এস এম জাকির হোসেন শ্যামনগর থেকেঃ শ্যামনগর উপজেলায় পহেলা ফাল্গুন ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ফুলের দোকানে মেতে উঠেছে প্রেমিক যুগলেরা। দুই উৎসবকে ঘিরে জোড়া উৎসবের আমেজ। ঋতুরাজ বসন্ত এলেই বাঙালি সংস্কৃতি মেতে ওঠে ভিন্ন আঙ্গিকে। বসন্ত মানে পূর্ণতা। বসন্ত মানে নতুন প্রাণের কলরব। তাই তো প্রকৃতি নিজের রূপে সাজে। বাংলা বর্ষপঞ্জিতে পরিবর্তন আনায় পহেলা ফাল্গুন ও ভালবাসা দিবস একদিনেই উদযাপন করছে উৎসবপ্রিয় বাঙালি। পহেলা ফাল্গুন প্রকৃতির দক্ষিণা দুয়ারে বইছে ফাগুনের হাওয়া। কোকিলের কণ্ঠে আজ বসন্তের আগমনী গান। ফুলে ফুলে ভ্রমরও করছে খেলা। গাছে গাছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতে প্রকৃতির আজ এতো বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সাথে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। সকল কুসংস্কারকে পেছনে ফেলে, বিভেদ ভুলে, নতুন কিছুর প্রত্যয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা নিয়ে বসন্তের উপস্থিতি। তাই কবির ভাষায়-‘ফুল ফুটুক আর না-ই ফুটুক আজ বসন্ত’।আবাল-বৃদ্ধা, তরুণ-তরুণী বসন্ত উম্মাদনায় আজকে মেতে উঠবে। শীতকে বিদায় জানানোর মধ্য দিয়েই বসন্ত বরণে চলবে ধুম আয়োজন। শীত চলে যাবে রিক্ত হস্তে, আর বসন্ত আসবে ফুলের ডালা সাজিয়ে। পহেলা ফাল্গুন ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন। একই সাথে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস। একদিক দিয়ে হিসাব করলে বসন্ত আনন্দ আর ভালবাসার ঋতু।প্রিয়জনের স্পর্শ পাওয়ার আকুলতা বসন্তে যেন ধরা দেয় ভিন্ন রূপে। প্রকৃতির রং লাগে মানুষের মনেও। ফাগুনের রক্ত রাঙা দিনে বসন্ত বাতাসে মিশে থাকে ভালোবাসা। তাইতো ফাগুন বন্দনায় মুখর প্রকৃতিপ্রেমীরা। কী নেই বসন্তের! আছে রং, রূপ, রস ও লাবণ্য। আছে মাতাল দখিনা সমীরণ। ঋতুরাজের আগমনে খুলে গেছে দখিনা দুয়ার। মানব-মানবীর চিরন্তন ভালোবাসা উড়ছে রঙিন প্রজাপতি হয়ে। ফুলে ফুলে আছে মৌমাছির গুঞ্জন। নতুন প্রাণের পত্রপলবে জেগে উঠেছে বৃক্ষ-লতা-গুল্ম। নদীর কিনার থেকে আদিগিন্ত প্রান্তর, কুঞ্জবন, অরণ্য-পর্বতে ডেকেছে নবযৌবনের বান। প্রকৃতির এই রূপতরঙ্গ দেখেই কবিগুরু লিখেছিলেন-‘ওরে ভাই, ফাগুন লেগেছে বনে বনে।’ প্রকৃতিতে বসন্ত আর ভালোবাসা যেন একে অন্যের পরিপূরক। পহেলা ফাল্গুনে বসন্ত উৎসবের রঙে মেতে ওঠে তরুণ হৃদয়, নতুন করে প্রাণ পায় প্রবীণরা। বসন্তে শুধু প্রকৃতিই নয়, হৃদয়ও রঙিন হয়ে ওঠে। তাই তো বসন্ত আমাদের কাছে ‘প্রেমের ঋতু’।কোকিলের কুহুতানে জাগা মুখরিত বাংলার বিস্তীর্ণ প্রান্তরে আজ পহেলা ফাগুনের দিনে হবে ভালোবাসার জয়গান। হৃদয় থেকে হৃদয়ের কথাগুলো আজ ভাষা পাবে। প্রেমিক তার প্রেমিকাকে কিংবা প্রেমিকা তার প্রেমিককে আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটি প্রকাশ করবে ‘হ্যাপি ভ্যালেনটাইন্স ডে’ উচ্চারণ করে। এ উৎসবটির একটি ঐতিহ্যময় ইতিহাস আছে। ১৫৮৫ সালে মোগল সম্রাট আকবর ১৪টি উৎসবের প্রবর্তন করেছিলেন। এর মধ্যে অন্যতম ছিল ‘বসন্ত উৎসব’। এই দুই উৎসবকে ঘিরে সারা দেশের ন্যায় শ্যামনগর উপজেলার মানুষের মনে রং লেগেছে। ফুলের দোকান গুলোতে ফুলের পসরা সাজিয়ে বসে আছে ফুল বিক্রেতারা। এই ফুল নিয়ে ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসা জানাতে দোকানগুলোতে ভিড় করছে প্রেমিক-প্রেমিকারা। এই দিবসকে ঘিরে ভালোবাসা জানাতে থেমে নেই বিভিন্ন শ্রেণীর প্রেমিক যুগলেরা। ব্যবসায়ীরা এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করে বসে থাকে একটি বছর। তারা প্রেমিক প্রেমিকাদের হাতে ফুল দিয়ে নিজেদের ব্যবসাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনি প্রেমিক প্রেমিকা ফুল পেয়ে হচ্ছে ধন্য। এবিষয়ে শ্যামনগরের শ্রেষ্ঠ ফুল ব্যবসায়ী রাজু ফুলশয্যা’র প্রোপাইটার জি এম রাজগুল আহমেদ রাজু দৈনিক দৃষ্টিপাতকে জানায়, আমরা ব্যবসায়ীরা সারাবছর ফুলের ব্যবসা করি। পহেলা ফাল্গুন/ভ্যালেন্টাইন ডে অর্থাৎ বিশ্ব ভালোবাসা দিবসের জন্য অপেক্ষায় থাকি। এই দিনটিতে স্কুল কলেজের ছেলে মেয়েরা, প্রেমিক-প্রেমিকারা সহ আবাল বৃদ্ধ বনিতা তাদের প্রিয়জনকে ভালোবাসা জানাতে আমাদের কাছে আসে ফুল নিতে। আমরা তাদেরকে ফুল দিতে পেরে নিজেদেরকে ধন্য মনে করি এবং আমরা আমাদের ব্যবসাকে গুছিয়ে নিতে পারি। বিগত বছরে মহামারী করোনায় লকডাউন থাকায় আমাদের ফুল ব্যবসা ক্ষতির মুখে পড়েছিল কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতি একটু স্বাভাবিক থাকায় আমাদের বেচাকেনা মোটামুটি ভালো সন্তোষজনক। পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবসে প্রতিটি প্রেমিক-প্রেমিকার ভালোবাসা পূর্ণতা পাক এটাই কামনা।