এফএনএস : শোকাবহ আগষ্ট মাসের ত্রয়োদশ তম দিন আজ। অতি করুন স্মৃতি বিজড়িত এ মাসে বাংলাদেশের ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালির সকল আন্দোলনেই নেতৃত্ব দিয়েছেন। ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনের স্থপতি ছিলেন তিনি। এই ৬ দফাকে কেন্দ্র করেই বাঙ্গালির স্বাধীনতা আন্দোলনের সূচনা এবং তা পরিণতি লাভ করে। বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন রাষ্ট্রের সকল ক্ষেত্রে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাঙ্গালির অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানী শাসক গোষ্ঠীর হিসাব ছিল ভিন্ন রকমের। তারা বাঙ্গালিদের কখনই তাদের প্রাপ্য অধিকার দিতে চায়নি। পাকিস্তানের দুই অংশের যে রাজস্ব আয় হতো তার শতকরা ৮০ ভাগ ব্যয় হতো পশ্চিম পাকিস্তানের উন্নয়নের কাজে। অথচ জনসংখ্যার আনুপাতিক হারে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাপ্য ছিল অর্ধেকেরও বেশি। বাজেটের সিংহভাগ ব্যয় হতো প্রতিরক্ষা খাতে। কিন্তু সেখানে বাঙ্গালি অফিসার ও সৈনিকের সংখ্যা ছিল খুবই নগণ্য। দোর্দন্ড প্রতাপশালী সামরিক শাসক জেনারেল আইয়ুব খানের সাথে গোলটেবিল বৈঠকে বঙ্গবন্ধু এই শোষণের বিরুদ্ধে গর্জে ওঠেন। ১৯৬৬ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত ওই রাউন্ড টেবিল কনফারেন্সে ঐতিহাসিক ৬ দফা পেশ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধু লিখিতভাবে এই ৬ দফা অতিগোপনে নিজের পকেটে রেখেছিলেন। তিনি কাউকে সেটি জানতেও দেননি। ওই বৈঠকে যোগদানের জন্য বঙ্গবন্ধুকে প্যারেলে মুক্তির প্রস্তাব দেয়া হয়। কিন্তু তিনি ঘৃণাভরে এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। বঙ্গবন্ধু শর্ত দেন তার সাথে আটক অন্যান্য জাতীয় নেতাকেও নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে। পাক সামরিক জান্তা বঙ্গবন্ধুর এ দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। এরপর তিনি লাহোর কনফারেন্সে যোগ দেন। ওই সম্মেলনে তিনি অত্যন্ত নির্ভীকভাবে ৬ দফা উপস্থাপন করেন। এই ৬ দফার অন্যতম ছিল পাকিস্তানের উভয় অংশের জন্য পৃথক মুদ্রা নীতি, দুইটি পৃথক রিজার্ভ ব্যাংক, বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পৃথক চুক্তি সম্পাদনের অধিকার, পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন ইত্যাদি। বস্তুত এই ৬ দফাকে কেন্দ্র করেই ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করে। তারই ধারাবাহিকতায় একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামেরও সূচনা হয়। তৎকালীন পাকিস্তানে যখনই বাঙ্গালি অধিকার বঞ্চিত হয়েছে এবং তাদের স্বার্থের প্রসঙ্গ এসেছে বঙ্গবন্ধু তখনই গর্জে উঠেছেন। এভাবেই পিন্ডির দাসত্ব থেকে মুক্তির জন্য সোচ্চার হন তিনি। কিন্তু শোষিত ও অধিকার বঞ্চিত বাঙ্গালি জাতির জন্য যে নেতা সারা জীবন এত ত্যাগ স্বীকার করলেন, উপহার দিলেন একটি স্বাধীন ভূখন্ড, একটি স্বাধীন পতাকা ও একটি জাতীয় সঙ্গীত তাকেই জারজ সন্তানরা স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুবরণ করতে দিল না। এমনকি এই মহান ব্যক্তিটিকে নৃশংসভাবে হত্যার পর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন পর্যন্ত করা হলো না। তাই এটা গোঠা বাঙ্গালির জন্যই অতি দুঃখজনক এক অধ্যায়।