সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৮ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::

সঞ্চালন লাইনের জন্য বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় শনিবার, ১ মার্চ, ২০২৫

এফএনএস এক্সক্লুসিভ: সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ না হওয়ায় পিছিয়ে যাচ্ছে দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর উদ্যোগ। ফলে সহসা মিলছে না পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সুফল। মার্চ মাসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের একটি ইউনিট চালুর কথা থাকলেও তা হচ্ছে না। কারণ একাধিকবার সময় বাড়িয়েও সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ শেষ করা যায়নি। তবে আগামী জুনে সঞ্চালন লাইনের কাজ শেষ হলে সেপ্টেম্বর বা অক্টোবর নাগাদ রূপপুরের একটি ইউনিটে উৎপাদন শুরু হতে পারে। যদিও সঞ্চালন লাইন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি সংশ্লিষ্টদের দাবি, ফিজিক্যাল স্টার্টআপের জন্য প্রয়োজনীয় সঞ্চালন লাইন প্রস্তুত আছে। আর ইভাক্যেুয়শনের জন্য প্রয়োজন হবে রূপপুর—গোপালগঞ্জ লাইনের ৪০০ কেভি পদ্মা রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনটি। আর্থিক সংকটের কারণে এখন রিভার ক্রসিংয়ের কাজ হচ্ছে না। কারণ ওই কাজ যে কোম্পানি করছে তাদের বিল বকেয়া পড়েছে। বকেয়া বিলের ২৬ মিলিয়ন ডলার সরকারের কাছে চাওয়া হয়েছে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সঞ্চালন লাইনে কাজ ডলার সংকটে পিছিয়ে পড়ছে। রূপপুর বিদ্যুৎ প্রকল্পের গ্রিডলাইন প্রকল্প হওয়ার কথা ছিলো ভারতীয় ঋণে। কিন্তু ভারতীয় কতৃর্পক্ষ ঋণ ছাড় করতে বেশ সময় নেয়। বারবার তাগাদা দেয়া হলেও দ্রুত ঋণ ছাড় হয়নি। এমন অবস্থায় গ্রিডলাইন নির্মাণ প্রকল্পে পরে ভারতীয় ঋণ থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ সরকার। তাছঅঢ়অ করোনা মহামারির কারণে সঞ্চালন লাইনের কাজ পিছিয়ে পড়ে। বর্তমানে পিজিসিবি ও সরকারের অর্থায়নে গ্রিড লাইনের কাজ করা হচ্ছে। সঞ্চালন লাইনের কাজের বিপরীতে এখন প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পড়েছে। তার মধ্যে সঞ্চালন লাইনের ঠিকাদারের বিল বকেয়া ২৫ মিলিয়ন ডলার। সঞ্চালন লাইনের কাজ দ্রুত শেষ করতে আপাতত ২৫ মিলিয়ন ডলার ছাড়ের পিজিসিবি থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। আর একসঙ্গে ওই পরিমাণ অর্থছাড় করা না গেলে প্রতি সপ্তাহে ৫ মিলিয়ন ডলার ছাড় করার অনুরোধ জানানো হয়। সূত্র জানায়, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ ইভাক্যেুয়শনের জন্য হাতে নেয়া হয় তিনটি সঞ্চালন লাইনের প্রকল্প। এর মধ্যে প্যাকেজ—১ প্রকল্পে রয়েছে রূপপুর বাঘাবাড়ী ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট লাইন নির্মাণ। বিগত ২০২২ সালের জুনে লাইনটি কমিশনিং করা হয়। আর প্যাকেজ—৫—এর আওতায় রূপপুর—বগুড়া ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণকাজ গত বছরের এপ্রিলে সম্পন্ন করে কমিশনিং করা হয়েছে। তাছাড়া প্যাকেজ—৩—এর আওতায় রূপপুর—গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি সিঙ্গেল সার্কিট সঞ্চালন লাইনের রুট পরিবর্তনের কারণে প্রায় সাড়ে ৬ কিলোমিটার লাইন বাড়ানো হয়। তাতে আরো ১৫টি টাওয়ার স্থাপন করতে হচ্ছে। রূপপুর—গোপালগঞ্জ ৪০০ কেভি লাইন নির্মাণের সমন্বয় করে ৪০০ কেভি পদ্মা রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনের কাজটি চলতি বছরের মার্চের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময়ে তা শেষ হচ্ছে না। মূলত দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিদেশি জনবল তাদের নিজের দেশে ফিরে যাওয়ায় পদ্মা রিভার ক্রসিং সঞ্চালন লাইনের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। তবে ওই প্রকল্পের কাজ গত জানুয়ারি থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে। বিদ্যমান অবস্থায় গ্রিডলাইন নির্মাণে কিছু প্রকল্পের মেয়াদ আরো এক দফা বাড়ানোর প্রয়োজন হবে। সূত্র আরো জানায়, পারমাণবিক কেন্দ্রটি চালাতে হলে গ্রিডলাইন ছাড়াও বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত রাখতে হবে অন্তত ১ হাজার ৯০৭ মেগাওয়াট সক্ষমতার গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। সমপ্রতি রাশিয়ান পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ওই সুপারিশ করা হয়েছে। কোনো কারণে রূপপুরে বিঘ্ন ঘটলে বিকল্প কেন্দ্র থেকে যেন সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়। তাকে স্পিনিং রিজার্ভ বলা হয়। স্পিনিং রিজার্ভ হলো বিদ্যুতের এমন স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা যাতে বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর বিদ্যুৎ উৎপাদন হঠাৎ কমে গেলেও গ্রিড ব্যবস্থার কোনো ক্ষতি না হয়। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের পাওয়ার সিস্টেমে সংযুক্তিকরণের অন্যতম পূর্বশর্ত হলো সিস্টেম ফ্রিকোয়েন্সি স্থিতিশীলতা ও জাতীয় গ্রিডের নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করা। এ দুটো নিশ্চিত না করে রূপপুর বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু করা যাবে না। এদিকে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক ড. মো. জাহেদুল হাছান জানান, গ্রিড কানেকশন পাওয়ার চার মাসের মধ্যে প্রথম ইউনিট উৎপাদনে যেতে পারবে। চলতি বছরের তৃতীয় প্রান্তিকে বিদ্যুৎ সরবরাহের আশা করা হচ্ছে। দু—তিন মাস লাগবে ফিজিক্যাল স্টার্টআপ (ফুয়েল লোড) এবং পাওয়ার স্টার্টআপ (শক্তি উৎপাদন) করতে এক মাস লাগবে। অন্যদিকে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আবদুর রশিদ খান জানান, আর্থিক সংকটে বিল পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এখন বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার। সঞ্চালন লাইনের ঠিকাদারের বিল পরিশোধ করতে এখন ২৫ মিলিয়ন ডলার প্রয়োজন। এটা দিতে পারলে এপ্রিলের মধ্যে সঞ্চালন লাইনের সকল কাজ শেষ করা সম্ভব। ঠিকাদার কোম্পানিকে দ্রুত কাজ শেস করার জন্য চাপে রাখা হলেও তাদের বিল তো প্রদান করতে হবে। এ বিষয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. রেজাউর করিম জানান, বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে। গ্যাসের অভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তারপরও বিষয়টি নিয়ে পেট্রোবাংলাসহ অন্যান্য পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com