দৃষ্টিপাত রিপোর্ট ॥ শীত আসছে। শীত এসেছ আর তাই শীতের বিশেষ বৈশিষ্ট্য খেজুরের রস ঘরের দরজায় কড়া নাড়ছে। ইতিমধ্যে গাছিরা খেজুরের রস আহরন করতে খেজুর গাছ প্রস্তুত করতে শুরু করেছে। গ্রামে গ্রামে গাছিদের চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সারা দেশের ন্যায় সাতক্ষীরাতেও চলছে খেজুর গাছের রস উৎপাদনের প্রস্তুতি। বরাবরই সাতক্ষীরার সুনাম আর সুখ্যাতির সাথে খেজুরের রসের নাম বিশেষ ভাবে সম্পৃক্ত আর তাই সাতক্ষীরাকে নিয়ে চিরাচরিত প্রবাদ সাতক্ষীরার যশ, খেজুরের রস,। গাছিরা অতি ব্যস্ততম সময় অতিক্রম করছে। খেজুরের রস আহরনে একাধিক পর্ব অতিক্রম করে গাছিরা। প্রথমে গাছ ঝোড়া, তার অন্তত দশ /পনের দিন পর রস আনার উপযুক্ত পরিবেশষ করে গাছিরা স্থানীয় ভাষায় যাকে চাচ বলে। তারপরের সপ্তাহে খেজুরের উপর অংশে ছোড়া, চাচ দেওয়া পাকা অবস্থানে দাও দিয়ে দুই অংশ কাটার পর রস আসতে শুরু করে। সাতক্ষীরার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাথে জড়িয়ে আছে খেজুরের রসের মহিমা আর জৌলুস। একাধিক গাছির সাথে কথা বলে জানাযায় আর সপ্তাহ খানেক ব্যবধানে রস উৎপাদন শুরু হবে। অবশ্য ইতিমধ্যে কোন কোন গাছি রস আহরন করে চলেছে। শীতের তীব্রতা যত ঘণীভূত হবে রস ততো বেশী আসবে। গাছিরা আক্ষেপ করে বলেন, দিন দিন খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে এবং তার বিরুপ প্রভাব পড়ছে রস উৎপাদনে। মানুষ প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে খেজুর গাছ নিধন করায় অতীতের যে কোন সময় অপেক্ষা বর্তমান সময়ে খেজুর গাছের সংখ্যা কম হয়ে গেছে। অত্যন্ত লোভনীয় এবং রসনাতৃপ্ত খেজুর রস অতিথি আপ্যায়নের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। রস জ্বালিয়ে গুড় এবং পাটারি তৈরী করা হয়। নতুন বছরের নতুন রসের গুড় এবং পাটালি অতি আকর্ষনীয় দীর্ঘদিন যাবৎ থাকে নলেন গুড় ও নলেন পাটালি হিসেবে বর্ণনা করা হয়। শীতে নানান ধরনের পিঠা পায়েসের উপস্থিতি ঘটে আর উক্ত পিঠা পায়েসের মাধ্যম রস ও গুড়। শীতের সময়ে রসের ক্ষিরের বিকল্প কি হতে পারে? আর এই রসের ক্ষির তৈরীতে রস জ্বালিয়ে লালচে রং আসলে উক্ত রস এর মাধ্যমে ক্ষীর তৈরী হয়। শীতের সময়ে ভাপা পিঠা, পাকান পিঠা, কুুিলর পিঠা, পাটি সাপটা পিঠা, সহ হরেক রকম পিঠার মহা উৎসব ঘটে। অতিথি আপ্যায়নে এবং রসনাতৃপ্ততায় পিঠা বিকল্প নেই। গত বছরের তুলনায় এ বচর খেজুর রস উৎপাদন কতটুকু যথাযথ থাকবে এমন আলোচনার পাশাপাশি রসের মূল্যের বিষয়টি ও আলোচনায়। রসের সহজ লভ্যতা ক্রমেই ফ্যাকাশে হেচ্ছ যে কারনে মুল্য বৃদ্ধি ঘটছে। তারপর এক শ্রেনির অসাধু গাছিরা রসের সাথে পানি ও সেকারিন মিশ্রন ঘটিয়ে অনৈতিক সুবিধা ভোগ করে থাকে। খেজুরের রস এবং রসের তৈরী গুড়, পাটালি কেবল রসনা তৃপ্ত করে তা নয়, খেজুর রস বিশেষ উপকারি ও বটে তবে নিপাহ ভাইরাস সহ অরক্ষিত থাকায় খেজুরের কাচারস অর্থাৎ জ্বালানো ব্যতিত পান করা উচিৎ নয় জুকির কারন হিসেবে ধরে নেওয়া যায়। খেজুরের রস বিশেষ উপকারে আসে পেটের গ্যাস নিরাময়ে, শ্লেষ্মা, কপ দুরে করে, শুষ্ক কাশি ও এজহমায় উপকারি। মুত্র থলির ইনঠেকশন, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা এবং ঠান্ডা জনিত শ্বাসকষ্ট দুরীকরনে বিশেষ কার্যকর, সাতক্ষীরার যশ, খেজুরের রস চরম এই বাক্যকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে খেজুর গাছ বেশি বেশি রোপন করতে হবে। কোন অবস্থাতেই খেজুর গাছ নিধন করা যাবে না। বাড়ীর আশপাশে বাড়ীতে সড়ক মহাসড়কের ধারে মাঠ বিল খালে, আইলে যেখানে ফাকা যায়গা পাওয়া যায় সেখানেই খেজুর গাছ রোপন করতে হবে। ইে গাছ পরিবেশ বান্ধব ও বটে, খেজুর রসের অর্থনৈতিক মূল্য বেড়েছে বহুগুন। সবমিলে খেজুর গাছের রোপন বৃদ্ধির বিকল্প নেই।