জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ আওয়ামী লীগ সরকারের রেখে যাওয়া প্রশাসনকে বহাল রেখে রাষ্ট্র সংস্কারের অভিযোগ উঠেছে। এ ইস্যুতে ক্ষুদ্ধ পদোন্নতি বঞ্চিত প্রশাসন সার্ভিসের কর্মকর্তারা। সচিবদের চাকরি থেকে অব্যাহতির বদলে দপ্তর বদলানো হচ্ছে; এতে আরও সংক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে বঞ্চিতরা বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বলছেন, শনিবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানকে বদলি করে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) করা হয়েছে। অথচ একাদশ জাতীয় সংসদের আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত (রাজবাড়ী) মহিলা এমপি সালমা চৌধুরী রুমার স্বামী এই কর্মকর্তা। একজন বঞ্চিত কর্মকর্তা বলেন, এ ধরণের বিতর্কিত কর্মকর্তা প্রশাসন থাকলে ন্যায় বিচার বঞ্চিত হবেন সাধারণ মানুষ। এদিকে, এনবিআরের চেয়ারম্যান করা হয়েছে আবদুর রহমানকে। রাজস্ব ক্যাডারের এই কর্মকর্তা তৎকালিন সরকারের খুবই বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন ছিলেন। এমনকি প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-আন্দোলনে ইন্ধন যুগানোর অভিযোগ রয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্র সংস্কারে এসব বিতর্কিত কর্মকর্তাদের অপসারণে দাবি জানিয়েছে। এদিকে, অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের বিশ্বস্ত আমলা ও এক-এগারোর কুশিলব এই উপদেষ্টা। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, সাবেক সরকারের ডিসি ছিলেন এবং ১/১১ সেনা-সমর্থিত সরকারের আমলে দায়িত্ব পালন করেন মন্ত্রিপরিদ সচিব। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন তিনি। তৎকালিন সরকারের আজ্ঞাবহ কর্মকর্তা ও বর্তমান এই উপদেষ্টাকে দ্রুত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতে সোচ্চার হচ্ছেন বঞ্চিতরা। এছাড়া সরকারের দায়িত্বরত সব সচিব, বিভিন্ন সংস্থার চেয়ারম্যান ও মহাপরিচালকদের অপসারণ দাবিতে সোচ্চার কর্মকর্তারা মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ রবিবার প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের প্রবেশদ্বারে অবস্থান নেয়ার আলটিমেটাম দিয়েছেন পদ-বঞ্চিতরা। প্রত্যেকটি গাড়ী তল্লাশি করবেন যাতে তৎকালিন সরকারের আস্থাভাজন একজন সচিব ও আমলা সচিবালয়ের প্রবেশ করতে না পারেন। পদ-বঞ্চিত একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে আলাপে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। প্রশাসনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারি আলী ইমাম মজুমদার তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের খুবই ঘনিষ্ট ও বিশ্বস্ত। দীর্ঘ ২১ বছর পর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে এই আলী ইমাম দুটি জেলায় জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেন। এর মধ্যে ১৯৯৬-৯৮ কক্সবাজার এবং ১৯৯৮ -২০০০ পর্যন্ত সিলেটের ডিসি ছিলেণ। ২০০৬ সালে তৎকালিন মঈন উদ্দীন ও ফখরুদ্দিনের সময়ে এই কর্মকর্তা ২০০৬-০৮ সাল পর্যন্ত মন্ত্রিপপরিষদ সচিব ছিলেন। অভিযোগ উঠেছে, ছাত্র আন্দোলনের মূখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। ওই সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তা আলী ইমাম মজুমদার। তিনি দায়িত্ব পেয়েই আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ট আমলাদের পুর্নবাসনে কাজ করছেন। এ নিয়ে ক্ষুদ্ধ ও হতাশ পদোন্নতি বঞ্চিতরা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, টানা ১৫ বছর পদোন্নতি বঞ্চিত কর্মকর্তাদের ভূতাপেক্ষ নীতি মেনে পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। প্রায় শতাধিক কর্মকর্তাকে গত ১৩ আগষ্ট সিনিয়র সহকারি সচিব থেকে উপ-সচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর পর উপ-সচিব থেকে যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে আলী ইমাম মজুমদার নানা আইনি ফাঁক-ফোঁকর সামনে নেমে বঞ্চিত আটকানোর কৌশল নেন বলেও অভিযোগ বঞ্চিতদের। গতকাল রাত ৮টা এ রিপোর্ট লেখঅ পর্যন্ত উপ-সচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দেয়ার খবর নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আর যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যারা পর পর তিন বছর পদোন্নতি পাননি তাদেরকে পদোন্নতির বিবেচনায় না রাখতে বিশেষ সহকারির মদদ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তাকে অপসারণে একট্টা পদোন্নতি বঞ্চিত। এদিকে, সচিবালয়ে আজ রবিবার থেকে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পদ-বঞ্চিত কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এতোদিন অন্তবর্তীকালিন সরকারের অপেক্ষায় ছিলাম তারা প্রশাসনকে দলীয়মুক্ত করবেন । অথচ উল্টো আলী ইমামকে বিশেষ সহকারী নিয়োগ করে তৎকালিন আওয়ামী লীগ সরকারের আস্থাভাজনকে ভালো জায়গায় পদায়ন করছেন। আগামীকাল (আজ) থেকে এটা আর হতে দেয়া হবে না। কয়েকজন বঞ্চিত কর্মকর্তা বলেন, সচিবালয়ের প্রবেশদ্বারে অবস্থান নিব। প্রয়োজনে প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের গিয়ে সচিবরা অফিসে আসছেন কি না খোঁজ-খবর নিব। যদি বিতর্কিত কাউকে পাওয়া যায় তাহলে তাকে সচিবালয় ত্যাগ করাতে বাধ্য করা হবে। পদোন্নতি বঞ্চিতদের এই আলটিমেটামে পুরো প্রশাসনজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক দেখা দিতে পারে। এমনিতেই শেখ হাসিনা সরকারের পতনের কিছুটা আতঙ্গে ছিলেন সরকারের আস্থাভাজনরা।