শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫, ০৯:২৬ অপরাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
শান্তি আলোচনার পর ইউক্রেনে বৃহত্তম ড্রোন হামলা চালালো রাশিয়া সিরিয়ায় পুনরায় কার্যক্রম শুরুর পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে বিশ্বব্যাংক অপারেশন সিঁদুর নিয়ে মন্তব্য, ভারতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গ্রেফতার সৌদি আরবে অবৈধদের ধরতে অভিযান, গ্রেফতার ১৫ হাজার হায়দরাবাদের চারমিনারের কাছে ভবনে আগুন, শিশুসহ নিহত ১৭ যে কারণে ব্যর্থ হলো ভারতের স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ ভারতের জন্য আকাশসীমা আরও এক মাস বন্ধ রাখবে পাকিস্তান: রিপোর্ট ইরানে শিয়া মাজারে হামলার ঘটনায় ৩ জনের মৃত্যুদণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ—মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ টর্নেডোয় ২৭ জনের প্রাণহানি যে কারণে পেনাল্টি নেননি হালান্ড

সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর প্রবণতা বেশি

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ৮ মার্চ, ২০২৫

এফএনএস : চলতি (২০২৪—২৫) অর্থবছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ইতিবাচক ধারা ফিরলেও গত অক্টোবর থেকে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেই চলেছে। এসময় বিক্রির পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতাও বেড়েছে। এতে নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলতি (২০২৪—২৫) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে নিট বিক্রি ঋণাত্মক হয়েছে ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। এসময় সার্বিকভাবে সঞ্চয়পত্র কেনার চেয়ে ভাঙানোর সংখ্যা বেশি ছিল। জানা গেছে, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। একই কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সঞ্চয়প্রবণতা কমে গেছে। আবার আমানত ও সরকারের বিল—বন্ডের সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগের একটি বড় অংশ ব্যাংক ও বিল—বন্ডে স্থানান্তর হয়েছে। এ ছাড়া রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর গত সরকারের সুবিধাভোগী ধনী গোষ্ঠীর অনেকে আত্মগোপন করেছেন। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগে ভাটা পড়েছে। তবে জানুয়ারি থেকে সুদহার বাড়ানোর কারণে সামনে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়ার আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। জানা যায়, চলতি অর্থবছর সঞ্চয়পত্র বিক্রি থেকে সরকার ১৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকার নিট ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) সরকারের ঋণ হিসেবে গণ্য হয়, যা বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে ব্যবহার হয়। খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন। তাছাড়া নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের সঞ্চয়প্রবণতাও কমেছে। আবার আমানত ও সরকারের বিল—বন্ডের সুদের হার বেড়েছে। এতে প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিপর্যায়ের বিনিয়োগের বড় অংশ ব্যাংক ও বিল—বন্ডে স্থানান্তরিত হয়েছে। এসব কারণে সঞ্চয়পত্রের নিট বিনিয়োগ কমেছে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে সুদহার বাড়ানোর ফলে এখন সঞ্চয়পত্রের বিক্রি বাড়তে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, চলতি (২০২৪—২৫) অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে (জুলাই—ডিসেম্বর) মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৩০ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। বিপরীতে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৩২ হাজার ৩৫৪ কোটি টাকা। ফলে অর্থবছরের ছয় মাসে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক প্রায় ২ হাজার ২৪৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে ভাঙানোর প্রবণতা কম থাকায় নিট বিনিয়োগ ইতিবাচক ধারায় ছিল। তবে পরের টানা তিন মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর প্রবণতা বেড়ে যায়, এতে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, সর্বশেষ ডিসেম্বর মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ৫৪০ কোটি টাকা। একই মাসে (ডিসেম্বর) ভাঙানো হয়েছে ৮ হাজার ৪৬১ কোটি টাকা। এতে নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক হয়েছে ৩ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। এর আগের মাস নভেম্বরে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা। একই মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৮ হাজার ১৫০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নভেম্বরে নিট বিনিয়োগ ঋণাত্মক হয় ৩ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা। অক্টোবর মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয় ৫ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকার এবং ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ৯ হাজার ৮৩ কোটি টাকা। সে হিসেবে অক্টোবর মাসে নিট বিক্রি (বিনিয়োগ) ঋণাত্মক ছিল ৩ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাস ব্যতিক্রম ছিল। প্রথম মাস জুলাইতে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রি ছিল ৪ হাজার ৯১১ কোটি টাকা। একই মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭২৪ কোটি টাকা। সে হিসেবে জুলাইয়ে নিট বিনিয়োগ আসে ২ হাজার ৮৭ কোটি টাকা। আগস্ট মাসে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ১১২ কোটি টাকা। একই মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৭৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই মাসে নিট বিনিয়োগ ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বরে মোট সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ৫ হাজার ৯৬৮ কোটি টাকা। একই মাসে সঞ্চয়পত্র ভাঙানোর পরিমাণ ১ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা। সে হিসেবে নিট বিনিয়োগ ছিল ৪ হাজার ১০৯ কোটি টাকা। যার কারণে একক মাস হিসেবে শীর্ষে ছিল সেপ্টেম্বর। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, মানুষের গড় আয় কমে গেছে। ক্ষুদ্র সঞ্চয়কারীরা যে পরিমাণ আয় রাখার কথা, তা রাখতে পারছে না। আরও অনেকে জমানো টাকা ভেঙে ফেলছেন, তাদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটানোর জন্য। অন্যদিকে সম্পদশালীদের মধ্যে যারা নামে—বেনামে একসময় সঞ্চয়পত্রে বিপুল বিনিয়োগ করতেন, তাদেরও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগের আগ্রহ কমেছে। সব মিলিয়ে সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com