শুক্রবার, ০৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
সংবাদ শিরোনাম ::
দেশের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে গেছে হাসিনার স্বৈরতন্ত্র: কূটনীতিকদের ইউনূস ভারতে নারী চিকিৎসককে ধর্ষণ-হত্যার প্রতিবাদে শাটডাউন কর্মসূচির ঘোষণা চিকিৎসকদের নলতা আহসানিয়া মিশন রেসিডেনসিয়াল কলেজের অধ্যক্ষের দুর্নীতি ॥ উত্তাল নলতা ॥ শিক্ষক কর্মচারীরা মতবিনিময় করলেন ডাঃ শহিদুল আলম ও চেয়ারম্যান আজিজুর রহমানের সাথে মহামারীর দ্বারপ্রান্তে গাজা আলোচনায় থাইল্যান্ড ॥ বন্দী থাকসিন মুক্ত হরিনগর বাজারে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানদের মাঝে নগদ অর্থ প্রদান পাইকগাছায় একটি বাঁশের সাঁকো পারাপারে এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি মাথাভারি হচ্ছে প্রশাসনের ॥ বাড়ছে সরকারের দু:চিন্তা ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ এর পদত্যাগ দাবীতে-মানববন্ধন চাম্পাফুল ইউনিয়ন বিএনপির আয়োজনে শান্তি সমাবেশ অনুষ্ঠিত

সমন্বিত উদ্যাগ ছাড়া মৃত্যু কমলেও ক্ষতি কমানো সম্ভব না

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ মে, ২০২৪

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকার মানুষের জীবনমান রক্ষায় দরকার প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় রেখে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন কর্মসূচি হাতে নেওয়া। দুর্যোগ আসলেই তোড়জোড় না দেখিয়ে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় উপকূলীয় এলাকায় সমন্বিত দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা। এসব নিয়মের ব্যত্যয় ঘটলে দুর্যোগে মানুষের মৃত্যু কমানো সম্ভব হলেও জীবনমানের ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তান্ডবে দেশের উপকূলীয় এলাকার জেলাগুলো লন্ডভন্ড হয়েছে। এবার প্রাথমিক তথ্যে সাতক্ষীরার শ্যামনগর, পটুয়াখালী ও ভোলায় একজন করে তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্যের মৃত্যুর সংখ্যা ৭এর বেশি না অর্থা সিঙ্গেল ডিজিটের। তবে এবারের দুর্যোগে ঘূর্ণিঝড় রেমালের ঝুঁকিতে বাংলাদেশের প্রায় ৮৪ লাখ মানুষ। তার মধ্যে ৫ বছরের কম বয়সী ৭ লাখ ৬০ হাজার শিশু। ৪৩ লাখ নারী এবং এক লাখ ২৭ হাজার ৯৫৬ জন বিকলাঙ্গ। জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ এক বিবৃতিতে এ কথা বলেছে। ইউনিসেফ বলেছে, নিডস অ্যাসেসমেন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের মতে পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এদিকে, জোয়ারের পানিতে নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। ভারী বৃষ্টি আর জোয়ারের পানিতে দুর্ভোগে পড়েছেন বাসিন্দারা। বেশ কয়েকটি জেলা বিদ্যুৎহীন আছে। ১৯ উপজেলায় উপজেলা পরিষদ ভোট স্থগিত করা হয়েছে। মহাবিপৎসংকেত কমে আসলেও দুমড়েমুচড়ে যাচ্ছে উপকূলীয় জেলাগুলো। উপকূলের বেশ কয়েকটি