এফএনএস: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ আরও শক্তিশালী হয়ে সুস্পষ্ট লঘুচাপের পর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। এতে বায়ুচাপের আধিক্যের প্রভাবে দেশের উপক‚লীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এজন্য সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে উপক‚লীয় এলাকায় জলোচ্ছ¡াস পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে। এছাড়া ১২ অঞ্চলের নদীবন্দরে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। নিম্নচাপের প্রভাবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি বাড়তে পারে বলেও জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। গত ১১ আগস্ট উড়িষ্যা উপক‚লের অদূরবর্তী উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। পরে এটি স্থল নিম্নচাপ হিসেবে বৃষ্টি ঝরিয়ে ভারতীয় এলাকায় নিঃশেষ হয়ে যায়। এজন্য গত কয়েকদিন ধরে সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি রয়েছে। বহাল ছিল জলোচ্ছ¡াসের পূর্বাভাসও। এরইমধ্যে জোয়ারের পানিতে উপক‚লের বিভিন্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানা গেছে। আবহাওয়াবিদ মো. মনোয়ার হোসেন জানান, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি আরও ঘণীভ‚ত হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল ৯টায় সেটি নিম্নচাপ আকারে ভারতের উত্তর উড়িষ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপক‚লের অদূরে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্য বিরাজ করছে। তিনি বলেন, সমুদ্রবন্দরগুলো, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকায় ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। পূর্ণিমা ও বায়ুচাপ পার্থক্যের আধিক্যের প্রভাবে উপক‚লীয় জেলা সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, ল²ীপুর, চাঁদপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে। একই সঙ্গে এসব জেলার অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোর নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ২ থেকে ৪ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ¡াসে প্লাবিত হতে পারে বলেও জানান মনোয়ার হোসেন। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। এদিকে গতকাল রোববার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত দেশের অভ্যন্তরীণ নদীবন্দরগুলোর জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঢাকা, যশোর, কুষ্টিয়া, খুলনা, বরিশাল, পটুয়াখালী, নোয়াখালী, কুমিলা, চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ থেকে ৮০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ২ নম্বর নৌ-হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র দক্ষিণ বা দক্ষিণ-পূর্ব দিক থেকে ঘণ্টায় ৪৫ থেকে ৬০ কিলোমিটার বেগে বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টিসহ অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। এসব এলাকার নদীবন্দরগুলোকে ১ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। অন্যদিকে মৌসুমি বায়ু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অত্যন্ত সক্রিয় এবং দেশের অন্যত্র তা সক্রিয় রয়েছে। মৌসুমি বায়ু উত্তর বঙ্গোপসাগরের প্রবল অবস্থায় রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে অধিদপ্তর জানিয়েছে, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অধিকাংশ জায়গায়, ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছুকিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝোড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। একই সঙ্গে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ সময়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। গত শনিবার সকাল ৬টা থেকে গতকাল রোববার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সবচেয়ে বেশি ৪৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে টেকনাফে। এ সময় ঢাকায় ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত শনিবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায়। গতকাল রোববার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল টেকনাফে, ২৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।