ঢাকা ব্যুরো \ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল আগের সুর বদলে এবার জানিয়েছেন, সঠিকভাবে এবং আলাহর দিকে তাকিয়ে দায়িত্ব পালন করতে পারার জন্য সবাইর দোয়া চাই। জানান, অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। সকল অংশীজনের প্রতিশ্র“তি থাকতে হবে, কমিটমেন্ট থাকতে হবে যে, তারা নির্বাচনকে সহযোগিতাপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের সুযোগ করে দেবেন। আর জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জাসদ এর সঙ্গ সংলাপে সিইসি জানিয়েছেন, সংবিধান, আইন, বিধিসহ নানা ধরনের আইনগত বিষয় পর্যালোচনা করে মনে হয়েছে আমাদের ক্ষমতার খুব একটা ঘাটতি নেই। ক্ষমতা খুব একটা অভাব আছে- এটাও ফিল করছি না। আইনানুগভাবে প্রয়োগ করলে সহযোগিতা দেন (রাজনৈতিক দল)। আর যদি সমর্থন না দিয়ে বিরুদ্ধাচারণ করেন, তাহলে আমাদের জন্য কঠিন হবে। আমাদের উপর আরোপিত ক্ষমতাগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করবো; এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা পেতে চাই। সিইসির বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে জাসদের সভাপতি ও এমপি হাসানুল হক ইনু জানান, নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সালিশকেন্দ্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ না হয়ে যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন করুন। রবিবার (২৪ জুলাই) আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে পৃথকভাবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাসদের সঙ্গে সংলাপে সিইসি হঠাৎ ওই সহায়তার কথা জানান। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকাও হবে অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ। কেউ বলছে নির্বাচনকালীন সরকার, কেউ তত্ত¡াবধায়ক সরকার, যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত হয়নি বা সেটি কিভাবে হবে, তবে সরকার থাকবে। নির্বাচনের সময় যে সরকার থাকবে, সেই সরকার আমাদেরকে সহায়তা করবে। সেটি সরকারের সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ দায়িত্ব হবে। কমিশন তার দায়িত্ব ও ক্ষমতা সংবিধান, আইন ও বিধির আলোকে প্রয়োগ করবে। রাজনৈতিক দলের উদ্দেশে সিইসি বলেন, আমরা আমাদের যে দায়িত্বের কথা বলেছেন, সেগুলো আমরা প্রয়োগ করবো ইনশাআলাহ। আপনাদের লিখিত, মৌখিক মতামত পেয়েছি এবং এটা আমরা পরবর্তীতে পর্যালোচনা ও বিবেচনা করব অবশ্যই। আবারও বলছি- জাতীয় সংসদের সাধারণ নির্বাচন একটি কঠিন ও জটিল কর্মযজ্ঞ। সকলের আন্তরিক সমবেত প্রয়াস থাকলে এমন কঠিন ও জটিল কর্মযজ্ঞ সাধন অসাধ্য নয়। নাগরিক সচেতনতা প্রয়োজন এবং সকলের আন্তরিক সহায়তা, সমবেত প্রয়াস ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন। আমাদের সহকর্মীরাও বলেছেন যে, আলাহর পাকের রহমত এবং দয়া যদি না থাকে আমাদের জন্য বিষয়টি কঠিন হবে। কাজেই আমাদের জন্য আপনারা অবশ্যই দোয়া করবেন যেনো আমরা আমাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে এবং আলাহর দিকে তাকিয়ে পালন করতে পারি। এর আগে স্বাগত বক্তব্যে সিইসি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে লক্ষ্য করে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের আয়োজন করেছি। সকল রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য করতে অনুরোধ করে যাচ্ছি। তিনি আরও বলেন, আপনাদের প্রতি আমাদের একটাই অনুরোধ থাকছে, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমাদের করণীয় নির্ধারণে আপনারাও ভূমিকা রাখবেন। অবাধ, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন সকলেরই প্রত্যাশা। সে লক্ষ্যে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং থাকবে। আপনাদের সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা সবার পরামর্শ ও মতামত জানার জন্য চেষ্টা করছি। সিইসি বলেন, কোনো দলকে ভোটে আনতে তারা বাধ্য করতে পারে না, এটা তাদের দায়িত্বও নয়। তবে অংশগ্রহণমূলক ভোটের জন্য সব দলকে আহŸান করে যাবে। নির্বাচনে কমিশনের ক্ষমতার কোনো ঘাটতি নেই, আইন-বিধি প্রয়োগ কঠোর থাকবে তারা। সবার বক্তব্য নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক হয় উলেখ করে সিইসি বলেন, শাসক দলকে বলতে শুনেছি- আমরা ওদেরকে নিয়ে নির্বাচন করতে চাচ্ছি। আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলেছি- আমরা কাউকে বাধ্য করতে পারবো না, সেটা আমাদের দায়িত্বও নয়। আমাদের দায়িত্ব সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচনের জন্য সবাইকে আহŸান করা। সিইসি জানান, বিদেশি কুটনীতিকদের দু’টি গ্রুপ কমিশনের সৌজন্য সাক্ষাত করেছেন, তবে কোনো ধরনের কোনো পরামর্শ দেয়নি। এটা তারা আগের কমিশনের মতোই ধারাবাহিকতা অনুসরণে ইসির সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। সিইসি আরও জানান, নির্বাচনের সময় বিধি বিধানগুলো কঠোরভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সে সময় ইসির দৃষ্টিভঙ্গি কঠোর হতে পারে শান্তিপূর্ণ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন সিইসি। তিনি আরও বলেন, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড-এর কথা এসেছে। বিভিন্ন কারণে আমাদের দেশে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডটা কেউ বাড়তি সুবিধা ভোগ করে, কেউ কেউ কমতি সুবিধা ভোগ করে। কোনো দিকে পক্ষপাতদুষ্ট আবার কোনো দিকে নীতিবান হয়ে পড়ি অথবা ফেল্ড লেভেলে সহায়ক হওয়ার বিষয়গুলো আসছে। সবাই যেন নির্বিঘেœ কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারেন। আমাদের দায়িত্ব মূলত একটাই। খুব বেশি দায়িত্ব আমাদের না। এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো আসবে। সহিংতা রোধে সবার সহযোগিতা চেয়ে তিনি বলেন, নির্বাচনে অনেক সময় সহিংস হয়ে পড়ি অথবা অসংযত হয়ে পড়ি। আপনাদের সহায়তা চাইব- ভোটার যাতে নির্বিঘেœন ভোট দিতে পারে কাকে দিল কাকে দিল না এটা মাথার ব্যাথার বিষয় না। এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা চাইব। সহযোগিতা পেলে কঠিন কাজও অসাধ্য নয়। জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু জানান, আমরা মনে করি, সংবিধান ও আইন অনুযায়ী জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকারসমূহের নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সংবিধান ও আইন অনুযায়ী যথাসময়ে জাতীয় নির্বাচনসহ সকল নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠানের জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করে প্রস্তুত থাকা। সংলাপে সিইসি ছাড়াও চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, অতিরিক্ত সচিব সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।