভয় আছেই। সে এক অন্যরকম অনুভূতি। ভয় জড়ানো রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সম্পর্কে রাজধানী ঢাকা থেকে ঘুরতে আসা বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী সপু খান ও জাপান থেকে আসা বিদেশি পর্যটক সিজুকা তার মেয়ে ইউকা জানায়, বনের বানরের সঙ্গে খেলা করতে পেরে বেজায় খুশি। বানরকে খাবার খাওয়াতে পেরে আনন্দে আটখানা। শুধু জাপানীরা নয়, শ্যামনগরের শিশু আবিদ হাসান, সাতক্ষীরার সুমাইয়া, রাব্বি, মাহাদীসহ অনেকেই আনন্দে আত্মহারা। প্রকৃতির সান্নিধ্যে এসে বানর—হরিণের সাথে খেলতে পেরে বেজায় খুশি তারা।