এফএনএস : সরকারি বিভিন্ন দপ্তর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়ছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে এডিপি সবচেয়ে কম বাস্তবায়িত হয়েছে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই—নভেম্বরে। ওই সময়ে এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে মাত্র ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এডিপি বাস্তবায়ন হারের পাশাপাশি টাকার অঙ্কেও জুলাই—নভেম্বরে পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম খরচ হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চলতি ২০২৪—২৫ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাস জুলাই—নভেম্বরে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা কম খরচ হয়েছে। এ বছর খরচ হয়েছে ৩৪ হাজার ২১৪ কোটি টাকা, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৪৬ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। গত পাঁচ মাসে অভ্যন্তরীণ উৎসের ১৯ হাজার ৪১১ কোটি টাকা, বিদেশি ঋণের ১১ হাজার ৪০৭ কোটি টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিলের ৩ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। যদিও ২০২০—২১ থেকে ২০২২—২৩ অর্থবছর পর্যন্ত প্রথম পাঁচ মাসে খরচের পরিমাণ ছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা থেকে ৪৭ হাজার কোটি টাকার মধ্যে। চলতি অর্থবছরে মোট ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৯ কোটি টাকার এডিপি নেয়া হয়। তাতে ১ হাজার ৩৯২টি প্রকল্প রয়েছে। বাস্তবায়ন কম হওয়ায় প্রতিবছরের মতো এবারও এডিপির আকার কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সূত্র জানায়, সরকারের ২৭টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ চলতি অর্থবছরের জুলাই—নভেম্বরে সব মিলিয়ে ১০ শতাংশের কম অর্থ খরচ করেছে। তার মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বরাদ্দের কোনো টাকা খরচ করতে পারেনি। ওই মন্ত্রণালয়ের আওতায় পাকিস্তান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভুটান, ব্রুনেই ও সৌদি আরবে সাতটি চ্যান্সারি কমপ্লেক্স বানানোর জন্য সাতটি আলাদা প্রকল্প নেয়া হয়। ওসব প্রকল্পে ১৪৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। পররাষ্ট্র ছাড়া অন্য মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো হলো নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, সেতু বিভাগ, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় (থোক বরাদ্দসহ), স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগ, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বিভাগ, শিল্প মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, সুরক্ষা সেবা বিভাগ; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়, প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়, অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগ, তথ্য ও স¤প্রচার মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা বিভাগ এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়। তবে স্থানীয় সরকার বিভাগের প্রকল্পে চলতি অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি এডিপি বাস্তবায়িত হয়েছে। ওই বিভাগের ২৩১টি প্রকল্পে ৩৭ হাজার ৯৭৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। গত জুলাই—নভেম্বরে পাঁচ মাসে ওই বিভাগ ৭ হাজার ৭১১ কোটি টাকা খরচ করতে পেরেছে। তাদের এডিপি বাস্তবায়নের হার ২০ দশমিক ৩১ শতাংশ। এদিকে এডিপি কম বাস্তবায়িত হওয়া প্রসঙ্গে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তন এবং ঠিকাদার ও প্রকল্প পরিচালকদের খুঁজে না পাওয়ার কারণে এবার এডিপির টাকা কম খরচ হচ্ছে। তাছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর প্রকল্প যাচাই—বাছাই করে অর্থ খরচে জোর দিয়েছে। যে কারণে এডিপি বাস্তবায়নে কিছুটা ধীরগতিতে হচ্ছে। তবে সামনের দিনগুলোতে এডিপি বাস্তবায়নের হার বাড়বে।