মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩৮ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

শ্যামনগরে নিজের সন্তানকে হত্যা, আদালতে মায়ের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় রবিবার, ১৯ মার্চ, ২০২৩

বিশেষ প্রতিনিধি \ শ্যামনগর উপজেলায় জুসের সঙ্গে ঘুমের বড়ি ও বিষ মিশিয়ে নিজের সন্তানকে হত্যা, আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে মা সুস্মিতা দত্ত। আদালতে জবানবন্দী সূত্রে জানাযায়, অভাবের তাড়নায় ৫ম শ্রেণীর স্কুল ছাত্র রোহিত দত্ত (১১) কে জুসের সঙ্গে বিষ ও ঘুমের বড়ি মিশিয়ে হত্যায় গ্রেপ্তারকৃত মা সুস্মিতা দত্ত আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল শনিবার দুপুরে সাতক্ষীরা জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম প্রথম আদালতের বিচারক রাকিবুল ইসলাম তার খাস কামরায় এ জবানবন্দি রেকর্ড করেন। গ্রেপ্তারকৃত সুস্মিতা দত্ত (৩৩) শ্যামনগর উপজেলার হরিতলা গ্রামের মৃত গোপাল দত্তের স্ত্রী। প্রতিবেশী কালিগঞ্জের তারালী কাজী আলাউদ্দিন কলেজের শিক্ষক ও শ্যামনগর উপজেলার হরিতলা গ্রামের মনোরঞ্জন রায় জানান, শ্যামনগরে জুয়েলারী ব্যবসার কারণে তালা উপজেলার কানাইদিয়া গ্রামের মদন মোহন দত্ত তার তিন ছেলে নির্মল দত্ত, উজ্জ্বল দত্ত ও গোপাল দত্তকে নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে শ্যামনগরে বসবাস করে আসছেন। কয়েক বছর আগে তারা একটি বাড়ি কিনলেও সেটি জামান ট্রেডার্সের মালিকের কাছে বিক্রি করে দেন। এরপর থেকে গোপাল দত্ত ঐ বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। চার বছর আগে গোপাল দত্ত হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এরপর স্বামীর রেখে যাওয়া টাকা সুদ খাটিয়ে ছেলের পড়াশুনার খরচ, বাড়ি ভাড়া ও সংসার খরচ নির্বাহ করতেন গোপাল দত্তের স্ত্রী সুস্মিতা দত্ত। অন্যদিকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা শ্যামনগর থানার উপপরিদর্শক খবির হোসেন শনিবার আদালতে সুস্মিতা দত্তের স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দির বরাত দিয়ে জানান, স্বামীর মৃত্যুর পর সুস্মিতা দত্ত তার একমাত্র সন্তান রোহিত দত্ত নকিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রকে নিয়ে পার্শ্ববর্তী কলেজ শিক্ষক মনোরঞ্জন রায় এর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। কালিগঞ্জ উপজেলার মৌতলা বাজারের কসমেটিকস ব্যবসায়ি পবিত্র রায় এর কাছে সাড়ে তিন লাখ টাকা সুদে খাটাতেন সুস্মিতা দত্ত। এ ছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে সুদে টাকা খাটাতেন সুস্মিতা। বুধবার সুস্মিতা মৌতলা বাজারে পবিত্র এর কাছে টাকা আনতে গেলে সে টাকা দিতে পারবে না বলে তাড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া আরও কয়েকটি জায়গা থেকে তিনি টাকা আদায় করতে পারছিলেন না। ফলে ছেলের পড়াশুনা খরচ, ঘরভাড়া ও সংসার চালানোর খরচ কোথা থেকে যোগাড় করবেন বলে মানসিক দুশ্চিন্তায় ভুগছিলেন। একপর্যায়ে শুক্রবার দুপুরে নিজ পার্শ্ববর্তী দোকান থেকে কিনে আনা ম্যাংগো জুসের সঙ্গে ২৬টি ঘুমের বড়ি (রিভোট্রিল.৫) ও কীটনাশক অটোমিডা মিশিয়ে রোহিতকে পান করান। এতে রোহিতের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুস্মিতার বাড়ি থেকে ঘুমের বড়ির স্ট্রিপ, কীটনাশকের পাতা ও একটি জুসের বতল উদ্ধার করেছে। এ ঘটনায় রাতেই নিহতের কাকা উজ্জ্বল দত্ত বাদি হয়ে শ্যামনগর থানায় সুস্মিতা দত্তের নাম উলে­খ সহ অজ্ঞাতনামা ২/৩ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে শনিবার বিকেল ৩ টায় ময়না তদন্ত শেষে রোহিতের লাশ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com