এফএনএস : উইকেটের কোথাও ঘাস আছে, কোথাও নেই। শুরু থেকেই দেখা মিলল অসমান গতি ও বাউন্স। সঙ্গে আর্দ্রতার উপস্থিতিতে বাংলাদেশের কাজটা হলো আরও চ্যালেঞ্জিং। এই পরিস্থিতিতে দরকার ছিল চোয়ালবদ্ধ প্রতিজ্ঞা নিয়ে ব্যাটিং। নিজের মতো করে চেষ্টা করলেন সাকিব আল হাসান। আর কেউ পারলেন না তেমন লড়াই করতেও। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস টিকল না দুই সেশনও। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে অ্যান্টিগা টেস্টের প্রথম দিন লাঞ্চের খানিক পর ১০৩ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। চার বছর আগে অ্যান্টিগার এই মাঠেই প্রথম সেশনে ৪৩ রানে অলআউট হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম টেস্টের আগে ঘুরে ফিরে আসছিল সেই প্রসঙ্গ। সেখান থেকে খুব একটা উন্নতির ছাপ রাখতে পারল না সফরকারীরা। ছয় ব্যাটসম্যান আউট হন শূন্য রানে। সংখ্যাটা হতে পারতো সাত, যদি ইবাদত হোসেনের ক্যাচ ধরতে পারতেন এনক্রুমা বনার। তারপরও টানা দুই ম্যাচে ইনিংসে সর্বোচ্চ শূন্য রানের রেকর্ড ঠিকই স্পর্শ করল বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আগের টেস্টেই প্রথম ইনিংসে তাদের ছয় ব্যাটসম্যান ফিরেছিলেন রানের খাতা খোলার আগেই। বাংলাদেশের তেতো এই অভিজ্ঞতা হলো তৃতীয়বার, এর দুটিই ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে। শূন্য রানে ছয় ব্যাটসম্যানের আউট আর কোনো দেশের নেই একাধিকবার। স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামের উইকেট এবার একটু ভিন্ন ধরনের। উইকেটে কোথাও আছে ঘাস, কোথাও নেই। টস জিতে বোলিং নিয়ে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট বলেন, উইকেটে শুরুর আর্দ্রতা তারা কাজে লাগাতে চান। অধিনায়কের চাওয়া পূরণ করতে খুব বেশি সময় নেননি ক্যারিবিয়ান পেসাররা। মাহমুদুল হাসান জয়, নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক- বাংলাদেশের তিন ব্যাটসম্যানই ফেরেন শূন্য রানে। শুরুটা করেন কেমার রোচ। টেস্টের আগের দিন ফিটনেস পরীক্ষায় উতরে এই ম্যাচে খেলতে নামা অভিজ্ঞ পেসার নিজের প্রথম দুই ওভারেই শিকার করেন দুই উইকেট। প্রথমটি ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই। জয়ের খেলা প্রথম বল সেটি। ছেড়ে দেওয়ার মতো বলটিতে ব্যাট বাড়িয়ে স্লিপে ধরা পড়েন জয়। ৭ টেস্টে এই নিয়ে পঞ্চমবার শূন্য রানে আউট হয়ে গেলেন তরুণ ওপেনার। রোচের পরের ওভারের প্রথম বলে উপড়ে যায় শান্তর (৫ বলে ০) স্টাম্প। নেতৃত্ব ছাড়ার পর প্রথম ইনিংসে ব্যর্থ মুমিনুলও (৬ বলে ০)। তিনি স্লিপে ধরা পড়েন জেডেন সিলসের বলে। ব্যর্থতার চক্রে থাকা এই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান টানা ৮ ইনিংসে আউট দলেন দু অঙ্ক ছোঁয়ার আগে। স্কোরবোর্ডে রান তখন পর্যন্ত যা ওঠে, তার