এফএনএস: বাজারে দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘এটা আমি মনে করি, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা ছিল। তার কারণে আজকে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল আছে। আমরা চেষ্টা করছি মার্কেটকে স্থিতিশীল রাখা। আমরা চাই, দ্রব্যমূল্য যে সহনীয় পর্যায়ে এসেছে, সামনে ঈদ আছে, আমরা সেটা ধরে রাখতে চাই।’ গতকাল রোববার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক ব্রিফিংয়ে তিনি এ তথ্য জানান। শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা গত অক্টোবর মাস থেকেই তার পুরো কেবিনেটকে বলছেন যে, এটা নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি নিতে হবে। তখন থেকে বাংলাদেশের যত বড় বড় আমদানিকারক আছেন, তাদের সঙ্গে সিরিজ আকারে বৈঠক হয়েছে। সবাই মিটিং করেছে। এর বাইরে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিনকে আলাদা দায়িত্ব দেওয়া হয়েছেÑ রমজানে যাতে কেউ কোনও প্রকার অস্থিরতা তৈরি করতে না পারেন। এর সঙ্গে আমরা প্রতিনিয়ত মনিটর করেছি আন্তর্জাতিক বাজারের প্রাইজগুলো, কীভাবে সাপ্লাই বাড়ানো যায়। আবার কিছু কিছু পণ্যে আমরা দেখেছি যে, ট্যাক্স বসানো, সেগুলো কমানো হয়েছে। ট্যাক্স কমানোর পর কিন্তু খেজুরের দাম অনেক কমে এসেছে। চালের ক্ষেত্রেও আমরা কমিয়েছি, ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রেও কমানো হয়েছে। কমানোর কারণে আমদানি বেড়েছে। একইসঙ্গে খুচরা পর্যায়ে দাম স্থিতিশীল হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আরও কিছু কিছু বিষয় ছিল যেমন— আমাদের মার্কেটে অর্থাৎ শহরে যেসব কৃষি পণ্য কৃষকদের কাছ থেকে আসে, সেটা যেন ব্যহত না হয়, সেগুলোর দিকেও নজর ছিল। পুলিশকে বারবার বলা হয়েছেÑ সড়কে চাঁদাবাজি যতরকমভাবে কমানো যায়, সেদিকে লক্ষ্য ছিল। এছাড়া বড় বড় সরবরাহকারীদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে কেউ যাতে অভিযোগ না করে, ডলার পাওয়া যাচ্ছে না আমদানি করার জন্য। ডলারের পর্যাপ্ত সরবরাহ আমরা নিশ্চিত করেছি। আগের সরকারের সময় এলসিতে ডলার—প্রাপ্তি অনেক বড় সমস্যা ছিল। আমাদের রিজার্ভ ঠিক রেখে ডলারের সরবরাহ নিশ্চিত করেছি সবার জন্য। সেই বিষয়ে আমদানিকারকদের কিন্তু অভিযোগ আসেনি।’ আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে অক্সিলারি ফোর্স প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য যে অক্সিলারি ফোর্সের কথা বলা হচ্ছে, এটি যারা গেটেড কমিউনিটি (পাড়া—মহল্লার বাসিন্দা) তাদের জন্য আমরা আশা করছি, তাদের জন্য এটি আরও স্বস্তির জায়গা তৈরি করবে। কারণ এই কমিউনিটির মধ্যে যারা গার্ডের কাজ করেন, তাদের সিনিয়র বা প্রধানকে পুলিশ অফিসারের ভূমিকায় দেওয়া হচ্ছে। তিনি অ্যারেস্ট করতে পারবেন। তাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে, যার ফলে এটি তার ক্ষেত্রে একটি প্রতিরোধের জায়গা কাজ করবে। এর ফলে আমরা আশা করছি, যেসব জায়গায় গেটেড কমিউনিটি আছেÑ সেখানে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভালো হবে। আমরা এটা প্রতিনিয়ত মনিটর করবো।’ তিনি আরও বলেন, ‘বিশে^র অনেক বড় বড় শহরে এই ব্যবস্থা আছে। কেননা, সরকার তো সবকিছু করে না অন্যান্য দেশে। এই কারণে প্রাইভেট সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও তারা এক ধরনের সম্পর্ক বজায় রাখে। আমরা মনে করি, শহরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরেকটু ভালো করার জন্য এটি একটি ভালো উদ্যোগ।’ কলকারাখানায় গ্যাসের সরবরাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিতের চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের যে দাম, সেটার সঙ্গে কিছুটা সমন্বয়ের কথা আমরা বলছি। অন্তর্বতীর্ সরকার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেÑ যাতে গ্যাসের সরবরাহ সবার ঘরে ঘরে যায়, যারা ইন্ডাস্ট্রি করবেন তাদের কাছে যেন গ্যাস পৌঁছানো যায়। সেই লক্ষ্যে কাজ করা হচ্ছে, সেজন্য গ্যাসের সরবরাহ যাতে বাড়ানো যায় সেজন্য আমরা গ্যাজপ্রমকে পাঁচটি নতুন কুপ খনন করার চুক্তি করতে যাচ্ছি। এছাড়া বিদেশ থেকে গ্যাস আনার জন্য আমরা এলএনজি আনার সমঝোতা চুক্তি করার চিন্তা ভাবনা করছিÑ বিশে^র বড় পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো’র সঙ্গে কথা বলছি। স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কেনা আরও বাড়ানোর চেষ্টা করছি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানির সঙ্গেও আমাদের প্রাথমিক একটি চুক্তি হয়েছে এবং আমাদের স্থানীয় গ্যাস সন্ধানের কার্যক্রম খুব দ্রুত বাড়াচ্ছি। আমার আশা করছি, খুব দ্রুত গ্যাস সম্পর্কিত যে সমস্যা সেটি কিছুই থাকবে না।’ অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সংস্কার প্রক্রিয়া পুরোটাই এখান থেকে উৎপত্তি হয়েছে। অন্তর্বতীর্ সরকার এখানে যথেষ্ট স্বচ্ছতা রাখছে। ছয়টি কমিশন করা হয়েছে, তারা তাদের রিপোর্ট দিয়েছে। কমিশনের প্রধানদের নিয়ে ঐকমত্য কমিশন করা হয়েছে, তাদের একটা মিটিংও হয়েছে এবং সামনে আরও কয়েকটা মিটিং হবে। এই কমিশন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পরামর্শ করবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটি হোম গ্রোন। তবে বিদেশে আমাদের যারা ভালো সহযোগী আছেন, শুভাকাক্সক্ষী আছেনÑ তারা আমাদেরকে তাদের সাপোর্টের কথা জানিয়েছেন। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে টেকনিক্যাল সাপোর্ট লাগতে পারে , সেগুলোর কথাও বলছেন। আমরা সেটি নেবো কিনা সেই বিষয়ে এখনও বলিনি। আমরা আশা করছি, সামনে এই পুরো প্রক্রিয়া হোম গ্রোন থাকবে।’