শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:০৭ অপরাহ্ন

সর্ষ্যরে মধ্যে ভূত : ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হবে এনআইডির ইউজার পাসওয়ার্ড

দৃষ্টিপাত ডেস্ক :
  • আপডেট সময় মঙ্গলবার, ৫ মার্চ, ২০২৪

জি এম শাহনেওয়াজ ঢাকা থেকে ॥ সর্ষ্যরে মধ্যে থাকা ভূত তাড়াতে ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হবে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) জন্য ব্যবহ্নত ইউজার পাসওয়ার্ডটি। তিন স্তরে বদল হবে পাসওয়ার্ডটি। প্রথমটি যেটি হবে অবশ্যই হ্যাকারদের বিভ্রান্ত করতে সক্ষম এমন শক্তিশালী পাসওয়ার্ড দেয়া। পরের পাসওয়ার্ডটি প্রথম লগিংয়ে বাধ্যতামূলক বদলে ফেলা এবং প্রতি ৪৫দিনে ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে নতুন আরেকটি পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। এটি শতাধিক সেবা নেওয়া সংস্থাকে অবহিত করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সদ্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আজ থেকে এই নিদের্শনাটি এনআইডি উইংসহ মাঠ পর্যায়ের সকল কর্মকর্তার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। মূলত: এই পাসওয়ার্ড কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারী কর্মকর্তা সাধারণ মানুষের জাতীয় পরিচয়পত্রে থাকা ভুল সংশোধন করে থাকেন। পাশাপাশি নামকর্তন ও নতুন ভোটার অন্তভুর্ক্তির কাজটি-ও করা হয়ে থাকে এ প্রক্রিয়াতে। ফলে ইউজার পাসওয়ার্ডটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বলে মনে করছে কমিশন। অভিযোগ রয়েছে, এনআইডি সংশোধনের মতো স্পর্শকাতর কাজটি সারাজীবন একই পাসওয়ার্ডে চলে এসেছে। ফলে মূল ইউজারের অনুপস্থিতিতে অনৈতিকভাবে সংশোধনযোগ্য নয় এমন আইডি সংশোধন করে হাতিয়ে নিয়েছে লাখ লাখ টাকা। এর ফলে নানা বিপত্তি ও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে ইসিসহ মাঠ পর্যায়ে। প্রকৃত অপরাধী সনাক্ত না হওয়ার কারণে লঘু অপরাধে গুরুদন্ড ভোগ করতে হয়েছে ইসির অনেক কর্মকর্তাকে। অনিয়মের লাগাম টানতে কঠোর ওই অনুশাসনের পথ বেছে নিয়েছে কমিশন। কারণ কার্ড ম্যানেজমেন্ট সিষ্টেম (সিএমএস) পোর্টাল সফটওয়্যার ব্যবহার করছে ইসি; এর আপডেট শুরু হয়েছে ক্ষণে ক্ষণে পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের মাধ্যমে। জানতে চাইলে ইসির সিস্টেম ম্যানেজার মো. রফিকুল হক ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, এটা একটা ইউনিক কাজ। পাসওয়ার্ড পরিবর্তনের মাধ্যমে হ্যাকারদের বিভ্রান্ত করা সম্ভব হবে। কর্মকর্তাদের এটা অনুসরণের নিদের্শনা দেয়া হয়েছে। জানতে চাওয়া হয়েছি, হঠাৎ করে কেনো এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অফিসাররা যে ইউজার পাসওয়ার্ডটি ব্যবহার করেন এটি গোপনীয় এবং স্পর্শকাতর। সব সময় সর্তকতার সঙ্গে গোপনীয় এই পাসওয়ার্ডটি সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। ভূলবশত, কোন একজন অফিসার অফিসের জরুরি প্রয়োজনে পাসওয়ার্ডটি লগআউট করতে পারেননি। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ওই অফিসের অসাধু ব্যক্তিরা সংশোধনযোগ্য নয় এমন আইডি সংশোধন করে ফেলেন এর দায় কেউ নিতে রাজি হয় না। অতীতে এমন ঘটনা ভুরি ভুরি ঘটেছে। তবে এ ধরণের উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে হয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, এনআইডি সংশোধন করতে বর্তমানে সিএমএস ব্যবহার করছে ইসি। এতে প্রতিটি কর্মকর্তার নামে ইউজার আইডি এবং পাসওয়ার্ডের ব্যবস্থা করা রয়েছে। ফলে কোনো এনআইডি সংক্রান্ত কে কী কাজ করছেন, তা সংরক্ষিত থাকছে। মূলত, দুর্নীতিরোধে এই সিস্টেমটি ওয়াচডগের কাজ করে। কিন্তু এই ব্যবস্থাকেও ফাঁকি দিয়ে কে বা কারা শাহীন নামে এক ব্যক্তির ১২ বছর বয়স সংশোধন করেছিল। অথচ কারো ইউজার আইডিতে ঢুকতে গেলে ওয়ান টাইম পাসওয়ার্ডের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার ফোনে কোনো ওটিপিও যায়নি। ভৌতিক এই ঘঠনাটি ঘটেছিল টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনের ইউজার আইডিতে । জানা গেছে, মির্জাপুরের গোড়াই ইউনিয়নের কদিম দেওহাটা গ্রামের মো. শাহীন হোসেন সারিং (এনআইডি নম্বর ১৯৭৬৯৩১৬৬৫৫৯৫৭৩৭৩) নামে এক ব্যক্তির বয়স ১২ বছর সংশোধন করা হয়েছে অনৈতিকভাবে। বিষয়টি নজরে আসার পর অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ মোশারফ হোসেন ব্যাখ্যা চান আব্দুল বাতেনের কাছে। জবাবে তিনি জানিয়েছিলেন, মো. শাহীন হোসেনের সংশোধনের আবেদনটি বাতিলের জন্য আবেদন করেন। গত বছরে ঘটা এই আবেদনটি ‘গ’ ক্যাটাগরিতে ছিল। কিন্তু ওই পহেলা মার্চ ১৭ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ২২ সেকেন্ড সময়ে উপজেলা নির্বাচন অফিসারের ইউজার আইডি ব্যবহার করে আবেদনের ক্যাটাগরি ‘গ’ থেকে ক্যাটাগরি ‘ক’-তে পরিবর্তন করা হয় এবং একই ইউজার আইডি ব্যবহার করে একই সময়ে অর্থাৎ বেলা ১৭ ঘণ্টা ৪৯ মিনিট ২২ সেকেন্ড সময়ে সংশোধন অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। আমি এ সংশোধনের বিষয়ে অবগত নই। এছাড়া একই সময়ে ক্যাটাগরি পরিবর্তন ও সংশোধন অনুমোদন করা হয়েছে। কাজেই বিষয়টিতে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। শুধু টাংগাইল না কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ভোটার করা হয়েছিল একই পন্থা অবলম্বন করে। এতে এনআইডির কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারির চাকুরিচ্যুত হয়। এছাড়া কুষ্টিয়া জেলা অফিসে একই ধরণের ঘটনায় দেশজুড়ে শোরগোল পড়েছিল। নানা হিসাব-নিকাশ কষে কমিশন ইউজার পাসওয়ার্ড ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত যুগান্তকারী।

নিউজটি শেয়ার করুন

এ জাতীয় আরো খবর
© All rights reserved © 2013-2022 dainikdristipat.com
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com