মাছুদুর জামান সুমন \ সাতক্ষীরার ইতিহাস ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত আর মিলে মিশে একাকার গুড়পুকুর মেলা। ভাদ্র মাসের শেষে আর আশ্বিনের শুরুতে ইতিহাস খ্যাত গুড় পুকুর মেলার আয়োজন সাতক্ষীরাকে বিশেষ ভাবে পরিচিতি করেছে। শহরের পলাশপোলস্থ গুড় পুকুর জনশ্র“তি আছে গুড়ের মত মিষ্টি পানির পুকুর। প্রাকৃতিক যুগ জামানায় গুড়পুকুরের ইতিবৃত্ত এমনই শোনা যায়। ভাদ্র মাসের শেষে এবং আশ্বিন মাসের শুরুতে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মা মনসা পূজা করেন। ইতিমধ্যে সর্পের দেবী মা মনসা পূজা উদযাপিত হয়েছে। সময়ের ব্যবধানে কালের বিবর্তনে মা মনসা পূজা, গুড়পুকুর মেলা এবং সাতক্ষীরার ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, কৃষ্টি জনসমাজ, একে অপরের সাথে ঘনিষ্টভাবে মিলে মিশে একাকার হয়েছে। শত বছরের ঐতিহ্য আবার অনেকে বলেন দুই শত বা তারও দীর্ঘ সময়ের ইতিহাস মা মনসা পূজা এবং গুড় পুকুরে মেলা। শত বছরের ইতিহাস যুগ যুগান্তরের বিবর্তনে গুড়পুকুর মেলা দৃশ্যতঃ সাতক্ষীরার সার্বজনীন উৎসব আর গণমানুষের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। মানুষ মানুষের জন্য দূর হতে কাছে দূরদুরান্ত হতে দীর্ঘ দিন যাবৎ বছরের পর বছর ব্যবসায়ী দর্শনার্থী, ভ্রমন পিপাসুরা আশ্বিন মাসের শুরুতে গুড় পুকুর মেলা দেখতে সাতক্ষীরায় আসতে ভোলে না। গুড় পুকুর মেলাকে কেন্দ্র করে সাতক্ষীরা শহর নানান ধরনের পরসায় ভরে ওঠে। বছরের পর বছর লোকে লোকারন্য গুড়পুকুর মেলা দৃশ্যতঃ জাতীয়ভাবে আলোচিত হতে থাকে। শহরের তিন চার/কিলোমিটার সড়ক, সংযোগ সড়ক নানান ধরনের পণ্য লোক আর লোক। বাস্তবতা হলো গুড়পুকুর মেলার সেই জৌলুস, ঐতিহ্য আর প্রানের স্পন্দন আর নেই। স¤প্রীতির সাতক্ষীরায়, ঐতিহ্যের গুড়পুকুর মেলার সার্কাস সহ অপরাপর অনুষ্ঠান মালায় বর্বরোচিত হামলা হলে চিরচেনা শান্ত সাতক্ষীরায় মলিনতায় ভর করে। শোক, ক্ষোভ, দ্রোহের আগুন ঝরে সাতক্ষীরার শান্তিপ্রিয় মানুষের। সব শ্রেনীর মানুষ গুড় পুকুরের মেলায় বোমা হামলায় হতবাগ হয়। প্রতিবন্ধকতাকে ছিন্ন করে আশায় বুক বেঁধে সাতক্ষীরার বিশলক্ষাধীক মানুষের ইচ্ছা, আবেগ, অনুভূতির প্রতি একাত্বতা প্রকাশে ছোট পরিসরে অথচ উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতি বছর দেখা মেলে গুড়পুকুর মেলার। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির আলোকিত আয়োজনে উদ্বোধন করবেন। শহরের রাজ্জাক পার্ক কেন্দ্রীক এই মেলার সীমাবদ্ধতা থাকলেও উৎসব আর উচ্ছ¡াসের সামান্যতম ঘাটতি নেই। ইতিমধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকা হতে ব্যবসায়ীরা হরেক রকমের পণ্য নিয়ে এসেছে সাতক্ষীরা। গতকালও চলছিল শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি নানান ধরনের বাহারী ফার্ণিচার, রাজকীয় খাট, পালঙ্ক, গাছ গাছালী, কুটির শিল্প, ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী, কড়ি, কাসা, গোশালা, কামারী সামগ্রী, হরেক রকম মিষ্টান্ন, খেলনা সামগ্রী, সৌখিনতা সামগ্রী সবই এসেছে মেলায়। নানান ধরনের ফাস্টফুড, তৈল চিত্র শহীদ রাজ্জাক পার্কের বিভিন্ন অংশে শোভা পাচ্ছে। গত কয়েকদিন যাবৎ ডেকোরেশন অস্থায়ী দোকান নির্মান, পরসা সাজানো গোছানো ছিল চোখে পড়ার মত। শহরে যানজট নিরসনে, শহীদ রাজ্জাক পার্ক এলাকা যানজট মুক্ত রাখতে ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ প্রস্তুতি লক্ষনীয়। ইতিমধ্যে সাতক্ষীরায় আত্মীয় স্বজনদের বাড়ীতে ভিন্ন জেলার লোকজন উপস্থিত হয়েছে গুড়পুকুর মেলা দেখতে। সাতক্ষীরার শহীদ আঃ রাজ্জাক পার্ক কেন্দ্রীক গুড়পুকুর মেলার আয়োজন থাকলেও সারা শহরময় এই মেলার উপস্থিতি, জয়ধ্বনি এবং আনন্দস্রোত। দিকে দিকে আলোক আভার বিচ্ছুরন। সাতক্ষীরার ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের সাথে একাত্বতা ঘোষনা কারী, সংস্কৃতির অংশে পরিনত হওয়া গুড়পুকুর মেলা বেঁঁচে থাকুক জেলার বিশলক্ষাধীক মানুষের ইচ্ছার সাথে একাত্বতায় এই মেলা স্বার্থক হোক এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।