এলাকার গাছপালা, ঘরবাড়ি তছনছ হয়েছে গেছে। তলিয়ে গেছে মাছের ঘের, কৃষি খামারসহ বিস্তীর্ণ মাঠ। বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টি গত রবিবার রাত ৮টার দিকে বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত করে। এরপর উপকূল থেকে শুরু করে সারা দেশে বৃষ্টি শুরু হয়। গতকাল বিকেল পর্যন্ত তাণ্ডব অব্যাহত ছিলো। বুয়েটের বন্যা ও পানি ব্যবস্থাপনা ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক একেএম সাইফুল বলেন, দূর্যোগ আসলেই আমাদের তোড়জোড় শুরু হয়। কিন্তু এটা চলে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট যারা থাকেন বেমালুম ভুলে যায়। এটাই দেশে বড় একটা সমস্যা। দীর্ঘমেয়াদী কোনো পদক্ষেপ নেই না। পরিকল্পনায় বিশ্বের যেকোনো দেশ থেকে আমরা খারাপ; যোগ করেন বুয়েটের এই প্রকৌশলী। বলেন, তবে ঘূর্ণিঝড় রেমালে সরকারের একটা সাফল্য মৃত্যুর হারটি সিঙ্গেল ডিজিটের। এই সাফল্যের পেছনে আরও কারণ রয়েছে, যেমন ১৫ কোটি মানুষ মোবাইল ব্যবহার করছে, তারাও তথ্য উপাত্ত সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে অন্যদের দূর্যোগের ক্ষতি থেকে সচেতন হতে সর্তক করছে। স্যাটেলাইট ও গণমাধ্যমের অগ্রীম তথ্য প্রদানেও সহায়ক হচ্ছে। তিনি বলেন, দূর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির অনেকগুলি কারণ রয়েছে। এর মধ্যে বেড়িবাঁধগুলোয় দুর্বল হয়ে যাওয়া, মাটির দেয়াল দিয়ে ঘর নির্মাণ ও ব্যবসায়িক মুনাফার কারণে বাঁধগুলো কেটে ঘের করা। ক্ষয়ক্ষতি কমাতে হলে সরকারকে এসব জায়গায় মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিনিয়ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দুর্যোগ সহনীয় সাইক্লোন সেন্টারের সংখ্যা বাড়াতে হবে। উপকূলীয় এলাকায় দূর্যোগ সহনীয় ঘর নির্মাণ করে দেয়ার ব্যবস্থা করা, এর জন্য প্রয়োজনে সরকার স্বল্প সুদে লোনের সুবিধা প্রদান এবং বেড়িবাঁধগুলো পরিকল্পনা মাফিক তৈরি করা এবং টেকসই উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ। কারণ এই দূর্যোগে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা নির্ণয় করতে না পারলেও আইলায় ক্ষতিগ্রস্তের হার ছিলো ১ বিলিয়ন ডলারের মতনই। মৃত্যুর সংখ্যা কমিয়ে আনা যেকোনো দূর্যোগের একটা বড় সাফল্য বলে জানান ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক এন্ড ম্যারিটাইম ইনস্টিটিউটের (নোয়ামি) নির্বাহী পরিচালক ও সাউথ এশিয়ান মিটিওরোলোজিক্যাল এসোসিয়েশনের (সামা) যুগ্ম সম্পাদক ড. মোহন কুমার দাশ। তিনি বলেন, এটা যে কাজ করছে ভালো দিক। কিন্তু জনসচেতনতা ছাড়া এটাকে মোকাবেলা করা সম্ভব না। বলেন, বাতাসের গতিবেগ কম বলে যদি হেলাফেলা করা হতো তাহলে ঘটনা ভিন্নরকম হতো। তিনি বলেন, মৃত্যু বেশি হলে এক ধরণের সর্তকতা (এলামিং) তৈরি হতো। কিন্তু যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনো অংশে কম না। যে মানুষের ঘর ভেঙেছে, বাড়িতে