এফএনএস : খাদ্যপণ্যে সরকারি খাদ্যগুদামগুলো এখন পূর্ণ। অর্থনৈতিকভাবে সাড়ে ২০ লাখ টন ধারণক্ষমতার গুদামে খাদ্যশস্য মজুদ ২০ লাখ টন ছাড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমন ধান সংগ্রহ এবং আমদানিকৃত গম মজুদ করা নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। আগামী ২৮ ফেব্র“য়ারি চলতি বছরের আমন সংগ্রহ মৌসুম শেষ হবে। তবে ইতিমধ্যে সরকারের চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে। কিন্তু এখনো প্রায় ২ লাখ ৪০ হাজার টন ধান কেনা বাকি রয়েছে। তাছাড়া গম আমদানির জন্য এলসিও চালু করা হয়েছে। আর আমদানি করা গমও কিছুদিনের মধ্যেই দেশে আসতে শুরু করবে। কিন্তু ওসব শস্য সংরক্ষণের জন্য সরকারের গুদামে আর জায়গা নেই। খাদ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সরকারের গুদামগুলোয় ১ ফেব্র“য়ারি মোট ২০ লাখ ২ হাজার টন খাদ্যশস্য মজুদ ছিল। তার মধ্যে ১৬ লাখ ৭৬ হাজার টন চাল, ২ লাখ ৯৫ হাজার টন গম ও ৪৮ হাজার টন ধান। গত অর্থবছরের একই সময়ে মোট খাদ্যশস্য মজুদ ছিল ৬ লাখ ৭৫ হাজার ৮৫০ টন। তার মধ্যে চাল ছিল ৫ লাখ ২৫ হাজার ১৬০ টন, গম ১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬০ টন ও ধান ছিল ৬০ হাজার ৭০০ টন। ওই হিসেবে এক অর্থবছরের ব্যবধানে খাদ্যশস্য মজুদ বেড়েছে ১৩ লাখ ২৬ হাজার ১৫০ টনেরও বেশি। গত ৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া আমন সংগ্রহ মৌসুম ২৮ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত চলবে। চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ৩ লাখ টন আমন ধান, ৫ লাখ টন সেদ্ধ আমন চাল সংগ্রহ করা হবে। তবে ১ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৯৫৪ টন আমন ধান ও ৫ লাখ ৫৯ হাজার ১৮৫ টন সেদ্ধ আমন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। আর চালের আকারে হিসাব করলে মোট সংগ্রহের পরিমাণ ৫ লাখ ৯৯ হাজার ২৯ টন। ফলে গুদাম খালি না থাকায় বাকি ধান সংগ্রহ নিয়ে জটিলতা তৈরির আশঙ্কা রয়েছে। সূত্র জানায়, খাদ্য মন্ত্রণালয় সারা দেশের বিভিন্ন কৌশলগত স্থানে সাইলো, সিএসডি ও দেশের প্রায় সব জেলা-উপজেলায় কমপক্ষে একটি এলএসডি, গুরুত্বপূর্ণ উপজেলায় দুই বা ততোধিক এলএসডির মাধ্যমে খাদ্য ব্যবস্থাপনার প্রশাসনিক ও পরিচালন কাজ সম্পাদন করে। ২০০৭-০৮ অর্থবছর থেকে চলতি অর্থবছর তুলনা করলে দেখা যায় দেশে সরকারি মজুদাগারের কার্যকর ধারণক্ষমতা বেড়েছে। ২০০৭-০৮ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের কার্যকর ধারণক্ষমতা ছিল ১৪ লাখ ৯৩ হাজার টন, বর্তমানে সরকারের মজুদাগারগুলোর ধারণক্ষমতা প্রায় ২০ লাখ ৪০ হাজার টন। কয়েক বছর ধরেই খাদ্যশস্যের মজুদক্ষমতা ২১ লাখ টনে আটকে আছে। অবশ্য সম্প্রতি ওই সক্ষমতা বাড়াতে বেশকিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওসব কার্যক্রম শেষে মজুদাগারগুলোর মোট ধারণক্ষমতা প্রায় ছয় লাখ টন বাড়বে। পর্যায়ক্রমে ওই ধারণক্ষমতা ৩০ লাখ টনে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৭ মাসে অর্থাৎ ১ ফেব্র“য়ারি পর্যন্ত মোট খাদ্যশস্য আমদানি হয়েছে ২৯ লাখ ৬২ হাজার টন। তার মধ্যে সরকারিভাবে চাল আমদানি করা হয়েছে ৬ লাখ ৩৭ হাজার টন ও বেসরকারিভাবে ২ লাখ ৮৬ হাজার টন। তাছাড়া সরকারিভাবে গম আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৯০ হাজার টন ও বেসরকারিভাবে ১৬ লাখ ৪৯ হাজার টন। মূলত খাদ্যশস্যের বাজারমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রবণতা রোধ, নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠীকে সহায়তা ও বাজারদর স্থিতিশীল রাখার স্বার্থেই খাদ্যশস্য আমদানি বাড়িয়েছে সরকার। ভোক্তা ও কৃষকের স্বার্থ রক্ষা করেই বাংলাদেশের আমদানি নীতি পরিচালিত হয়। দেশে চাল উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি আমদানি বেড়ে যাওয়ার কারণেই ধারণক্ষমতা নিয়ে এমন জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ধারণক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি খাদ্যশস্য বিতরণ কার্যক্রম আরো বেগবান করা জরুরি। তাহলেই আমন মৌসুমের ধান-চাল সংগ্রহ করে সেগুলো সংরক্ষণ নিয়ে আর কোনো সংশয় থাকবে না। এদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, খাদ্যশস্যের মজুদ বাড়ানোর বিষয়ে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দেশে নতুন নির্মাণ করা সব সাইলো আন্তর্জাতিক মানের হবে। বর্তমানে দেশে যে এলএসডি বা সিএসডিগুলো আছে, সেগুলো ফ্ল্যাট গোডাউন। তাতে বস্তাবন্দি করে শস্য রাখা হয়। কিন্তু আধুনিক খাদ্য সংরক্ষণাগারে তা করা হবে না। সেখানে মানসম্পন্নভাবে দীর্ঘদিন খাদ্য সংরক্ষণ করা যাবে। একটি সাইলোয় আড়াই-তিন বছর পর্যন্ত খাদ্যশস্যের সম্পূর্ণ মান বজায় রেখে সংরক্ষণ করা যাবে। দেশের আরো কয়েকটি অঞ্চলে একই ধরনের সাইলো নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে। ফলে কয়েক বছরের মধ্যেই বাড়বে দেশের খাদ্য মজুদের সক্ষমতা। অন্যদিকে এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানান, সরকার বাংলাদেশে খাদ্যপণ্যে শুল্ক, সার ও আমদানিতে বিভিন্ন ধরনের ছাড় দেয়। ফলে আমদানি পরিস্থিতি এখন বেশ সহজ। ওসব ছাড়ের সুযোগে সরকারি ও বেসরকারি সব পর্যায়েই আমদানি আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই আমদানি করা চাল ও গমের মজুদ বেড়েছে। সেক্ষেত্রে আমদানি চালু রেখে দেশে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তার মাধ্যমে দরিদ্র ও নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে চাল পৌঁছে দেয়ার মাধ্যমে গুদাম খালি করা যেতে পারে। পাশাপাশি কৃষকদের কাছ থেকেও যথাযথ দামে শস্য সংগ্রহ করা জুরি। তাহলেই মজুদ নিয়ে যে শঙ্কার কথা ভাবা হচ্ছে ওই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না।