এফএনএস : আজকাল বিয়ের সম্পর্ক আগের চেয়ে জটিল হয়ে উঠেছে এবং সহজেই ভেঙে যাচ্ছে। তবে একটি বিয়ে রাতারাতি ভেঙে যায় না। বরং ধীরে ধীরে ছোট ছোট পরিবর্তনের মাধ্যমে এটি ভেঙে পড়ে। এসব সমস্যা প্রথমে গুরুতর মনে না হলেও সময়ের সঙ্গে তা প্রকট রূপ নিতে পারে। অনেক দম্পতি প্রথমে এই লক্ষণগুলো উপেক্ষা করে বা কম গুরুত্ব দেয়, আশা করে যে পরিস্থিতি ভালো হবে। এই চিন্তায় শুরু থেকে সম্পর্কের যত্ন করে না। এই সূক্ষ্ম সংকেতগুলো আগে থেকে চিনতে পারলে অপরিবর্তনীয় ক্ষতি হওয়ার আগেই সম্পর্ক মেরামতের সুযোগ থাকে। তাই জেনে নিন কোন কোন লক্ষণ বিবাহবিচ্ছেদের দ্বারপ্রান্তে থাকার ইঙ্গিত দেয়— ১. কথোপকথন শুধু কাজের কথায় সীমিত হয়ে যায় : আপনার সঙ্গীর সঙ্গে কথোপকথন কি শুধু সাংসারিক দরকারি বিষয়েই সীমাবদ্ধ? যেমন — ‘বিলটা দিয়েছ?’ বা ‘তুমি কি এখন খাবে?’ এমন সংবেদনশীলতাহীন কথোপকথন সম্পর্কে ভাঙনের প্রথম সতর্কসংকেত। একটি সম্পর্কে আবেগ, ভয়, স্বপ্ন, এবং আশার আদান—প্রদান জরুরি। কিন্তু যখন দম্পতি একে অপরের অনুভূতি নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে দেয়, তখন তারা একসঙ্গে থাকলেও আলাদা জীবনযাপন করতে শুরু করে। ২. ছোট সমস্যা বড় হয়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে : প্রতিটি সম্পর্কেই উত্থান—পতন থাকে। কিন্তু যখন ছোট বিষয়গুলো সহজেই বড় সমস্যায় পরিণত হয় এবং ক্ষোভ জন্ম দেয়, তখন এটি একটি বড় বিপদসংকেত। নোংরা খাবার প্লেট থেকে শুরু করে বিবাহবার্ষিকী বা জন্মদিনের তারিখ ভুলে যাওয়া নিয়ে বিরক্তি ছোট মনে হলেও, পুঞ্জীভূত হতাশা সম্পর্কের উপর চাপ সৃষ্টি করে। সমস্যা সমাধানের বদলে নীরব অভিমান জমতে থাকলে, শেষ পর্যন্ত সম্পর্কটিই ভেঙে যেতে পারে। ৩. শারীরিক স্পর্শের অভাব : প্রতিদিনের দুই—এক মুহূর্তের স্পর্শ দম্পতিদের সম্পর্কের একটি জ্বালানির মতো। পাশাপাশি হাঁটার সময় হাতটা ধরা, কাজের ফাঁকে একবার জড়িয়ে ধরা — এগুলো সম্পর্কের আবেগী বন্ধনকে শক্তিশালী করে। কিন্তু হঠাৎ করে এই স্পর্শ বা স্নেহের অভাব দেখা দিলে, তা সম্পর্কে আবেগী দূরত্বের ইঙ্গিত দেয়। ৪. ভবিষ্যৎ পরিকল্পনায় সঙ্গীকে অন্তভুর্ক্ত না করা : বিয়ের সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো সঙ্গীর সঙ্গে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা। কিন্তু যখন কোনো দম্পতি ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় (যেমন — ছুটি, ক্যারিয়ার, বা বাসস্থান) একে অপরকে বাদ দিতে শুরু করে, তখন এটি একটি গভীর সতর্কতার বিষয়। সময়ের সঙ্গে এই মানসিক দূরত্ব সম্পর্কে বড় সমস্যা ডেকে আনে। ৫. একে অপরের সঙ্গে মানসিকভাবে নিরাপদ বোধ না করা : বিশ^াস ছাড়া কোনো সম্পর্ক টিকে থাকতে পারে না। যদি আপনি আপনার সঙ্গীর সঙ্গে মানসিকভাবে অনিরাপদ বোধ করেন বা খোলামেলা কথা না বলেন, তাহলে দীর্ঘমেয়াদে বিয়ে ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আস্থা ফিরে পেতে দরকার নিয়মিত সহানুভূতি এবং ধৈর্য — এটি বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য অপরিহার্য। এই লক্ষণগুলো চিনে সময়মতো পদক্ষেপ নিলে সম্পর্ক মেরামতের সুযোগ থাকে। একটা সময় বিবাহবিচ্ছেদ একটি ভয়াবহ ট্যাবু ছিলো। প্রচণ্ড অখুশি বিয়েতেও মানুষ জীবন পার করে দিত সমাজে অসম্মানের ভয়ে। তবে এখন সময় পাল্টেছে। ছোট্ট একটি জীবন মানুষ এখন উপভোগ করে, ভালোবাসার জীবনসঙ্গীকে নিয়ে পার করতে চায়। তাই সম্পর্কের সমস্যাগুলোকেও এখন দম্পতিরা আগের চেয়ে অনেক বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখে। তাই বিবাহবিচ্ছেদ বেড়ে যাওয়ার পরিসংখ্যান দেখে আতঙ্কিত না হয়ে নিজ নিজ সম্পর্কে সুন্দর করতে পদক্ষেপ নিন। আনন্দে থাকুন।