বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৮:১২ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
সাতক্ষীরা যাত্রী ও পন্য পরিবহন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত সাতক্ষীরায় এনএস আইয়ের গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সুলতানপুর বড় বাজারে অভিযান ॥ ১৯৯ বস্তা চিনি জব্দ সাতক্ষীরায় বীর মুক্তিযোদ্ধা রবিউল ইসলামের রষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন সম্পন্ন জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতি মানছে না ইসরাইল সাতক্ষীরার ঈদ বাজারে ক্রেতাদের ভিড় অসহায় পরিবারের মাঝে ইফতার সামগ্রী বিতরণ কপিলমুনিতে মহান স্বাধীনতা দিবসের আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুল ইসলামের গণসংযোগ কলারোয়ায় বসতভিটা দখল ও গাছ-গাছালি কাটার প্রতিবাদ করায় বাড়িঘর ভাংচুরসহ মারপিট করার অভিযোগে কয়রায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন

শোকাবহ আগস্ট

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৯ আগস্ট, ২০২২

এফএনএস : আজ মঙ্গলবার, শোকাবহ আগষ্ট মাসের নবম দিন। ইতিহাসের এই দিন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী একজন মানুষ ছিলেন। তিনি যখন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তুলছিলেন তখনই তার বিরুদ্ধে শুরু হয় ষড়যন্ত্র চক্রান্ত। এটা হয়তো বঙ্গবন্ধু নিজেও আঁচ করতে পেরেছিলেন। কিন্তু কোনভাবে বিশ্বাস করতে পারেননি। আর তাঁর সেই উদারতায় শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ালো। প্রতিদিনের মত ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট বিকালেও বঙ্গবন্ধু গণভবন সংলগ্ন অফিসের লনে পায়চারি করছিলেন। এ সময় দেশের প্রবীণ সাংবাদিক এবিএম মুসা বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে যান। বঙ্গবন্ধুর সাথে ছিলেন তাঁর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ। আলাপচারিতার এক ফাঁকে মনের অজান্তে বঙ্গবন্ধু বলে ফেলেন, তাঁর অবস্থা চিলির প্রেসিডেন্ট আলেন্দের মত হতে পারে। প্রসঙ্গত: প্রেসিডেন্ট আলেন্দেকেও ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছিল। বিশিষ্ট সাংবাদিক এবিএম মুসা বিদেশ যাওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে এসেছিলেন। তিনি এবিএম মুসাকে রসিকতা করে বলেন, ‘ভয় পেয়ে গেছিস। সেজন্য বিদেশে পালাচ্ছিস! নিয়তির নির্মম পরিহাস এ আলাপচারিতার কয়েক ঘন্টা পরেই ষড়যন্ত্রকারিরা জাতির জনককে পরিবারসহ নির্মমভাবে হত্যা করে। তাই আগষ্ট মাসটি এলেই স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলার সময় তোফায়েল আহমেদ কেঁদে ফেলেন। বঙ্গবন্ধু প্রতিদিন সকাল ৯টায় অফিসে আসতেন। সারাদিন অফিসে কাটাতেন। রাত ৯টায় বাসায় ফিরতেন। ১৯৭৫ এর ১৪ আগস্টও তিনি একটু সকাল করে বাসায় ফিরেন। তোফায়েল আহমেদ জানান, যুগ্ম সচিব ফরাশ উদ্দিন আহমেদ ও মনোয়ারুল ইসলাম পিএইচডি করতে বিদেশ যাবেন। গণভবনে তাদের ফেয়ারওয়েল ডিনারের আয়োজন করা হয়েছিল। রাত ১০টায় তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর প্রধান সিকিউরিটি অফিসার মহিউদ্দিন আহমেদকে সঙ্গে নিয়ে ৩২ নম্বরের বাসায় যান। এদিকে পরদিন বঙ্গবন্ধুকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেয়া হবে। তাই বিশ্ববিদ্যালয় জুড়ে চলছিল উৎসবের আয়োজন। বঙ্গবন্ধু তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে আলোচনায় বসেন। তিনি তাকে বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘আমাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। আজ আমি দেশের প্রেসিডেন্ট। সে বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে সংবর্ধনা দিচ্ছে। জীবনে এরচেয়ে বড় পাওয়া আর কি হতে পারে’। তোফায়েল আহমেদ অশ্র“সিক্ত নয়নে আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু যে কি বিশাল উদার ও খোলা মনের মানুষ ছিলেন তা বলে বোঝানো যাবে না। তিনি গোপনে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের সাহায্য করতেন নিজস্ব তহবিল থেকে। এ তহবিল থাকতো তোফায়েল আহমেদের হাতে। তখনকার এসবির ডিআইজি ইএ চৌধুরির মাধ্যমে সাহায্যের টাকা নেতাদের বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। মাস শেষে কাকে কাকে সাহায্য করেছেন তা শুনতেন। একদিন তালিকায় দেশের দুইজন প্রথিত যশা রাজনৈতিক নেতার নাম বলেন। এতে বঙ্গবন্ধু ক্ষুব্ধ হয়ে ধমক দিয়ে বলেন, এভাবে লিখবি না। কেউ জানতে পারলে উনারা অসম্মানিত হবেন। তাদের সাংকেতিক নাম লিখে রাখার পরামর্শ দেন। মুক্তিযুদ্ধে আহত মেজর শরিফুল হক ডালিম ও শমশের মোবিন চৌধুরীকে (বর্তমান বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা) বিদেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠিয়েছিলেন। সেই বিশ্বাসঘাতক ও অকৃতজ্ঞ মেজর ডালিমই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু দেশের দুঃখী মানুষকেও সরাসরি সাহায্য করতেন। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ তাদের সুখ-দুঃখের কথা জানাতে তাঁর কাছে আসতেন। কেউ কেউ আসতেন সাহায্যের জন্য। তোফায়েল আহমেদ বলেন, একদিন শুক্রবার ময়মনসিংহ থেকে এক মহিলা তার অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে সাহায্যের জন্য বঙ্গবন্ধুর সাথে দেখা করতে আসেন। জুম্মার নামাজের সময় হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু বাসায় যাবেন নামাজের জন্য। তোফায়েল আহমেদ এ দম্পতিকে বলেন, আজ দেখা করা হবে না। বাসায় ফিরে বঙ্গবন্ধুর তোফায়েল আহমেদের ওই কথা মনে হয়। তিনি বেগম মুজিবকে বলেন, তোফায়েল কাকে যেন ফিরে যাওয়ার কথা বলছিল। তিনি তোফায়েল আহমেদকে ফোন করে শোনেন এবং ওই মহিলা ও তার স্বামীকে খুঁজে বের করতে নির্দেশ দেন। পরদিন তাদের খুঁজে বের করে বঙ্গবন্ধুর কাছে আনা হয়। বঙ্গবন্ধু তাদের নিজের পাশে সোফায় বসিয়ে কথা শুনেন এবং ৩ হাজার টাকা সাহায্য দেন। এ টাকা মহিলাকে কাপড়ের গিঁটে গুঁজে নিতে বলেন, যাতে পথিমধ্যে খোয়া না যায়। তাদের পথ খরচ বাবদ আরো দুইশো টাকা দেন। ব্যক্তিগতভাবে এরকম অসংখ্য মানুষের সাহায্য করেছেন বঙ্গবন্ধু। প্রতিদিন দুপুর ২টার দিকে গণভবনে বাসা থেকে আসা খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে ৫টার দিকে খবরের কাগজ ও বই পড়তেন। গণভবনের পুকুর ঘাটে দাঁড়ানোটা যেন বঙ্গবন্ধুর অভ্যাসেই পরিণত হয়ে গিয়েছিল। আর মাছগুলোও ঘাটের কূলে এগিয়ে আসত। তিনি নিজ হাতে মাছগুলোকে খাবার দিতেন। তারপর আবারও অফিস করতেন। এ সময় সিনিয়র মন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের সাথে নিয়মিত বৈঠকে বসতেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে কিভাবে গড়ে তোলা যায় তা নিয়েই মূলত: সাবার সাথে পরামর্শ করতেন।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com