বিশেষ প্রতিনিধি \ বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী জীব বৈচিত্রের এক অপূর্ব সুন্দর স্থান ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট সুন্দরবন। জীব বৈচিত্র রক্ষায় সরকার বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহন করলেও বেশকিছু অসাধু ব্যক্তিদের কারণে জীববৈচিত্র হারতে বসেছে এই সুন্দরবন। শীতের শুরুতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে এক শ্রেণির অসাধু অমানুষ সুন্দরনের হরিণ শিকারিরা। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি থাকলেও তা মানছে না চিহ্নিত হরিণ শিকারিরা। প্রতিনিয়ত গভীর সুন্দরবন থেকে ফাদ পেতে ও চোরাই বন্দুক দিয়ে হরিণ শিকার করছে। এসকল পেতে রাখা ফাদে অনেক সময় বাঘ সহ সুন্দরবনের অন্যান্য প্রাণী বেধে মারা যায় বলে জানাযায়। রীতিমত প্রশাসনের সাথে চিহ্নিত হরিণ শিকারি সদস্যদের স্বাক্ষাৎও মেলে। তাদের সাথে যোগসাজশে চুক্তিতে হরিণ শিকারে নেমে পড়ে শিকারিরা। যে কারণে হরিণ শিকার করে পার পেয়ে যাচ্ছে চোরা শিকারিরা। বনবিভাগের সদস্যরা হরিণ শিকারিদের ধরতে অভিযানে যাওয়ার আগে খবর পেয়ে সর্তক হয় চক্রটি। বনবিভাগের অভিযানে হাতে নাতে কয়েকজন পাচারকারি সহ চোরাকারবারিদের যানবহন আটক করলেও দূর্বল আইনের ফাকফোকড় দিয়ে বের হয়ে যায় এইসব হরিণ শিকারীরা। প্রশাসনকে সুকৌশলে ম্যানেজ করে জীবন্ত হরিণ লোকালয়ে এনে জবাই করে উচ্চ মূল্যে হরিণের মাংস বিক্রি করে হরিণ শিকারীরা। চড়া দামে হরিণের মাংস বিক্রয় হওয়ার কারণে ক্রেতাদের বিশ্বাস করাতে চোরা শিকারিরা জীবন্ত হরিণ শহরে এনে ক্রেতাদের সামনে জবাই করে। জবাই করা হরিণের ছবি তুলে বাইরের ক্রেতাদের কাছে পাঠানো হয়। যে কারণে হরিণের মাংসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। তথ্য অনুসন্ধানে জানাযায়, এ মাংস নেওয়া থেকে বাদ পড়ছে না প্রশাসনের কর্মকর্তারাও। চোরাকারবারিরা হরিণ শিকার করে নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করছে, সাতক্ষীরা রেঞ্জের ৪ ষ্টেশনের আওয়াতাধীন কোবাদকের গোলখালি, গাড়িলাল বাজার, গাবুরা নাপিত খালি, বুড়িগোলিনী ষ্টেশনের গাবুরার ৯ নং সোরা, ডুমুরিয়া, ১৪ রশি দাতিনাখালির মহসিন সাহেবের হুলা ও চেয়ারম্যান মোড়। কদমতলা ষ্টেশনের মুন্সীগন্জ মৌখালী, সরদার বাড়ি, হরিনগর বাজার ও চুনকুড়ি। কৈখালী ষ্টেশনের পাশ্বেখালি, টেংরাখালী, কালিঞ্চি, ভেটখালি ও কৈখালীসহ চোরা শিকারিদের সুবিধা মত রুট ব্যবহার করে থাকে। সাতক্ষীরা রেন্জের তথ্য অনুযায়ী বনবিভাগের ৪ টি ষ্টেশনে ১০৮ জন হরিণ শিকারিদের একটা তালিকাও রয়েছে। তার মধ্যে কোবাদক ষ্টেশনে ৩০ জন, বুড়িগোয়ালিনী ষ্টেশনে ৪২ জন, কদমতলা ষ্টেশনে ২০ জন, কৈখালী ষ্টেশনে ১৬ জন। তালিকা ছাড়াও আরো অনেকে হরিণ শিকারের সাথে জড়িত রয়েছে বলেও জানাযায়। এছাড়া হাতেনাতে ধারা যায় না বলে কোন ব্যাবস্থাও নিতে পারে না বলে জানান বনবিভাগ কর্মকর্তা। স্থানীয়রা জানান, প্রতিনিয়ত হরিণ শিকারের কারণে সুন্দরবনের প্রাণী বৈচিত্র হুমকির মুখে পড়ছে। অচিরেই যদি হরিণ শিকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন না করা যায় তাহলে প্রাণী শূন্য হবে সুন্দরবন। সাতক্ষীরা রেঞ্জ কর্মমকর্তা ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, আমরা সব সময় সজাগ আছি। বিশেষ করে হরিণ শিকারিদের কোন ছাড় দেওয়া হবে না। সঠিক তথ্য পেলে তাদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিনিয়ত হরিণ শিকারিদেরকে আটক করে মামলা দিয়ে জেলে পাঠানো হচ্ছে। হরিণ শিকারীরীদের হাত থেকে মায়াবী হরিণ, রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির সহ সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করা, ব্যবসায়ী ও প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীর হাত থেকে সুন্দরবনকে রক্ষা করতে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করেছে সুন্দরবন প্রেমী জনসাধারণ ও সুধীমহল।