দৃষ্টিপাত রিপোর্ট \ সাতক্ষীরার ইছামতি আর কালিন্দী নদীর বিরামহীন ভাঙ্গনে দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছে ভূ—খন্ড, পরিবর্তন, পরিবর্ধন আর সংকুচিত হচ্ছে বাংলাদেশের মানচিত্র। এক সময়ের ইতিহাস ঐতিহ্য আর সমৃদ্ধির প্রতিমুখ সোনালী অতীতের মুখছায়া ইছামতি এবং কালিন্দী ছিল ব্যবসা নির্ভর নৌপথ, নদী দু’টির কল্যাণে অর্থনীতিতেও বইছিল সুবাতাস। কিন্তু প্রতিবেশী দেশের নদী শাসন, নদী ভাংগন রোধে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা অন্যদিকে ইছামতি আর কালিন্দী নদী ভাংগনরোধে কালক্ষেপন, অদুরদর্শিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি সর্বপরি কোন কোন অংশে ভাংগন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিবেশীর বাঁধা প্রদান, নতজানু পররাষ্ট্রনীতি বিগত দিন গুলোতে অব্যাহত ভাবে ভেঙ্গেছে ইছামতি, কালিন্দী নদীর ভেঁড়িবাঁধ। ফসলি জমি, জনপথ স্থাপনা, সরকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইছামতি করাল গ্রাসে নিষ্পেষিত হয়েছে। বাংলাদেশ ভারত বিভক্তকরণ ইছামতি ও কালিন্দী বর্তমান সময়ে হাজারো সীমান্তপারের গ্রামবাসির উদ্বেগ আতঙ্ক আর হুমকির কারণে পরিণত হয়েছে। সাতক্ষীরার সদর উপজেলার হাড়দাহ, দেবহাটার কোমরপুর, ভাতশালা, টাউনশ্রীপুর, চরশ্রীপুর, সুশিলগাতি, উপজেলা সদর বসন্তপুর, নাংলা কালিগঞ্জের খানজিয়া, প্রতিনিয়ত ভাংগনের কবলে, উপজেলা সদরে সদ্য নির্মিত বহুতল থানা ভবন হুমকির মুখে, ইছামতির ভাংগন থানা ভবন হতে মাত্র কয়েক মিটার দুরবর্তী এলাকায় অবস্থান করছে। যে কোন সময়ে থানা ভবন ভাংগনের কবলে পড়ার আশঙ্কা করছেন সীমান্তপারের নদী ভাংগনে অভিজ্ঞ ও ভুক্তভোগী জনগোষ্ঠী। কোমরপুরের সরকারি খাদ্য গুদাম, জাহাজঘাট ইছামতি ভক্ষন করেছে। ঐতিহাসিক পীরের মাজার ভাংগন ছুই ছুই করছে। সর্বাপেক্ষা বেদনার বিষয় দেবহাটার রাজনগর নামক মৌজা বর্তমানে অস্তিত্বহীন। শত শত বিঘা জমি সমৃদ্ধ রাজনগর মৌজা ইছামতির করালগ্রাসে হারিয়ে গেছে। বৃটিশ শাসনামলে এবং পাকিস্তান শাসনামলে রাজনগরের অস্তিত্ব সরকারি রেকর্ডপত্রে দৃশ্যমান। সীমান্ত এলাকার বয়োবৃদ্ধরা জানান রাজনগর মৌজা নদীর বিপরীত অংশে জেগে উঠেছে। দেশের ভূ—খন্ড হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ইতিহাসের বেদনাদায়ক ঘটনা প্রবাহের সাথে তুলনা করছেন সীমান্তপারের জনসমাজ, কালিন্দী নদীর বাংলাদেশ অংশ ভেঙ্গেই চলেছে। ইতিহাস খ্যাত এই নদীর গতিপথ বিপরীত দিক দিয়ে বন্ধ করে ইছামতির ভাংগন ত্বরান্বীত করেছে বলে অনেকের আশঙ্কা। বর্তমান নোবেল বিজয়ী আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্ব ড. মুহম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন সরকার ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক বিশ্বে আলোকিত সরকার হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। নতজানু পররাষ্ট্রনীতিকে নির্বাসনে পাঠিয়ে স্বাধীনচেতা, দেশপ্রেমী সকলের সাথে বন্ধুত্ব কারোর সাথে শত্রুতা নয় সংবিধানের সেই অমোঘ বাণীকে সঙ্গী করে বহি:বিশ্বে বিশেষ ভাবমূর্তি সৃষ্টি করেছে আর তাই এখনই সময় সীমান্ত নদীর ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক নীতির প্রতিফলন ঘটিয়ে ভাংগনরোধে স্থায়ী সমাধানের ক্ষেত্র নিশ্চিতকরণ। প্রতিবেশী দেশ যেমন কনক্রীটের এবং অপরাপর উপাদানের মাধ্যমে ভাংগন রোধ করে বাংলাদেশকে ভাংগনের মুখে ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশকে ভাংগনরোধে স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন মেগা প্রকল্প গ্রহণ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণে নয়, সেনাবাহিনীর মাধ্যমেই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অনিয়ম ও দুর্নীতি মুক্ত ভাংগন রোধ ব্যবস্থা সম্ভব এমনটি মনে করেন ভূক্তভোগী ভাংগন কবলিত সীমান্তপারের জনসাধারণ। প্রতিবছর ও ভাংগন রোধে কাজ হয় কিন্তু তা হরিলুট আর লুটপাটেরই চিত্র প্রকাশ পায়। বর্তমান সময়ে কোমরপুর রক্ষা বাঁধ সহ তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ব্লক তৈরীর কাজেও চরম অনিয়ম পরিলক্ষিত হচ্ছে বলে কোমরপুরের একাধিক লোকজন জানিয়েছেন, ব্লক তৈরীতে অনিয়ম হওয়ার অন্যতম কারণ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়কদের অনুপস্থিতি এবং যোগসাজস চলমান।