এফএনএস: সা¤প্রতিক শ্রমিক আন্দোলন, ছাত্র আন্দোলন ও চট্টগ্রামে আইনজীবী নিহতের ঘটনায় তৃতীয়পক্ষ কিংবা চিহ্নিত অপরাধীদের ইন্ধন রয়েছে বলে মনে করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গতকাল বৃহস্পতিবার ইন এইড টু সিভিল পাওয়ারের আওতায় মোতায়েন করা সেনাবাহিনীর কার্যক্রম সম্পর্কিত প্রেস ব্রিফিংয়ে সেনা সদরের কর্নেল—স্টাফ কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এসব ক্ষেত্রে ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার চেষ্টা চলছে। কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেছেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। ইন্ধনদাতারা সংখ্যায় অনেক কম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা পোস্ট করেন তাদের অনেকেই ইন্ধনদাতা নন। না বুঝেই অনেকে পোস্ট করে থাকেন। যে কারণে ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। কারা উদ্দেশ্যমূলকভাবে এসব কাজ করছেন। তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে এবং হবে। চট্টগ্রামের আদালতে শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনীর প্রস্তুতি ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেখানে সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি ছিল। সে কারণে একটা দুর্ঘটনা ঘটেছে। আরও অনেক বড় ঘটনা ঘটতে পারতো। আরও খারাপ হতে পারতো। সেখানে আদালত প্রাঙ্গণ ও রাস্তায় বিক্ষোভকারীদের সংখ্যা কেমন ছিল আপনারা সবাই জানেন। কিন্তু আমাদের সক্রিয়তার কারণে অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সময় মতো পদক্ষেপের কারণে পুরো ঘটনাটি অনেকটা কন্ট্রোল করা গেছে। ছাত্র ও শ্রমিকদের আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে জানতে চাইলে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, এসব আন্দোলনে তিন ধরণের বিষয় চিহ্নিত করা গেছে। একটা হচ্ছে যারা চিহ্নিত অপরাধী, যাদের কাজই অপরাধ করা, তারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কাজ করছে। আরেকটা বড় গ্রুপ আছে যারা দেশের সাধারণ জনগণ। যেমনÍ গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলন। ট্রাফিক আইন ভঙ্গকারীদের মধ্যেও সাধারণ জনগণ থাকেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকাটা থাকবে ছাত্র ও শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে, যারা অপরাধ করে, ইন্ধনদাতা তাদের ক্ষেত্রে। সাধারণ জনগণের বিপক্ষে যখন আমাদের দাঁড়াতে হয়, তখন আমাদের অনেক কিছু চিন্তা করে কাজ করতে হয়। তিনি বলেন, ছাত্ররাই কিন্তু আন্দোলনের মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতিটা এনেছে। সেজন্য আমরা সবাই আশা করছি যে, দেশটা একটা ভালোর দিকে যাবে। ছাত্রদেরই একটা অংশ এখন অন্য কারও ইন্ধনে পরিস্থিতি না বুঝে আন্দোলনে নামছে। তখন আমরা তাদের প্রতি চিন্তা করে কাজ করতে হয়। আমরা আশা করি, ছাত্ররা, শ্রমজীবী, কর্মজীবী ও সাধারণ মানুষ যারা আছেন প্রত্যেকেই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশটাকে কোথায় দেখতে চাই ভাবা দরকার। সেখানে আমার নিজের কী দায়িত্ব, সেটা নিজেরা বুঝবেন। ইন্ধন জাতীয় কিছু হচ্ছে কিনা সেটা তারা যাচাই করবে যে, এমন কিছু হয়েছে কিনা। ঘটনা সত্য হলেও এতো ভায়োলেন্সলি করার প্রয়োজন নাই। অনেক আন্দোলনই শান্তিপূর্ণভাবে করা যায়। কারণ আমরা সবাই শান্তি চাই। আমরা যদি সবাই দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করি তাহলে এমন অনেক ঘটনা আমরা পরিহার করতে পারি। ইন্টেলিজেন্সের ঘাটতি আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, ঘাটতি আছে এটা আমি বলবো না। আমরা সবার সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজ করছি। সা¤প্রতিক ঘটনাগুলো সম্পর্কে আগে থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জানে না, এমনটি নয়। কিন্তু কোনও কোনও ক্ষেত্রে আমাদেরর চিন্তা করে কাজ করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনেকের মনে হতে পারে যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। আমরা তো শুধু সামনেরটা দেখি। যত ধরণের ইন্টেলিজেন্স পাওয়া যায় সেগুলো আমরা আগে থেকে কাজ শুরু করি। যে কারণে অনেক ঘটনা প্রতিহত করা সম্ভব হয়েছে। তারপরও যেগুলো ঘটছে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে আমরা চেষ্টা করছি। হয়তো আমরা সম্পূর্ণরূপে প্রতিহত করতে পারিনি, তবে ঘটনাগুলো যাতে বাড়তে না পারে এবং নিয়ন্ত্রণে নেওয়া যায়, সেই ব্যাপারে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার কাজে যারা নিয়োজিত আছেন তারা অপরাধে জড়িত আছেন এমন তথ্য ঠিক নয়। কিছু অভিযোগ পাওয়া গেছে। সেগুলো অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্যদের বিষয়ে। সবগুলো অভিযোগেরই তদন্ত হচ্ছে। এসব অভিযোগে এক বছর থেকে সর্বোচ্চ চার বছরের জেল এবং অন্যান্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ইতোমধ্যে নেওয়া হয়েছে।