সবই তামিম ইকবালের। আত্মবিশ্বাসী শুরু করে কয়েকটি বাউন্ডারি তিনি আদায় করে নেন। ১৯ রানের মাথায় স্পর্শ করেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫ হাজার টেস্ট রান। দলের রানও ছিল তখন ১৯। ১৬ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে কিছুটা এগিয়ে নেন তামিম ও লিটন দাস। এই জুটির সময়ে মনে হচ্ছিল, বিপর্যয় কাটিয়ে উঠতে পারবে বাংলাদেশ। কিন্তু আলগা শটে তামিমের বিদায়ে আবার আসে বিপদ। আলজারি জোসেফের লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে আউট হয়ে যান তামিম (৪৩ বলে ২৯)। এরপর কাইল মেয়ার্স এসে প্রথম ওভারেই নেন দুই উইকেট! শুরু থেকে একটি আউট সুইং, একটি ইনসুইংয়ে লিটনকে সংশয়ে ফেলে দেন মেয়ার্স। সুইং কাভার করতে একটু এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন লিটন (১২)। এক বল পরই অনেকটা সুইং করে ভেতর ঢোকা বল না খেলে ছেড়ে দিয়ে শূন্য রানে বিদায় নেন নুরুল হাসান সোহান। ৬ উইকেটে রান তখন ৪৫, চার বছর আগের স্মৃতি উঁকি দিতে শুরু করে। তবে লাঞ্চের আগে আর উইকেট পড়েনি। আরও বিপদ যদিও হতে পারত। একের পর এক উইকেট হারিয়েই কিনা, সাকিব ব্যাট করতে শুরু করেন অনেকটা টি-টোয়েন্টির ধরনে। প্রায় প্রতি বলে আগ্রাসী শট খেলার চেষ্টা করতে থাকেন। একবার জীবনও পান সিলসের হাতে, যদিও ক্যাচটি ছিল কঠিন। বেঁচে গিয়েও সাকিব খেলতে থাকেন একই ভাবে। প্রথম দুই ওভার মেডেন নেওয়া মেয়ার্সকে ছক্কায় ওড়ান তিনি লং অফ দিয়ে। আরেক পাশে মিরাজ আঁকড়ে রাখেন উইকেট। লাঞ্চের পর টানা দুই ওভারে উইকেট নেন সিলস। প্রথম ওভারে লেগ স্টাম্পের বেশ বাইরের বল তাড়ার চেষ্টায় কিপারের গ্লাভসে ধরা পড়েন মিরাজ। পরের ওভারে কট বিহাইন্ড হয়ে যান মুস্তাফিজুর রহমান। পরের ওভারেও উইকেট পেতে পারতেন সিলস। কিন্তু ইবাদতের ক্যাচ ধরতে পারেননি এনক্রুমা বনার। অন্য প্রান্তে সাকিব চালিয়ে যান আগ্রাসী ব্যাটিং। ৬৪ বলে স্পর্শ করেন পঞ্চাশ। মূলত বাউন্ডারির উপর ভর করেই এগোচ্ছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সীমানায় ফিল্ডার রেখে তার পথ বন্ধ করে দেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক। তাই জোসেফকে ছক্কায় ওড়াতে যান সাকিব। সফল হননি, লং অনে ক্যাচ নেন রোচ। ৬৭ বলে এক ছক্কা ও ছয় চারে ৫১ রান করেন সাকিব। সেই ওভারেই সৈয়দ খালেদ শূন্য রানে বিদায় নিলে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। সিলস ও জোসেফ নেন তিনটি করে উইকেট। দুইটি করে উইকেট নেন রোচ ও মেয়ার্স। সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৩২.৫ ওভারে ১০৩ (তামিম ২৯, জয় ০, শান্ত ০, মুমিনুল ০, লিটন ১২, সাকিব ৫১, সোহান ০, মিরাজ ২, মুস্তাফিজ ০, ইবাদত ৩*, খালেদ ০; রোচ ৮-২-২১-২, সিলস ১০-২-৩৩-৩, জোসেফ ৮.৫-২-৩৩-৩, মেয়ার্স ৫-২-১০-২, মোটি ১-০-১-০)।