লবন পানি ঢুকে ফসলের ক্ষতি করেছে ও বেড়িবাঁধ ভেঙে দীর্ঘস্হায়ী ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। এর আগে ২০০৭ ও ২০০৯ সালে আইলা ও সিডরের ক্ষতি এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি। এর মধ্যে নতুন এই দূর্যোগ তাদের জীবনের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিবে নিঃসন্দেহে। বলেন, আমাদের সুন্দরবন ও সুন্দরবন কেন্দ্রীক যেসব জায়গায় আঘাত করে সেখানে দুই থেকে চার দশকে কি পরিমাণ ক্ষতি করেছি তা চিহ্নিত হওয়া দরকার। এটা দেখা দরকার যে উন্নয়নের নামে সঠিকভাবে সুরক্ষার ব্যবস্হা ঠিক রাখতে পেরেছি কি পারিনি৷ একটু অবলোকন করলেই দেখতে পারবেন অপরিকল্পিতভাবে যথেষ্ট পরিমাণ পোল্ডার ও অবকাঠামো নির্মাণ করেছি যেটা পরিবেশের সঙ্গে খাপখায়নি। আমরা সুন্দরবনের বড় ধরণের ধ্বংসযজ্ঞ করেছি এবং করে চলেছি। মাঝখানে আগুন লেগে অনেক ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন দুর্যোগ থেকে সুন্দরবন আমাদের যেভাবে রক্ষা করে তাকে রক্ষা করার আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। ঘূর্ণিঝড় আমাদের অঞ্চলে নিদিষ্ট এবং সারাবছর হচ্ছে না জানিয়ে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, মে -জুনে ও নভেম্বর-ডিসেম্বরে ঝড় হবে তাহলে পোল্ডারগুলোকে যথাযথ মেরামত করে রাখি না কেনো। যখন পানি আসে তখন মেরামতে নেমে পড়েন এর গাফলতির দায় কার তা খুঁজে শাস্তির আওতায় আনা উচিত দোষীদের। সুনামির যখন বার্তা পেলেন তখন আপনি দৌড়াচ্ছেন, এটা কারো কাম্য না। বলেন, রাজধানী ঢাকার দিকে তাকালে বুঝতে পারবেন অব্যস্হাপনা কতো প্রকার ও কি কি? কারণ জুন-জুলাইতে যখন বৃষ্টি থাকে তখন আপনি রাস্তা কাটাকাটি শুরু করেন মানুষের ভোগান্তি বাড়িয়ে দেন, মানুষকে কষ্ট দেয়া একটা রেওয়াজে পরিণত হয়েছে। এটা করা বাজেট বাস্তবায়নের জন্য। এখানে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্হাপনায় বড় ধরণের ঘাটতি রয়েছে। বলেন, বিশ্বের যেসব দেশ দুর্যোগপ্রবন তার মধ্যে ভিয়েতনাম, ফিলিপাইন, ভারতের কিছু অংশ ও বাংলাদেশ। দুর্যোগ ঝুঁকি এলাকায় বসতভিটা এমনভাবে বানানো হয় না যে দুর্যোগ মোকাবেলায় ভূমিকা রাখবে। আবার গাছপালা লাগানো হলেও পরিকল্পিত না। উদাহরণ হিসেবে বলেন, আপনি ইউক্যালিপটাস গাছ লাগাচ্ছেন সামান্য বাতাসে ভেঙে পড়ছে। অথচ বুঝতে হবে এটা দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক না৷ তাই যেকোনো দুর্যোগ থেকে সুরক্ষা পেতে চাইলে অবশ্যই প্রকৃতির ভারসাম্য সমুন্নত রেখে উন্নয়ন কার্যক্রম নিতে হবে। অর্থাৎ ইকো সিস্টেম বেইজ সলিউশন বা ন্যাচার বেইজ সলিউশন। এর জন্য রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা অপরিহার্য। অন্যথায় বছর বছর দুর্যোগ আসবে লোক দেখানো কিছু কর্মসূচি নেওয়া হবে, কিন্তু উপকূলীয় এলাকার মানুষ সুফল পাবে না; ভোগান্তি নিত্যসঙ্গী হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com